× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

হ্যান্ডপেইন্ট পোশাকের জগতে উজ্জ্বল এক নাম ‘রংধনু ক্রিয়েশন’

আরফাতুন নাবিলা

প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৫ ১৮:৩৯ পিএম

আপডেট : ০৭ মে ২০২৫ ১৮:৪৪ পিএম

রংধনু ক্রিয়েশন এর তৈরি হ্যান্ডপেইন্ট পোশাক

রংধনু ক্রিয়েশন এর তৈরি হ্যান্ডপেইন্ট পোশাক

বাংলাদেশে অনলাইন জগতে এখন পর্যন্ত যতগুলো হ্যান্ডপেইন্ট পোশাক নিয়ে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি নাম হচ্ছে রংধনু ক্রিয়েশন। এই উদ্যোগটির অধিকারীর নাম শানাজ সুলতানা। ১০ বছর পার করে ১১ তে পা দেয়া রংধনু ক্রিয়েশন জায়গা করে নিয়েছে গ্রাহকদের মনে। রংধনু’র নিজস্ব চিন্তাধারাই হোক অথবা কাস্টমাইজ – সবখানেই সফল তারা। প্রতিদিনের বাংলাদেশের সাথে একান্ত কথোপকথনে শানাজ জানালেন রংধনু ক্রিয়েশন শুরু থেকে নানা গল্প, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সহ নানা তথ্য।   

রংধনু ক্রিয়েশন এর তৈরি পোশাক 

প্রবা - কেন মনে হলো হ্যান্ডপেইন্ট নিয়ে কাজ করা দরকার?  

তখন আমি চাকরি করতাম চট্টগ্রামে একটা প্রাইভেট চাইনিজ কোম্পানীতে। ২০১১ সালে কনসিভ করেছি। কোম্পানি থেকে ওরা বললো তুমি সিক থাকবা যেহেতু জব ছেড়ে দাও। আমরা অন্য কাউকে নেই। ছেড়ে দিলাম। খুব মন খারাপ করে বাসায় আসলাম। সারাদিন বসে থাকি, অফিশিয়াল কাজ নেই। আমি আসলে কাজ ছাড়া বসে থাকতে পারি না। ভাবলাম কিছু করা দরকার। কিছু রং তুলি কিনে আনলাম। কলেজে থাকতে টুকটাক নিজের জামায় আঁকতাম। সেই স্মৃতিকেই নিয়ে এসে বাসায় থাকা কাপড়ে আঁকলাম। নিজের জন্য কুশন কভার আর অনাগত সন্তানের জন্য ছোট ছোট জামা কাপড় বানিয়ে তাতে আঁকলাম। এর পর নিজের আর মেয়ের জন্য আঁকলাম। আঁকি আর ফেইসবুকে শেয়ার করি। বন্ধুরা খুব এপ্রিশিয়েট করে। এরপর আবার গ্যাপ। মেয়ে হলো। আবার চাকরিতে জয়েন করলাম। মন চাইলে একে ওকে এটা সেটা এঁকে দেই। মেয়ে একটু বড় হলো তাকে রাখার মতো কেউ নেই। জবে যাবো কীভাবে? না কোনো ডে কেয়ার, না কোনো সাপোর্ট। আম্মু কলেজের প্রিন্সিপাল, ছোটবোন ডাক্তার। শাশুড়ী প্রাইমারী স্কুলের হেড মিস্ট্রেস। কে আসবে আমার কাছে আমার বাচ্চাটা দেখার জন্য? কাজের লোকও পাওয়া যায় না। অনেক যুদ্ধ বিগ্রহের পর বুঝলাম যে আমার চাকরি করা আর হবে না। ছেড়ে দিলাম। শুরু হলো লম্বা সময় আঁকাআঁকির।  

রংধনু ক্রিয়েশন এর কর্ণধার শানাজ সুলতানা 

বন্ধুরা পুশ করা আরম্ভ করলো যে ব্যবসায়ীকভাবে শুরু করো, উপহার আর নেবো না, কিনে নেবো। ওদের চাপেই একটা পেইজ খুললাম। বন্ধু সুমনা যুক্ত করে দিলো মেয়ে নেটওয়ার্ক এ। মেয়েতে এসে আমি ডানা মেলে ওড়ার স্বপ্ন দেখলাম। "মেয়ে" র অসম্ভব মেধাবী আর শক্তিশালী মেয়েদের দেখে তাদের অনুপ্রেরণায় সাহস পেলাম। যাত্রা শুরু হলো রংধনু ক্রিয়েশনের। 

আঁকতে আমি ভালোবাসি। রং তুলি আমার সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনা, প্রতিবাদ আর ক্ষোভ প্রকাশের মাধ্যম হলো। ইউটিউব এর নানা টিউটোরিয়াল দেখে দেখে নতুন নতুন আঁকার টেকনিক শিখি। অ্যাপ্লাই করি, আমার খুব ভালো লাগে। মনে হয় দম ফেলার একটা জায়গা পেলাম। হ্যান্ড পেইন্ট নিয়ে কাজ করার কারণ কাজটা আমি পারি এবং কাজটা আমি অসম্ভব ভালোবাসি।

প্রবা - আপনার শাড়িতে ফুলের প্রাধান্য বেশি, এগুলো কি সব নিজের আইডিয়া থেকে বানানো নাকি কাস্টমাইজই বেশি?

আমার কাস্টমাইজড কাজ আসলে কম। আমি আসলে নানা ধরনের ফুল নিজে কাজ করি নিজের ভালোলাগা থেকে। এত সুন্দর সুন্দর ফুল আছে চারিদিকে, কি চমৎকার তার রং বিন্যাস। মুগ্ধ হই আর আঁকতে চেষ্টা করি। আমাদের দেশি ফুল বিদেশি ফুল সবই করি। অনেকে তাদের পছন্দের ফুলের কথা বলেন সেই অনুযায়ী তাই এঁকে দেই। 

রংধনু ক্রিয়েশন এর তৈরি পোশাক

প্রবা - কোন কাজগুলোর গ্রাহক চাহিদা বেশি থাকে?

চাহিদা আসলে এক এক সময় এক এক রকম পণ্যের হয়। তবে সারা বছরই শাড়ির কাজ চলতে থাকে এবং আমার ক্লায়েন্টরা আগ্রহ করে নেন। আমার মূল প্রোডাক্ট হ্যান্ড পেইন্টেড শাড়ি, আর হ্যান্ড মেইড বিডসের গয়না। 

প্রবা - কোন ধরনের শাড়িতে মূলত কাজ করা হয়? 

আমি দেশি অনেক ম্যাটেরিয়ালে কাজ করি। সফট সিল্ক, বলাকা সিল্ক, মসলিন (র- সিল্ক), এন্ডি সিল্ক, হাফ সিল্ক, পেপার সিল্ক, এন্ডি কটন, কটন কাপড়ে কাজ করেছি এবং করছি।

রংধনু ক্রিয়েশন এর তৈরি পণ্য 

প্রবা - একটা ব্যবসা করতে গেলে পরিবারের সমর্থন ঠিক কতটুকু দরকার? আপনার ক্ষেত্রে এই সাপোর্ট কতটুকু ছিল? 

যে কোনো কাজেই পরিবার এর সাপোর্ট খুবই জরুরী। আমি সাপোর্ট পাইনি বলবো না, তবে প্রথমদিকে মা বাবা কিংবা এক্সটেন্টেড ফ্যামিলি কেউই ব্যাপারটা খুব ভালোভাবে নেয়নি। মানে তাদের এক্সপেক্টেশন আরো বেশি ছিল। আমি একাউন্টিং এ অনার্স এবং মাস্টার্স করেছি। আমার রেজাল্ট ভালো ছিলো। আগা গোড়া ফার্স্টক্লাস, তাদের এক্সপেক্টেশন ছিল সম্মানজনক কোথাও চাকরি করবো। আইডেন্টিটি থাকবে। 

আমাকে কোনদিন কেউ কিছুতে বাঁধা দেয়নি, আমি আসলে খুব সহজে দমে যাই না। কিন্তু আমি ছেড়ে দেইনি। লেগে থেকেছি। বিশাল কিছু হয়ে যাইনি। তবে আমার মা কে বোঝাতে পেরেছিলাম যে আমি যা করছি সেটাও সম্মানজনক এবং আমি আমার ভালোবাসার এবং আগ্রহের কাজই করছি। আমাকে, আমার কাজকে অনেক অনেক মানুষ ভালোবাসে, সমাদর করে। আমার মা আজ নেই কিন্তু আমার সন্তুষ্টি এখানে যে সে তার বড় সন্তান কিছু করতে পারেনি এই কষ্ট নিয়ে যান নি বরং জেনে গেছেন যে তার মেয়ে তার কাজের মধ্যে দিয়েই বহু বহু বছর বেঁচে থাকবে।

রংধনু ক্রিয়েশন এর তৈরি পোশাক

প্রবা - শাড়ি ছাড়াও আর কী কী পণ্য নিয়ে কাজ করছেন? 

আমি সেলাই করতে খুব ভালোবাসি। আমি নানা ধরনের কাজ করি। মূল উপজীব্য পেইন্টিং, মাধ্যম নানা রকম। কখনো আঁকি রং তুলিতে, কখন সীড বিডস দিয়ে, কখনোবা সূচ সুতিতে।

আমার নাম নেয়ার মত পণ্যগুলো হলো- শাড়ি, মেয়েদের পোশাক, বাচ্চাদের পোশাক, স্কার্ফ, ছেলেদের পাঞ্জাবী, শার্ট, বেডশীট, পর্দা, ক্যানভাস, হুপ আর্ট এম্ব্রয়ডারি, হ্যান্ড পেইন্টেড ল্যাম্পশেড, পাতায় সেলাই করা স্যুভেনির। হ্যান্ড মেইড সীড বিডস জুয়েলারি, হ্যান্ড স্টীচড জুয়েলারি।

প্রবা - ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী? 

কাজের উদ্দেশ্য প্রথম থেকেই ছিল ওয়ার‍্যাবল আর্ট সকল বয়সের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেখা। দেশি কাপড়ের ব্যবহার করা। বিন্দু পরিমাণে হলেও দেশের কাজে আসা। নিজের পড়াশোনা, জ্ঞান, স্কিল দিয়ে নিজেকে দেশের কাজে লাগানো। দেশের জিনিস দেশে ও বিদেশে পৌঁছে দেয়া। গুটিগুটি পায়ে রংধনু ১০ বছর পার করে ১১ বছরে পা দিয়েছে। রংধনুর একটা ওয়ার্ক স্টুডিও হয়েছে। বেশ কিছু ফ্যামিলিকে রংধনু সাপোর্ট করে। আরো অনেক মানুষের কর্মসংস্থান এর জায়গা করতে চাই। আমি এখন পর্যন্ত ১২ টা দেশে রংধনুর পণ্য পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। 

নিজের কাজের আরো মানোন্নয়ন করাই মূল লক্ষ্য। আমি আমার কাজের মঝেই বেঁচে থাকতে চাই। আমার মৃত্যুর পরও আমার কাজ থেকে যাবে এবং তার মাঝেই আমি বেঁচে থাকবো অনেক অনেক দিন।

রংধনু ক্রিয়েশন এর ফেসবুক পেইজ - https://www.facebook.com/rongdhonucreation


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা