শরিফ হোসাইন আসিফ
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ১২:৩৬ পিএম
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:০৯ পিএম
কোনো ট্যুরের গন্তব্য নির্বাচনের একদম প্রাথমিক কাজটা হলো ব্যাগপ্যাকিং। সঠিকভাবে ব্যাকপ্যাক প্রস্তুত করতে পারলে পুরো ভ্রমণটাই হয় অনেকটা নির্ভার ও নিশ্চিন্ত। সে ক্ষেত্রে ভ্রমণের দিনকাল ও গন্তব্য বিবেচনা করে ব্যাগ নির্বাচন করা উচিত। একটা সুন্দর, গোছানো ব্যাকপ্যাক পুরো ভ্রমণ করে তোলে স্বস্তিদায়ক ও উপভোগ্য।
ব্যাকপ্যাক কেমন হওয়া উচিত
ফেব্রিক
ট্যুরের জন্য যেকোনো ব্যাকপ্যাক কেনার আগে বুঝেশুনে ফেব্রিক বাছাই করা খুবই জরুরি। মাসখানেক ব্যবহারের পরই ফেব্রিক ছিঁড়ে যাবে এমন যেন না হয়। সেই সঙ্গে হতে হবে পাতলা, কারণ ভারী ফেব্রিক হলে ব্যাগের ওজনও বাড়বে। এ ক্ষেত্রে নাইলন ব্যাকপ্যাকের জন্য আদর্শ বলা যায়। এটা অবশ্য সম্পূর্ণ ওয়াটারপ্রুফ না হলেও শুকিয়ে যায় দ্রুত। খেয়াল রাখতে হবে যেন ভেতরটা ভিজে না যায়।
স্ট্রং ও স্টার্ডি জিপারস
ট্যুরে গিয়ে যদি দেখেন ব্যাকপ্যাকের জিপারটা ভেঙে গেছে তখন কতটা বিরক্ত লাগবে বলুন তো? তাই কেনার আগে অবশ্যই ফেব্রিকের সঙ্গে সঙ্গে নিডল ও জিপারটাও চেক করে নিতে হবে।
ফ্রন্ট লোডিং
ফ্রন্ট লোডিং ব্যাকপ্যাক যদিও খুব একটা চোখে পড়ে না, তবু ট্যুরের জন্য এটা বেশ উপকারী। বেশিরভাগ ব্যাগ টপ লোডিং হয়, মানে ওপরের দিক থেকে খোলা যায়। ফ্রন্ট লোডিংয়ের সুবিধা হচ্ছে স্যুটকেসের মতো খোলা যায় এবং ব্যাগের ভেতর থেকে জিনিস সহজেই বের করা যায়।
প্যাডেড হিপ বেল্ট ও শোল্ডার স্ট্র্যাপস
ব্যাকপ্যাক বহন করার সময় হিপে ওজন ভর করে। তাই হিপ বেল্ট প্যাডেড হলে ভালো হয়, এতে ওজন বহন করার সময় অস্বস্তি হবে না। হিপ বেল্ট অবশ্যই অ্যাডজাস্টেবল হতে হবে যেন প্রয়োজন বুঝে টাইট বা ঢিলা করা যায়। শোল্ডার স্ট্র্যাপও প্যাডেড ও অ্যাডজাস্টেবল বেছে নিতে হবে, এতে ঘাড়ে অতিরিক্ত চাপ হবে না। নইলে ঘাড় কেটে যেতে পারে।
ব্যাকপ্যাকের সাইজ
ভ্রমণের দিনকাল ও স্থান অনুযায়ী ব্যাগ গোছানোর কাজ আগেভাগেই সেরে ফেলতে হবে।
ডে ট্যুর অর্থাৎ এক দিনের ঘোরাঘুরির জন্য : নারী বা পুরুষ নির্বিশেষে ১০ থেকে ২০ কেজি ধারণক্ষমতার ব্যাকপ্যাক যথেষ্ট। এ পরিমাণ ব্যাগে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন ১-২ সেট পরিধেয় পোশাক, সানগ্লাস, পানির বোতল, টিস্যু, ছোটখাটো খাবার কিংবা প্রয়োজনীয় ওষুধ অনায়াসে বহন করা যায়।
এক-তিন রাতের জন্য : ৩০ থেকে ৫০ কেজির ব্যাকপ্যাক নিলেই এ সময়ের জন্য যথেষ্ট। খেয়াল রাখবেন দরকারি জিনিসগুলো যেন বাদ না পড়ে যায় এ ক্ষেত্রে।
তিন-পাঁচ রাতের জন্য : স্বাভাবিকভাবেই দিন যত বাড়বে তত দরকারি জিনিসের সংখ্যাও বাড়বে। এ ধরনের শর্ট ট্রিপের জন্য ৫০-৮০ কেজির ব্যাকপ্যাক নিলে বেশ খানিক জিনিস সামঞ্জস্য করে নিতে পারবেন। এ ব্যাগগুলোয় আলাদা চেম্বার থাকে, যাতে নিজের প্রয়োজনমতো পোশাক, গ্যাজেটস, জুতা, খাবার, ছোট রান্নার সরঞ্জাম ইত্যাদি সহজেই গোছানো যায়।
পাঁচ দিন বা তার বেশি হলে : বাড়তি কাপড়, স্লিপিং ব্যাগ, টেন্টসহ অনেক কিছুই লাগতে পারে এ ট্যুরগুলোতে। সে ক্ষেত্রে ৭০ কেজি বা তার বেশি ওজনের ব্যাগ বেছে নিতে হবে।
কোন ব্র্যান্ডের ব্যাকপ্যাক
বর্তমানে বিদেশি ব্র্যান্ডের ব্যাকপ্যাকের মধ্যে ডিকাথলন ও ন্যাচারহাইকস বেশ জনপ্রিয় ও সাশ্রয়ী। ডিকাথলনের ১০, ১৫, ২০ কেজির ব্যাকপ্যাকগুলো খুবই হালকা, আরামদায়ক এবং কার্যকর। এগুলোর অনেক মডেল ওয়াটারপ্রুফ বা স্প্ল্যাশ প্রুফ, যা বর্ষার দিনগুলোয় হাইকিং বা ট্রেকিং করে তোলে ঝামেলামুক্ত।
বেশি চেম্বারযুক্ত ব্যাকপ্যাকের ক্ষেত্রে ডিকাথলন, ওস্প্রে, ডিউটার, ন্যাচারহাইক, কৈলাস ইত্যাদি ব্র্যান্ডের ব্যাকপ্যাক বেশ জনপ্রিয়। আমাদের দেশেও কিছু ব্র্যান্ড এসব ব্যাগ তাদের শপে বিক্রি করে। এর মাঝে পিক৬৯, ফোর সিজন, ট্রিপমেট, আউটডোরস বিডি অন্যতম। ডে ট্যুর ছাড়াও কয়েক দিনের ট্যুরের জন্য ব্যাকপ্যাক নির্বাচন করার সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। যেমন ব্যাগ যেন শরীরের গঠন অনুযায়ী হয়, যেন পিঠে চাপ না পড়ে, ব্যাগের ফিতাগুলো যেন আরামদায়ক ও প্যাডেড হয়, পাশাপাশি ব্যাগটি যেন টেকসই এবং প্রয়োজনমতো ওয়াটারপ্রুফ বা স্প্ল্যাশ প্রুফ হয়। সেদিক থেকে ওপরে বর্ণিত ব্র্যান্ডগুলোর ব্যাকপ্যাক আমাদের সব চাহিদার সঙ্গে মিলে যায়। এ ছাড়া আমাদের দেশে এসব ব্র্যান্ডের কিছু কপি ব্যাকপ্যাক বা কিছু নন ব্র্যান্ডের ব্যাকপ্যাক পাওয়া যায় লোকাল দোকানগুলোতে।