ইসমাইল মাহমুদ
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:০৭ পিএম
চায়ের রাজধানী মৌলভীবাজারের পর্যটননগরী হিসেবে খ্যাত শ্রীমঙ্গল উপজেলা। এ উপজেলা সদর থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ বাজার পর্যন্ত সড়কটি দেশিবিদেশি পর্যটক ও স্থানীয়দের তনুমন ভরিয়ে দেয়। শ্রীমঙ্গলের চৌমুহনা চত্বর থেকে ভানুগাছ বাজার চৌমুহনা চত্বরের দূরত্ব ১৫ দশমিক ১০ কিলোমিটার। আর এ সড়কটি প্রতি বছর গ্রীষ্মকাল এলেই সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে বসে।
শ্রীমঙ্গল থেকে ভানুগাছ (কমলগঞ্জ) যাওয়া-আসার পথে সড়কের পাশেই পর্যটন স্পট সবুজাভ চা বাগান, লেক, রাবারবাগান, লালমাটি টিলা, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, জানকীছড়া বনাঞ্চল, ত্রিপুরা পল্লী, মাগুরছড়া পরিত্যক্ত গ্যাস ফিল্ড, চা জাদুঘর, বধ্যভূমি একাত্তর, পাহাড়ি ছড়া, দেশের একমাত্র চব্বিশ ঘণ্টা জাগ্রত গ্রাম রাধানগর, ফুলবাড়ী, হীড বাংলাদেশ, লাউয়াছড়া ডরমেটরি লেক, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই), আরোগ্য কুঞ্জ, মাগুরছড়া পানপুঞ্জি ইত্যাদি। এসব পর্যটন স্পট দেখতে প্রায় প্রতিদিনই হাজার হাজার দেশিবিদেশি পর্যটক ভিড় করেন শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায়। দুই উপজেলার সংযোগময় যে সড়কের দুই পাশে এতগুলো সুরম্য পর্যটন স্পট সে সড়কটিও প্রতি বছর গ্রীষ্ম মৌসুমে দেশিবিদেশি পর্যটকের কাছে সৌন্দর্যের ডালি মেলে মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে যাচ্ছে।
শ্রীমঙ্গল থেকে কমলগঞ্জ সড়কের শ্রীমঙ্গলস্থ ৪৬, বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি ক্যাম্প) থেকে বিটিআরআই মোড় পর্যন্ত দুই পাশে সবুজ চা বাগানের ফাঁকে ফাঁকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে রক্তিম কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, সোনালু, জারুলসহ নানান জাতের গাছ। গ্রীষ্মকালে এসব গাছে লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, বেগুনি ইত্যাদি রঙের ফুল পর্যটকদের তনুমন ভরিয়ে দেয়। এ সময় সড়কটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই জেলা ও জেলার বাইরে থেকে লোকজন আসেন। বিশেষ করে বিকালবেলা এটির সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর। সড়কটির সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে স্থানীয় সৌন্দর্যপিপাসুরা সড়কটির নামকরণ করেছেন ‘পুষ্প সড়ক’।
সম্প্রতি পুষ্প সড়কে গিয়ে দেখা যায় প্রচুর দর্শনার্থী এসেছেন সড়কটি দেখতে। কেউ মোবাইলে ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন, কেউ সেলফি ধারণ করছেন। সেখানে কথা হয় ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলা থেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, পানপুঞ্জি ভ্রমণে। তিনি বলেন, ‘দুই দিন যাবৎ এখানে আছি। অনেক সৌন্দর্যময় স্থান দেখেছি। শ্রীমঙ্গল থেকে কমলগঞ্জ সড়কের পাশের ফুলের সৌন্দর্য দেখে আমরা বিমোহিত। সড়কটির পাশে নানান বর্ণের, নানান রঙের ফুল দেখে আমার পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য আমার ছেলে আদনান খুব আনন্দিত।’
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী ইমরান আহমেদ বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল থেকে কমলগঞ্জ উপজেলায় যাওয়ার পথে বিজিবি ক্যাম্প থেকে বিটিআরআই মুখ পর্যন্ত সড়কে নানান জাতের ফুলের গাছে ফুটে রয়েছে লাল, সাদা, বেগুনি, হলুদ ফুল। দেখে মনে হয় ফুলের রাজ্যে হারিয়ে গিয়েছি। সড়কটি ফুলের হাসিতে যেন হাস্যোজ্জ্বল। বাড়ির কাছাকাছি হওয়ায় প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে এ সড়কে প্রায়ই আসি। আড্ডা দিই, সময় কাটাই। সড়কটিতে এলে আপনাআপনি মন ভালো হয়ে যায়।’
শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাংবাদিক-কলামিস্ট মো. এহসানুল হক বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের শ্রীমঙ্গল অংশে অবস্থিত পুষ্প সড়কটি স্থানীয়দের বৈকালিক ভ্রমণের জন্য উৎকৃষ্ট স্থান। প্রতিদিন বিকালবেলা এখানে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। পাশাপাশি যারা শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার পর্যটন স্পটগুলোয় ভ্রমণে আসেন তারা প্রায় সবাই শ্রীমঙ্গলের রাধানগরে অবস্থিত হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, কটেজে রাতযাপন করেন। শহর থেকে রাধানগর যেতে হলে ওই সড়কটিই একমাত্র অবলম্বন। ফলে দেশিবিদেশি পর্যটক এ সড়কের বিজিবি ক্যাম্প থেকে বিটিআরআই মোড় পর্যন্ত অংশে নানান রঙের ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে যাওয়া-আসা করেন। এ ছাড়া স্থানীয়রা প্রকৃতির টানে প্রতিদিনই এখানে ভিড় করেন।’
রাধানগরে শান্তিবাড়ী ইকো রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী তানভীরুল আরেফিন লিংকন বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল থেকে কমলগঞ্জ অথবা কমলগঞ্জ থেকে শ্রীমঙ্গল সড়কের পুষ্প সড়কটি প্রতি বছর গ্রীষ্ম মৌসুমে তথা বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠে অপার সৌন্দর্যময় হয়ে ওঠে। এ সময় গাছে গাছে ফুটে থাকে নানান রঙের ফুল; যা দেখে পর্যটকরা বিমোহিত হন। আমি নিজেও সময়সুযোগ পেলে পুষ্প সড়কে এসে আড্ডা দিই। খুব ভালো লাগে এ সড়কে এলে। আমার ধারণা এটি সারা দেশের মধ্যে একটি অনন্য সৌন্দর্যময় সড়ক।’