× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শান্তিনিকেতনের ছায়ায়

জারাদ ত্রিস্তান

প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৫ ১৩:৩৮ পিএম

সুন্দর ছবিটি এঁকেছে মিথিলা ভৌমিক। সে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী

সুন্দর ছবিটি এঁকেছে মিথিলা ভৌমিক। সে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী

অনেক সুন্দর ভোর! শাখে শাখে পাখির কূজন। চারদিকে বইছে মৃদুমন্দ ঠান্ডা বাতাস। এত সুন্দর ভোরে কি আর ঘুমিয়ে থাকা যায়। ঘুম থেকে উঠে চটপট রেডি হলাম। কটেজ থেকে বের হতে যাব, দেখি একটি দশাসই চেহারার পেটমোটা বিড়াল দরজার সামনে আয়েশি ভঙ্গিতে শুয়ে আছে। সরার নামটি নেই। কোনোমেতে তাকে উঠিয়ে বের হলাম। তারপর জলখাবার ও চা খেয়ে আবার ‍দুর্গা আঙ্কেলের টোটেতে চড়লাম। এবার গন্তব্য ‘বিশ্বভারতী জাদুঘর’। পথে যেতে যেতে দুর্গা আঙ্কেল একটি বিশাল গাছ দেখিয়ে বললেন, স্থানটির নাম ছাতিমতলা।

আরও জানালেন লোকমুখে শোনা যায়, এই জায়গায় ঘন জঙ্গল ছিল। একদা এখানকার জমিদারের দাওয়াতে এসে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর পথিমধ্যে বিশ্রাম নিতে থামতেন এ ছাতিম গাছের নিচে। আর তখন এ জায়গাটি তার বড্ড পছন্দ হয়ে যায়। এবং তিনি এক টাকা মূল্যে শান্তিনিকেতন কিনে নেন জমিদারের কাছ থেকে। তবে এই কাহিনীটি নিয়ে বিভিন্ন মত আছে।

টিকিট কেটে জাদুঘরের ভিতরে প্রবেশ করতে হয়। জাদুঘরটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। কবিগুরুর কত স্মৃতি সেখানেই। এখানে না এলে জানতামই নাÑ এত দেশ থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উপহার দেওয়া হয়েছে। কত সম্মানিতই তিনি ছিলেন বিশ্ববাসীর কাছে। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে পাওয়া নোবেলটি এখান থেকে চুরি যায়। তবে সেটির একটি রেপ্লিকা দেখতে পেলাম। প্রথমে দোতলা দেখে তারপর নিচতলায় যেতে হয়। নিচতলায় গিয়ে আমি অবাক হলাম। চারদিকে তার লেখা কবিতা দিয়ে ঢাকা। কবিগুরুর লেখা পাণ্ডুলিপি দেখতে পেলাম। দেখতে পেলাম তার অনেক ছবি। এবং জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির মহীয়সী নারীদের সম্পর্কে অনেক কিছু লেখা ছিল সেখানে। এসব দেখে সেখান থেকে বের হয়ে গেলাম। আশপাশে অনেক ভাস্কর্য রয়েছে। কোন ভাস্কর্যটির নাম কী, সেটি কেন করা হয়েছে এবং কে করেছেন সেগুলো সম্পর্কে অনেক তথ্য জানালেন দুর্গা আঙ্কেল। হঠাৎ দেখি একটি খড়ের ছাদওয়ালা বাড়ির মাঝখান থেকে একটি তালগাছ বের হয়েছে। দুর্গা আঙ্কেল জানালেন এ বাড়িটির নাম তালধ্বজ। এটি দেখে তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে কবিতাটি মনে পড়ে গেল। আবার একটি কুয়া দেখিয়ে জানালেনÑ এ জায়গাটির নাম পান্থশালা। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রজাদের সুবিধার্থে এটি খনন করেন। 

আমি যতই দেখতে থাকলাম ততই মুগ্ধ হতে থাকলাম। খেয়াল করলাম বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলোর গেটের নকশা একই রকম। দেখে মন ভরে গেল। জানলাম আগে উন্মুক্তভাবে শান্তিনিকেতনের ক্লাস হতো। এখন আর দেখা যায় না সে কারণে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসগুলো দেখা হলো না। তবে জানতে পারলামÑ একদম খোলা আকাশের নিচেই নাকি তাদের ক্লাস হয়। 

বারোটা পর্যন্ত সেখানে ঘোরাঘুরি করে আমরা গেলাম সৃজন কারুপল্লী। সেখানে ঢুকে অবাক হলাম। চারদিকে কত নান্দনিক নিদর্শন। খুব সুন্দর করে সাজানো। আগের দিনের মূর্তিও দেখতে পেলাম। সেখানে ছিল সুবিশাল একটি দণ্ডায়মান গৌতম বুদ্ধের মূর্তি। আমি সেটির সঙ্গে ছবিও তুললাম। সেখানে দেখলাম বিভিন্ন লোহার জিনিস ও ফেলনা জিনিস দিয়ে একটি মহিষাসুরমর্দিনীর ভাস্কর্যও তৈরি করা হয়েছে। সেখানে বসেছিল একটি নান্দনিক জিনিসিপত্রের হাট। এখান থেকে আমি বিখ্যাত শান্তিনিকেতনি ঝোলা কিনি। হাঁটছি হঠাৎ করে কোথায় থেকে যেন একটি যক্ষের মতো দেখতে ভয়ংকর লোক আমার সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমি তো তার রঙবেরঙের পোশাক আর ভয়ংকর রূপ দেখে ভয়েই শেষ। তারপর জানতে পারলামÑ এটি সেই বিখ্যাত বহুরূপী। কারুপল্লী থেকে বের হওয়ার সময় তার সঙ্গে আমার বেশ কিছুক্ষণ কথা হয়।

হাঁটতে হাঁটতে দেখতে পেলাম দেবী টুসুর ভাস্কর্য ও তার সম্পর্কের কাহিনী জানলাম। দেখলাম রাজকুমারী ভাদুর ভাস্কর্য। একটি ঢেঁকি ও তাঁতের ভাস্কর্য সম্পর্কে লেখা ছিল। কিছু দূর যেতেই নামের সঙ্গে মিলিয়ে একটি পল্লী শুরু হলো। পল্লীর এক একটি ঘর একটি রাজ্য। কোনোটা হচ্ছে বাংলা, কোনোটা বা ঝাড়খণ্ড আবার উড়িষ্যা, মণিপুর। আমি এতসব দেখে বিমোহিত হয়ে পড়লাম। 

এখান থেকে ঘুরে আমরা বেরিয়ে পড়লাম আবার। সূর্যি মামা মাথার ওপর উঠেছেনÑ দুপুরের খাওয়ার সময় হয়েছে। তাই আমরা একটি রেস্টুরেন্টে থেমে খেয়ে নিলাম। সেখানেও ঘটল কী মজার ঘটনা। সেখানে বসতেই ওয়েটার ছুটে এলো এবং জানাতে চাইলেন, আমাদের কি ভেজ লাগব? কিন্তু আমরা অন্য কিছু অর্ডার দিতে চাই শুনে তিনি অবাক হয়ে চলে গেলেন। সাধারণত এখানটায় কেউ বেড়াতে এলে খালি ভেজ খায়। যেটি খেতে সত্যিই সুস্বাদু।

আর কিছুক্ষণ ঘুরেই আমরা আমাদের কটেজে ফিরে গেলাম। তারপর আবার বেরিয়ে পড়লাম। ভারতে এসেছি আর বিখ্যাত মন্দির দেখব নাÑ সে কি কখনও হয়! তাই এবার আমাদের গন্তব্য কংকালীতলা। 

কংকালীতলা পৌঁছতেই চারদিক থেকে ভেসে এলো ধূপের গন্ধ। দুর্গা আঙ্কেল জানালেন, অধিকাংশ জায়গায় দেবী সতীর শরীরের অংশ একটি শিলারূপে রয়েছে। কিন্তু এখানে তো তেমন কোনো শিলাই নেই। কারণ শিলাটি মাটিতে পড়ে একটি কুণ্ডের জন্ম হয় এবং সে কুণ্ডের নিচে শিলাটি ঢাকা পড়ে। তবে কুণ্ডের পানি পরিষ্কার করতে গিয়ে তাদের নাকি একটি খুবই ধারালো পাথর খণ্ডের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। দুর্গা আঙ্কেল দেবীর অনেক বড় ভক্ত। অনেক আগ্রহের সঙ্গে আমাদের এসব গল্প বললেন। আমি ও আমার ছোট বোন জুতা খুলে মন্দিরের গর্ব গৃহে ঢুকলাম। গিয়ে তো অবাক। এখানে কোনো মূর্তি নেই। বের হয়ে এসে দুর্গা আঙ্কেলকে জানাতেই তিনি জানালেন, হ্যাঁ এাখনে কোনো মূর্তি তৈরি করা যায়নি। মূর্তি বানানোর উদ্যোগ নিলেই কোনো নো কোনো বাধার কারণে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। ছবিতে দেবী পূজিত হয়ে আসছিলেন। আরও জানান, এখানে দেবীর কঙ্কালের অংশ বা মতান্তরে কোমরের অংশ পড়ে। 

তারপরে আমরা চলে গেলাম সেখানেই অনুষ্ঠিত গঙ্গ আরতি দেখতে। কী অপূর্ব যে সেই আরতি। পুরোহিতরা মন্ত্রের সঙ্গে নেচে আরতি করছেন। আমার কাছে খুবই সুন্দর লাগল। অনেকেই দেখতে এসেছেন আরতি। 

আমরা আরও কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করেই কটেজে ফিরে এলাম। কটেজে এই রাতের বেলায় অনেক গান বাজে। ভাবতে মন খারাপ হয়ে গেল। কাল সকালেই চলে যেতে হবে। তাই আমরা গিয়ে সকল ভাড়া চুকিয়ে দিলাম। তবে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আমরা কিছুটা ঝামেলায় পড়েছিলাম। 

পঞ্চম শ্রেণি, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা