সঞ্জয় চৌধুরী
প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৪১ এএম
আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৫ ১১:১৮ এএম
কলেজে শিক্ষকতা করায় রমজান মাসে দীর্ঘ ছুটি পেলাম। নানান কাজের পরিকল্পনা নিয়ে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে নিজ বাড়িতে গেলাম। নানান কাজের ভিড়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ক্যামেরা হাতে পাখির খোঁজে ঝাড়-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো।
গত বছর মার্চে এক মুহূর্তের জন্য দেখা দিয়েছিল সিঁদুরে মৌটুসি। ক্যামেরাবন্দি করার সুযোগ হয়নি। মনে মনে সিঁদুরে মৌটুসিকেই খুঁজতে লাগলাম। সকালে-দুপুরে ক্যামেরা হাতে বসে থাকি জবা ফুলের গাছের ধারে, শিম মাচানের পাশে, গোলাপ, জামগাছের তলায়। এই সমস্ত ফুল থেকে মৌটুসির মধু সংগ্রহ নিত্যদিনের কাজ। এক সকালে হঠাৎ জবা ফুলগাছ থেকে ভেসে আসতে লাগল চঞ্চল মিষ্টি শিষ। মুহূর্তে বুঝে গেলাম এটি আর কেউ নয় মৌটুসি ছাড়া। তাকিয়ে দেখি জবা ফুলের ডাঁটায় জবার মতো লাল সিঁদুরে মৌটুসি। ক্যামেরা চোখে ধরার আগেই চঞ্চল প্রকৃতির এই ছোট্ট পাখি ফুরুৎ। এতদিনের অপেক্ষার পর সিঁদুরে মৌটুসির দেখা পেয়েও ক্যামেরাবন্দি করতে না পেরে বসন্তের তাজা জবার মতো চনমনে সকালেই মনটা কেমন ভারী হয়ে গেল।
বাংলাদেশে প্রায় ১১ প্রজাতির মৌটুসির কয়েক প্রজাতি সচরাচর চোখে পড়লেও সিঁদুরে মৌটুসি খুব বেশি দেখা যায় না। ঝাড়-জঙ্গলে থাকতে পছন্দ করে এরা। মধু সংগ্রহে পটু। তবে মাকড়সার মতো কিছু ছোট ছোট পোকামাকড়ও এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে। লেবুজাতীয় গাছে এরা বাসা বাঁধে। বাসা তৈরি করে পাটের আঁশ, কলাগাছের শুকনো বাকল, মাকড়সার জাল ইত্যাদি জড়িয়ে অনেকটা বাবুই পাখির ঝুলন্ত বাসার মতোই, তবে আকারে ছোট।
ছবি তুলতে না পেরে আবার অপেক্ষায় থাকলাম। তবে ছুটি ফুরিয়ে আসছে। এরই ফাঁকে অন্যান্য পাখিরও ছবি তুললাম, জীবনচর্চা দেখলাম তাদের। ছবি তুললাম দৃষ্টিনন্দন স্বর্গীয় পাখি দুধরাজ বা সাহেব বুলবুলি, ধলাকোমড় মুনিয়া, লালঘাড় প্যাঙ্গা, ধলাবুক মাছরাঙা, সাতভাই ছাতারে, ধলাগলা লেজনাচানিসহ আরও বেশকিছু পাখির। এখন চলছে পাখির প্রজনন সময়। দেখলাম বাসা বানাচ্ছে লালঘাড় প্যাঙ্গা, ডিমে তা দিচ্ছে ধলাকোমড় মুনিয়া, ধলাগলা লেজনাচানি। এরা আমাদের পরিবেশের পাখি। ফলে প্রকৃতিতে এই সমস্ত পাখি যাতে নির্বিঘ্নে প্রজন্ম বাড়াতে পারে, সে ব্যাপারে আমাদের সবার সচেতন থাকা প্রয়োজন।
তবে মনে বাসনা সিঁদুরে মৌটুসির ছবি তোলার। সেই বাসনা নিয়ে ছুটি শেষের একদিন আগে ক্যামেরা হাতে গেলাম সেই জবা গাছের ধারে। গিয়েই চোখে পড়ল চঞ্চলতার সাথে আনন্দচিত্তে মিষ্টি চিকন সুরে জবা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত কাঙ্ক্ষিত সিঁদুরে মৌটুসি। দেরি না করেই ক্লিক করলাম ক্যামেরায়। ক্যামেরাবন্দি হলো সিঁদুরে মৌটুসি। মৌটুসি ডানা মেলল অন্য কোনো গাছে অন্য কোনো ফুলে। আর আমি আনমনেই গুনগুন করতে করতে বাড়ি ফিরলাম ‘আহা! কী আনন্দ আকাশে বাতাসে’।