মো. জিয়াউর রহমান
প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৫ ১৩:১৮ পিএম
নেত্রকোণার বিভিন্ন উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। তবে জেলার মদন, মোহনগঞ্জ ও কেন্দুয়া উপজেলাসহ ১০টি উপজেলাতেই দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার। কৃষকরা নিজেদের উদ্যোগে এসব কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। বিশেষ করে কৃষাণীরা অল্প পরিশ্রম ও পুঁজিতে কেঁচো সার উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন। এ জাতীয় সার উৎপাদনে কৃষক-কৃষাণীদের মধ্যে আগ্রহ বেড়েই চলছে। স্থানীয় উপজেলা কৃষি অফিসও কেঁচো সার উৎপাদনে কৃষক-কৃষাণীদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, জৈব পদার্থ মাটির প্রাণ বা হৃৎপিণ্ড। মাটির স্বাস্থ্য সুস্থ ও সবল রাখার জন্য জৈব পদার্থের প্রয়োজন। ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি, অতিমাত্রায় রাসায়নিক সারের ব্যবহার, অবিবেচকের মতো বালাইনাশক প্রয়োগ, মাত্রা অতিরিক্ত আগাছা নাশক ও বিভিন্ন কৃত্রিম হরমোন ব্যবহারের ফলে প্রতিনিয়তই মাটির স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে এবং জৈব পদার্থের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। মাটির ভারসাম্য রক্ষায় এবং জমিতে ভালো ফলন উৎপাদনের জন্য জৈব সারের কোনো বিকল্প নেই।
জেলার কেন্দুয়া উপজেলার দলপা ইউনিয়নের বেখৈরহাটি ব্লকের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে বাণিজ্যিকভাবে কেঁচো সার উৎপাদনের চিত্র দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেখৈরহাটি ব্লকের জরিনা আক্তারসহ ৩ জন কৃষক-কৃষাণী ২০১৭ সালে জানুয়ারি মাসে তাদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) উৎপাদন শুরু করেন। বর্তমানে এই ব্লকের ৬টি গ্রামে শতাধিক কৃষাণ-কৃষাণী কেঁচো সার উৎপাদন করে নিজেরা জমিতে ব্যবহার করছেন এবং অতিরিক্ত সার বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন। এখানে বাণিজ্যিকভাবে এ সার উৎপাদন করছেন ৩০-৪০ জন।
বেখৈরহাটি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাকিল মাহমুদ খান জানান, কৃষকরা নিজেদের উদ্যোগে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন করে একদিকে যেমন নিজেদের জমিতে প্রয়োগ করছেন, অপরদিকে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছেন। তাদেরকে কেঁচো সার উৎপাদনে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি আমরা। তবে আমার ব্লকে বর্তমানে অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে এ সার উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, অসুস্থ মানুষ যেমন ঠিকমতো কাজ করতে পারেন না, তেমনি অসুস্থ মাটিতেও সঠিকভাবে ফলন উৎপাদন অসম্ভব হয়ে ওঠে। মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জৈব সারের কোনো বিকল্প নেই। এই জৈব সারের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে কেঁচো কম্পোস্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই সার প্রয়োগের ফলে মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখে, মাটির উর্বরতা ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে।
এ ছাড়া সাধারণ কম্পোস্টের চেয়ে কেঁচোর মলে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ বেশি থাকে। এই ক্ষুদ্র প্রয়াস মাঠ পর্যায়ের কৃষক তথা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও মাটির উর্বরতার শক্তি বৃদ্ধিতে কেঁচো সার সহায়ক হয়ে স্বার্থক ভূমিকা পালন করে বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।
বাণিজ্যিকভাবে কেঁচো সার উৎপাদনকারী কৃষাণী বেখৈরহাটি গ্রামের জরিনা আক্তার বলেন, বর্তমানে আমি প্রতিমাসেই ২০-৩০ মণ কেঁচো সার বিক্রি করি। প্রতি মণ সার ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করছি। এ সারের চাহিদা অনেক। কেঁচো সার উৎপাদনে তেমন কোনো খরচও নাই। তাই বাড়িতে বসেই এ সার উৎপাদন করে আমি বেশ লাভবান।
কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ূন দিলদার জানান, আমার উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের সবখানেই ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদনে কৃষাণ-কৃষাণীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তারা নিজেরাই কেঁচো সার উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।