সাদিয়া সিদ্দিকা
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৫ ১২:৪১ পিএম
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতির গুরুত্ব অপরিসীম। ফ্যান, রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন থেকে শুরু করে রাইস কুকার, মাইক্রোওয়েভ কিংবা কম্পিউটার- প্রতিটি যন্ত্রই আমাদের রোজকার জীবনে কাজে লাগে। কিন্তু এই যন্ত্রগুলো কতটা যত্নে রাখা হচ্ছে, তা কি আমরা ভেবে দেখি?
অবহেলা বা অসচেতনভাবে ব্যবহারের কারণে ইলেকট্রিক সামগ্রী শুধু দ্রুত নষ্টই হয় না, অনেক সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনারও কারণ হতে পারে। তাই সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। আমাদের দেশে ইলেকট্রিক সামগ্রীর সঠিক যত্নের বিষয়ে এখনও অনেকের ধারণা সীমিত। ফলে অল্প কিছুদিনের ব্যবহারে যন্ত্র নষ্ট হয়ে যাওয়া, অগ্নিকাণ্ড বা শর্টসার্কিটের মতো দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের ঘরোয়া অগ্নিকাণ্ডের একটি বড় অংশ ঘটে থাকে বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে। অথচ সামান্য সচেতনতা, সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ আর সময়মতো প্রতিক্রিয়া জানালে এসব সমস্যা অনেকটাই এড়ানো সম্ভব। চলুন জেনে নিই কীভাবে আপনি দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত ইলেকট্রিক সামগ্রীর যত্ন নিতে পারেনÑ যা কেবল যন্ত্রের আয়ু বাড়াবে না, একই সঙ্গে বাড়াবে ঘরের নিরাপত্তা ও করবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়।
ফ্যান
গরমের দিনে ঘরের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য যন্ত্রটি হলো ফ্যান। তবে প্রায় প্রতিদিন চললেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি পরিষ্কারের তালিকায় পড়ে না। ফ্যানের ব্লেডে জমে থাকা ধুলাবালি শুধু বাতাসকে ভারীই করে না, বরং এতে মোটরের গতি কমে যায় এবং যন্ত্র দ্রুত নষ্ট হয়। তাই সপ্তাহে একবার বন্ধ অবস্থায় ব্লেড ও হাউজিং শুকনো কাপড় দিয়ে মুছতে হবে। ছয় মাসে একবার বিয়ারিংয়ে কয়েক ফোঁটা মেশিন অয়েল দেওয়া যেতে পারে।
রেফ্রিজারেটর
রান্নাঘরের অন্যতম অপরিহার্য উপকরণ রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ। তবে অনিয়মিত পরিষ্কার, গরম খাবার রাখা বা বিদ্যুৎ ওঠানামার কারণে এটি দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মাসে অন্তত একবার ফ্রিজের ভেতর পরিষ্কার করুন। খাবার ঠান্ডা না করে ভেতরে রাখলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। কনডেনসার কয়েলে ধুলা জমলে বিদ্যুৎ খরচ বাড়ে, তাই বছরে অন্তত দুবার পরিষ্কার করুন।
রাইস কুকার
আজকাল শুধু ভাত নয়, খিচুড়ি, স্যুপ থেকে শুরু করে অনেক রান্নাতেই ব্যবহার হয় রাইস কুকার। কিন্তু অতিরিক্ত চাপ বা ভুল ব্যবহারে এটি দ্রুত খারাপ হয়। রান্না শেষে ঠান্ডা হলে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। পানির অংশ বা ভেতরের পাত্র কখনই ভিজিয়ে রাখা যাবে না। ধাতব চামচ ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে, কেননা এতে ননস্টিক স্তর উঠে যায়।
টেলিভিশন
টিভি পরিবারের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু টানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা চালিয়ে রাখা, ধুলো জমে যাওয়া বা ভোল্টেজ ওঠানামার ফলে এটি দ্রুত সমস্যায় পড়ে। টিভির স্ক্রিন পরিষ্কারে নরম, শুকনো মাইক্রোফাইবার কাপড় ব্যবহার করতে হবে। টিভির পেছনে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা খুবই জরুরি। সার্জ প্রটেক্টর বা স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিদিন অতিরিক্ত সময় চালিয়ে রাখলে তাপ ও ব্যাকলাইট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
কম্পিউটার ও ল্যাপটপ
কম্পিউটার বা ল্যাপটপ এখন শুধু কাজ নয়, পড়ালেখা, বিনোদন এবং যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। তাই এর যত্নে সামান্য অবহেলা ভবিষ্যতে বড় সমস্যায় ফেলতে পারে। তাই কীবোর্ড ও স্ক্রিন নিয়মিত পরিষ্কার করুন। গরম পরিবেশে ব্যবহার না করে কুলিং প্যাড ব্যবহার করুন। ব্যাটারি চার্জ ২০%-৮০% এর মধ্যে রাখুন, অতিরিক্ত চার্জিং ব্যাটারির আয়ু কমায়। অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার বা ভাইরাস দূর রাখতে নিয়মিত স্ক্যান করুন।
ওয়াশিং মেশিন
ওয়াশিং মেশিন ব্যবহারে অনেক সুবিধা হলেও নিয়মিত পরিষ্কার না করলে দুর্গন্ধ, ছাঁচ এবং যন্ত্রাংশ ক্ষয়ের ঝুঁকি থাকে। আর তাই প্রতিবার ব্যবহার শেষে ঢাকনা খোলা রেখে ভেতর শুকিয়ে নিন। মাসে একবার ক্লিনার বা ভিনেগার দিয়ে ‘সেলফ ক্লিন’ মোডে চালান। ড্রেন পাইপে ময়লা জমে গেলে পানি আটকে যেতে পারে, সেটি চেক করুন। বেশি কাপড় বা কম ওয়াটার লেভেলে ধোয়া থেকে বিরত থাকুন।
ইলেকট্রিক আয়রন
ইলেকট্রিক আয়রনের তাপমাত্রা ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে পোশাক পুড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তেমনি আয়রনের তলায় জমে থাকা দাগ পোশাক নষ্ট করে দিতে পারে। এর যত্নে আয়রনের প্লেট ঠান্ডা হলে তা পরিষ্কার করুন। স্টিম আয়রনে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করুন। ব্যবহারের পর তার গুটিয়ে রাখুন, তা যেন গরম অংশের সঙ্গে যেন না লাগে। বারবার অন-অফ না করে প্রয়োজন বুঝে তাপমাত্রা ঠিক রাখুন।
প্রতিটি যন্ত্রই নির্ভরতার নাম, তবে এগুলো যেন বিপদের কারণ না হয়, তার জন্য সচেতন ব্যবহার ও যত্ন নেওয়া জরুরি। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ শুধু যন্ত্রের আয়ু বাড়ায় না, বিদ্যুৎ খরচ কমায় এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনে।