মাহবুবা মিতু
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৫ ১২:৪৬ পিএম
হাতের কাছে বই আছে, সময় আছে, পড়ার ইচ্ছেও হচ্ছে, কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে পড়তে শুরু করেও এগোতে পারছেন না। এমন হয় না মাঝে মাঝে? এটাই রিডিং ব্লক। বই পড়ুয়া অথচ রিডিং ব্লক নামটা শোনেননি এমন লোক মেলা ভার। ব্রিটিশ লেখক ও সাংবাদিক স্টুয়ার্ট জেফ্রিস ২০০৮ সালে দ্য গার্ডিয়ান-এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এ শব্দ প্রথম ব্যবহার করেন। বই পড়া যাদের অভ্যাস, তারা একবার রিডিং ব্লকে পড়ে গেলে বেশ অস্বস্তিতে ভোগেন।
রিডিং ব্লক কেন হয়
১. পাঠক হিসেবে নিশ্চয়ই আপনার পছন্দের জনরা রয়েছে, ওই নির্দিষ্ট জনরা বাদে অন্য কোনো জনরা পড়তে গেলে এমন হতে পারে।
২. পূর্ববর্তী পড়া বইয়ের রেশ না কাটাতে পারলেও পড়তে পারেন রিডিং ব্লকে। আমি ব্যক্তিগতভাবে জহির রায়হানের ‘বরফ গলা নদী’ এবং হুমায়ূন আহমেদের ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ শেষ করে এ সমস্যায় ভুগেছিলাম। বহু দিন নতুন কিছু শুরু করতে পারিনি।
৩. ভাষার দুর্বোধ্যতা, অগোছালো প্লট, নতুন কোনো জনরার শুরুতে রিডিং ব্লক হতে পারে। পড়ার বিষয়বস্তু যদি আকর্ষণীয় না হয় কিংবা জটিল মনে হয়, তাহলে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়।
৪. ভিনদেশি বই পড়ার ক্ষেত্রে শব্দভান্ডারের সীমাবদ্ধতা বা বাক্যের গঠন বোঝার সমস্যা পড়াকে কঠিন করে তুলতে পারে। ফলে রিডিং ব্লক তৈরি হতে পারে।
৫. শুধু নিজস্ব এ ত্রুটিগুলো নয়, রিডিং ব্লক হতে পারে অদক্ষ অনুবাদকের বই পড়লেও।
৬. এ ছাড়া ডিজিটাল ডিসট্রাকশনের যুগে গ্যাজেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার সহজলভ্যতা রিডিং ব্লক তৈরির জন্য দায়ী। অতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম রিলস আর শর্টসে অভ্যস্ত হয়ে পড়লে সব রকমের পড়াশোনায়ই মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়।
৭. বই পড়ার অনুকূল পরিবেশ না পাওয়া, অস্থিরতা, মানসিক চাপও হতে পারে আপনার রিডিং ব্লকের কারণ। চোখের সমস্যা, মাথাব্যথা, ক্লান্তির মতো শারীরিক এ সমস্যাগুলো পড়ার ইচ্ছাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
৮. একসঙ্গে অনেক তথ্য কিংবা জটিল বিষয়বস্তু পড়ার চেষ্টা করলে মস্তিষ্ক চাপ অনুভব করতে পারে। ফলে রিডিং ব্লক তৈরি হতে পারে। এজন্য মাল্টি টাস্কিংও এড়িয়ে চলা উচিত।
এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের কিছু উপায়
রিডিং ব্লক কাটানোর জন্য সবার আগে ধৈর্য ধরতে হবে, এটি কাটাতে সময় লাগতে পারেÑ এমন মেনে নিয়ে পরবর্তী করণীয়তে মনোযোগ দিতে হবে।
১. রিডিং ব্লক কাটানোর গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে ডিজিটাল ডিসট্রাকশন কমানো। বই পড়ার সময় ফোন, অন্যান্য গ্যাজেট দূরে রাখুন।
২. রিডিং ব্লক বিষয়টা যেহেতু মনস্তাত্ত্বিক, তাই মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন। পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম খাবার, ব্যায়াম কিংবা মেডিটেশন বাড়াতে পারে আপনার পড়ার মনোযোগ।
৩. দীর্ঘ সময় রিডিং ব্লকে থাকার পর পড়া শুরু করতে পারেন পছন্দের জনরা দিয়ে। প্রিয় কোনো উপন্যাস যেটা আপনার মনকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল তা আবার পড়ে ফেলতে পারেন। ছোটগল্প, রম্যগল্প, ম্যাগাজিন, পছন্দের কমিকস, পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা দিয়েও পড়ার নতুন যাত্রা করা যেতে পারে।
৪. ছোট লক্ষ্য নিয়ে শুরু করবেন। দীর্ঘ বিরতির পর বড় বই পড়ার চাপ নেওয়া ঠিক হবে না। এক্ষেত্রে ছোটগল্পের সংকলন কিংবা অল্প পাতার বই হতে পারে বেস্ট অপশন। প্রথমে অল্প পড়ার টার্গেট নিয়ে ধীরে ধীরে পড়ার পরিধি বাড়ান।
৫. পড়াকে আকর্ষণীয় করতে নোট নেওয়া, পছন্দের লাইন হাইলাইট করা, রিডিং ট্র্যাকার তৈরি করা কার্যকর হতে পারে। এতে আপনার প্রোগ্রেস রেকর্ড থাকায় পড়ার প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
৬. রিডিং ব্লক কাটাতে ছোট্ট হলেও একটা পড়ুয়া সার্কেল তৈরি করুন। নিজেদের মধ্যে পড়া নিয়ে ডিসকাস করুন, একে অন্যকে টার্গেট দিন, এতে পড়ার বিষয়টা আনন্দময় ও পঠিত জ্ঞান ভাগাভাগি হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বই সংক্রান্ত অনেক গ্রুপ রয়েছে, সেখানে আপনার পঠিত বই নিয়ে আলোচনা, বই সম্পর্কে নিজের মতামত শেয়ার করতে পারেন।
৭. পড়ার ধরাবাঁধা ধরন পরিবর্তন হতে পারে আপনার রিডিং ব্লক কাটানোর চমৎকার উপায়। এক্ষেত্রে ই-বুক কিংবা অডিও বুক হতে পারে পছন্দের অপশন। সেক্ষেত্রে ই-বুক পড়া এবং অডিওবুক শোনার সময় ডিসট্রাকশন কমাতে ফোনের নোটিফিকেশন ব্লক করে নেবেন। এতে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হবে।
৮. বই পড়ার নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ করতে পারলে নিজেকে পুরস্কৃত করুন। এতে বই পড়ার উৎসাহ বাড়বে।