আরফাতুন নাবিলা
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ১২:৫৭ পিএম
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:০৮ পিএম
জীবনের প্রচণ্ড ব্যস্ততা ও ক্লান্তি থেকে নিজেকে কিছুটা সময়ের জন্য ছুটি নিয়ে ঘুরতে যাই সবাই। অথচ ফ্যাশনসচেতন না হওয়ায় এবং ভুল পোশাক নির্বাচনে পুরো ভ্রমণটাই হয়ে ওঠে বিরক্তিকর। সঙ্গে সঠিক ব্যাগ, জুতা এমনকি খাবারও বেছে নিতে হয় এমনভাবে যেন পুরো ভ্রমণে শরীরও ভালো থাকে, আবার মন ভরে ভ্রমণটাও উপভোগ করা যায়। ভ্রমণে ফ্যাশন নিয়ে আজকের এ লেখায় গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়ে সঙ্গে আছেন জনপ্রিয় ট্র্যাভেলার ও ভ্লগার সুরভী ইয়াসমিন।
ভ্রমণে ফ্যাশন
যে পোশাক পরে আমরা সমুদ্রে যাই, সেটা পরে বিমানে উঠি না, আবার ট্রেকিং থেকে শুরু করে রাস্তায় হাঁটা, সেখানেও থাকে পোশাকের বিস্তর ফারাক। এর কারণ আবহাওয়া, স্বাচ্ছন্দ্য ও কিছুটা ফ্যাশন তো বটেই। তবে ঘুরতে গেলে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ফ্যাশন অনেকটাই বিস্তৃত হয়। এর কারণ অবশ্য মেয়েদের পোশাকের ভিন্নতা। পাহাড় হোক বা সমুদ্র, ঘুরে বেড়াতে গেলে মেয়েদের ব্যাগে সম্ভবত একটা পছন্দের রঙের শাড়ি অবশ্যই থাকে। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের ভ্রমণের তালিকা আগের চেয়ে যেমন বেড়েছে, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ফ্যাশনসচেতনতাও। ছেলেদের যেখানে টি-শার্ট, পাতলা লিনেন বা কটন শার্ট, থ্রি কোয়ার্টার দিয়েই ভ্রমণের পরিকল্পনা গুছিয়ে ফেলা যায়, সেখানে মেয়েদের বেশ কিছু পোশাক বাড়তি রাখতে হয় নানান কারণেই।
ভ্রমণে কেমন ফ্যাশন সাধারণত প্রাধান্য পায় তা নিয়ে সুরভী ইয়াসমিন বলেন, ‘আমি ভ্রমণে ফ্যাশনকে কয়েকটা ভাগে ভাগ করি। পাহাড়, সমুদ্র, বিমান ও রোড ট্র্যাভেল। শুরুতেই বলি ট্রেকিংয়ের পোশাক নিয়ে। এখানে যেহেতু দীর্ঘ সময় হাঁটতে হয়, তাই শরীর প্রচুর ঘামে। আবার পাহাড়ি পথে ঝিরি বা ঝরনা পড়তে পারে, তখন পোশাক ভিজে গেলে অনেকক্ষণ পরে থাকলে ঠান্ডা লাগবে বা জ্বর চলে আসবে যেটা ঘুরতে গেলে মোটেও ভালো লাগবে না। ট্রেকিংয়ে তাই জার্সি কাপড়ের টি-শার্ট বা পাতলা ফেব্রিক বেছে নিলে ভালো। বাতাসে এমন পোশাক দ্রুত শুকিয়ে যায়। আবার সমুদ্রের পোশাক কিছুটা আলাদা। যেমন এখানে আপনি যে পোশাক পরবেন সেটা পাতলা লিনেন বা কটনের হতে পারে। সঙ্গে যদি একটু ফ্লোরাল প্যাটার্ন বা হালকা রঙের হয় তাহলে বিচটাকে রিপ্রেজেন্ট করা যায়। মিডি ড্রেস, গাউন, স্কার্ট যেটাই পরেন না কেন পাতলা ও আরামদায়ক হলে ভালো লাগবে। রোড ট্র্যাভেল যেহেতু খানিকটা লম্বা সময়ের জন্য হয় তাই এ সময় বেছে নিতে হবে পাতলা কাপড়ের তৈরি পোশাক। যদি বসে থাকতে থাকতে পা ব্যথা হয়ে যায় তাহলে পা যেন একটু গুটিয়ে বসতে পারেন বা নড়াচড়া করতে আরাম হয়। এ ক্ষেত্রে সুতি কাপড়ের পালাজো, টি-শার্ট, কামিজ হলেই ভালো। তাহলে গরম কম লাগবে। আবার দেশের বাইরে ঠান্ডা জায়গায় গেলে সে ক্ষেত্রে ফ্যাশন কিছুটা ভিন্ন হবে অবশ্যই। বিমানে অনেক সময় কম্বল না-ও থাকতে পারে। তখন টেম্পারেচার কম থাকলে শরীর খারাপ লাগতে পারে, এমনকি জ্বর চলে আসাও অসম্ভব না। তখন ভ্রমণটাই শুরু হবে বিষণ্নতা দিয়ে। তাই আগে থেকে ব্যাগে হুডি, জগার্স এগুলো রাখতে পারেন।’
কেমন জুতা
জুতাও ফ্যাশনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে ফ্যাশনের চেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যকেই এ ক্ষেত্রে এগিয়ে রাখতে হয়। কারণ জুতা যদি আরামদায়ক না হয় তাহলে পায়ে নানান সমস্যা হতে পারে। যার কারণে পুরো ভ্রমণের আনন্দই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ভ্রমণে কী ধরনের জুতা পরা উচিত সে সম্পর্কে সুরভী বলেন, ‘ট্রেকিং বা হাইকিংয়ে এমন জুতা পরতে হবে যেগুলোয় ভালো গ্রিপ আছে। গ্রিপ ভালো হলে এ পথগুলোতে হেঁটে আরাম ও সুবিধা দুটোই পাওয়া যায়। নইলে পা পিছলে আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ক্ষেত্রে কেশুয়া, নেচার হাইক বা পেগাসাসের মতো ভালো ব্র্যান্ড থেকে জুতা নেওয়া ভালো। যদি রোড ট্রিপ হয় তাহলে কনভার্সটা আমি পরার পরামর্শ দেব। এতে দীর্ঘ সময় হাঁটতে অসুবিধা হবে না। বিমানে উঠলে যেহেতু ঠান্ডা লাগে তাই কনভার্স বা কেড্সই আরামদায়ক হবে। বিচে সব সময় হালকা জুতা পরা উচিত। যেহেতু বিচে পানি ও বালু থাকে তাই স্যান্ডেল পরলে দ্রুত শুকিয়ে যায়। হাঁটতেও আরাম হয়।’
কী ধরনের খাবার
ভ্রমণ ব্যাপারটাই এমন যে ঘুরতে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকার সুযোগ নেই। রোদ, বৃষ্টি যেকোনো আবহাওয়াই থাকতে পারে এ সময়ে। কিন্তু ঘুরতে গিয়ে সব এনার্জি তো লস করলে চলবে না? আবার প্রতি মুহূর্তে খাবার হোটেলও পাওয়া যাবে না যেখানে গিয়ে বারবার খেয়ে আসা যায়। বিশেষ করে ট্রেকিং করতে গেলে। তাই শরীরে মুহূর্তেই এনার্জি দেবে এমন খাবার রাখতে হবে সঙ্গেই। সেটা হতে পারে বাদাম, ফল, স্যান্ডউইচ, সেদ্ধ ডিম ও পানি। কী ধরনের খাবার সঙ্গে রাখা উচিত এ বিষয়ে সুরভী জানান, ‘ঘুরতে গেলে এনার্জি কমবেই। তাই খাবার বাছাই করতে হবে এমনভাবে যেগুলো শরীর চাঙা রাখে। যেমন আমার ব্যাগে আমি সব সময় নানান ধরনের বাদাম, চকলেট ও খেজুর রাখি। স্থানীয় এলাকায় গেলে ডিম ও দুধ কিনে খাই। ভিটামিন ডি ক্যাপসুল ও ক্যাভিক সি প্লাস রাখি। প্রচণ্ড রোদে এটা মুহূর্তেই শক্তি এনে দেয় শরীরে। ভ্রমণে সুস্থ থাকার জন্য এগুলো জরুরি। পেট ভরানোর জন্য বা দেশের বাইরে গেলে ইনস্ট্যান্ট নুডলসও থাকে কারণ অন্য খাবারের অপশন না পেলে ঝটপট এটা বানিয়ে ফেলা যায়। কফিটা থাকে কারণ এটাও চাঙা করে তোলে অল্প সময়ে। একটা দেড় লিটারের পানির বোতল আমার কাছে সব সময় থাকে। প্রতিদিন বাইরে যাওয়ার আগে এটা ভরে নিই, শেষ হলেই আবার রিফিল করি। কারণ খাবার ও পানি দুটোই শরীর ভালো রাখার জন্য জরুরি।’
অনুষঙ্গের ধরন
ভ্রমণের ফ্যাশনে আমরা শুধু পোশাক নিয়েই কথা বলছি না। এখানে নিজেকে সুস্থ ও সুরক্ষিত রাখাটাও অনেক বড় ব্যাপার। এজন্য দরকারি কিছু জিনিস অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে। যেমন কাগজপত্র, ওষুধ, সানস্ক্রিন, সানগ্লাস, ছাতা, পানির বোতল ইত্যাদি। সুরভী জানালেন তিনি সঙ্গে কী কী রাখেন, ‘সঙ্গে একটা ছাতা যদি থাকে তাহলে বৃষ্টি বা রোদ থেকে সুরক্ষিত রাখা যায় নিজেকে। দেড় বা দুই লিটারের পানির বোতল অবশ্যই রাখি যেন শরীর ডিহাইড্রেটেড না হয়ে যায়। তা ছাড়া নাপা, মুভ, হাত-পা কেটে গেলে ড্রেসিং করার উপকরণ এমন বিভিন্ন মেডিসিন সঙ্গেই থাকে আমার।’ ‘ছেলেদের পোশাক নিয়ে সাধারণত খুব একটা ভাবতে হয় না। কিন্তু মেয়েদের আন্ডারগার্মেন্টস নিয়ে ভাবনার বিষয় অবশ্যই রয়েছে। কারণ একই আন্ডারগার্মেন্টস পরদিন না পরাই ভালো, এতে হাইজিন সুরক্ষিত থাকে না, আবার প্রাইভেট পার্টসে ফাঙ্গাল ইনফেকশনও হতে পারে এ থেকে। তাই কয়েকটি আন্ডারগার্মেন্টস সঙ্গে রাখা ভালো। তা ছাড়া প্রতিদিন শাওয়ার নিতে হবে যেন শরীরে ঘাম জমে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ না করে,’ জানান সুরভী।
মেয়েদের সুরক্ষা নিশ্চিতে করণীয়
বর্তমানে অনেক মেয়ে ঘুরতে বের হচ্ছেন যেটা খুবই প্রশংসনীয়। তবে সুরক্ষার ব্যাপারটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় সেলফ ডিফেন্স কিছুটা হলেও শিখে রাখা। দেশ হোক বা বিদেশ, পেপার স্প্রে বা শক গানও সঙ্গে রাখতে পারেন।
ফ্যাশনজগৎ এখন আর নির্দিষ্ট কোনো ক্যাটাগরিতে বন্দি নয়। প্রফেশনাল লাইফ থেকে শুরু করে ভ্রমণ পর্যন্ত এর বিস্তৃতি ব্যাপক। ছেলে বা মেয়ে যে-ই হোক না কেন, ঘুরতে গেলে ফ্যাশনকে প্রাধান্য দিচ্ছেন কমবেশি সবাই। যে জায়গায় আজ যাওয়া হলো, কাল সেখানে না-ও যাওয়া হতে পারে। আর তাই তো ভ্রমণের জায়গা স্মৃতিময় করে রাখতে হলেও ফ্যাশন প্রাধান্য পায় গুরুত্বের সঙ্গে।
মডেল ও ছবি : সুরভী ইয়াসমিন ও ফারহান প্রিয়ম