হাসিব আল আমিন
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ১২:৩৯ পিএম
নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় কনটেন্ট তৈরি করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ফরহাদুল ইসলাম পাভেল। মানুষকে হাসানোর কনটেন্ট তৈরি করে নোয়াখালীর মানুষের মন জয় করে এখন বিনোদন ছড়িয়ে দিয়েছেন সারা দেশে। ২০১৮ সাল থেকে কাজের ফাঁকে ছোট ছোট কনটেন্ট তৈরি করে ফেসবুক পেজে আপলোড করতেন পাভেল। দর্শকও পছন্দ করেন তার কনটেন্ট। ভিউ হয় লাখ লাখ। এ থেকে বর্তমানে মাসে লাখ টাকা আয় করছেন তিনি।
ফরহাদুল ইসলাম পাভেল নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরীবাড়ির মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে। জানা যায়, ২০১৭ সালে ফরহাদ তার বাবা নজরুল ইসলামকে হারান। তার পর থেকে পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে বেড়ে ওঠা ইলেকট্রিক মিস্ত্রি পাভেল বড় স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসতেন। তাই আঞ্চলিক ভাষায় অভিনয়ে নিজের সবটুকু উজাড় করে দেন। মানুষের ব্যাপক সাড়া পেয়ে ইলেকট্রিক মিস্ত্রির পেশা ছেড়ে কনটেন্ট তৈরিতেই এখন পুরো মনোযোগ পাভেলের। সুস্থ ধারার ভিডিও তৈরিতে বদ্ধপরিকর তিনি।
ফরহাদুল ইসলাম পাভেল বলেন, ‘আমি যখন ভিডিও করা শুরু করি তখন কল্পনাও করিনি এসব ভিডিও ভাইরাল হবে। ভিডিও থেকে এত টাকা আসবে এও জানা ছিল না। মানুষ আমাকে পাগল বলত। কিন্তু আমি থেমে থাকিনি। মানুষের বাড়িতে ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজের পাশাপাশি ভিডিও বানিয়েই যেতাম। বর্তমানে আমার ভিডিও দেখে মানুষ আমাকে পছন্দ করে দেখতে আসে। এসব আমার ভালো লাগে।’
পাভেল আরও বলেন, ‘সবার জীবনে করুণ স্মৃতি আছে। আমার জীবনেও আছে। আমি ক্লাস সিক্স থেকে এসএসসি পাস পর্যন্ত একটা শার্ট দিয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করেছি। বর্তমানে আমি সফল হলেও আমি বাড়িতে গরুর খামার করছি। আমার আয়ের টাকা দিয়ে খামার আরও বড় করছি। আমি যখন প্রথম শুরু করি তখন আমার এ কাজে অনেকে হাসাহাসি করত। এখন আমার সাফল্য দেখে সবাই উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দেয়। আমার স্বপ্ন নোয়াখালীর ভাষাকে আরও বেশি বেশি প্রচার করা। সুস্থ বিনোদনের মাধ্যমে মানুষকে আনন্দ দেওয়া।’
পাভেলের চাচাতো ভাই আহাদুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘আমাদের বাড়ির রাস্তা এখনও কাঁচা। প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমাদের বাড়ি। ২০১৭ সালে তার বাবা মারা যায়। ২০১৮ সাল থেকে খুব কষ্ট করে পাভেল ইলেকট্রিক মিস্ত্রির পেশার পাশাপাশি ভিডিও বানাতেন। আমি তাকে সব সময় উৎসাহ দিতাম। বর্তমানে পাভেল মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছে। তার সঙ্গে যারা কাজ করছেন তারাও সফল হয়েছেন। পাভেল আরও এগিয়ে যান আমরা সে প্রত্যাশা করি।’
পাভেলের সঙ্গে কাজ করেন একই উপজেলার যমজ ভাই জাহিদ হাসান ফাহিম ও জাকির হোসেন নাইম। তারা বলেন, ‘আমরা পাভেল মামার সঙ্গে ২০১৮ সাল থেকেই কাজ করি। তিনি আমাদের সবার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। আমরা দুই ভাই মাত্র এইচএসসি পাস করেছি কিন্তু তার আগেই স্বাধীনভাবে কনটেন্ট বানিয়ে টাকা ইনকাম করছি। চাকরির পেছনে না ছুটে আমরা এখন স্বাবলম্বী। অনেকে অনেক কিছু বলেছেন কিন্তু আমরা সেসবে পাত্তা দিইনি। বর্তমানে আমাদের সফলতা দেখে তারাই এখন বাহবা দিচ্ছেন।’
পাভেলের আরেক চাচাতো ভাই ইমাম উদ্দিন বুলু বলেন, ‘একসময় পাভেলকে আমরা অনেক বকাবকি করতাম ভিডিও বানায় দেখে। বর্তমানে তাকে সাহস দিই। কারণ সে গ্রামাঞ্চল থেকে ভিডিও বানিয়ে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করছে। গরুর খামার বড় করছে। বিভিন্ন সামাজিক কাজ করছে। আমি তার সর্বাত্মক সফলতা কামনা করছি।’
কবিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন বলেন, ‘পাভেল ও তার দলের সদস্যরা অনেক ভালো কাজ করছে। তারা সুস্থ বিনোদনের মাধ্যমে প্রশংসনীয় ও একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছে। তাদের দেখে এখন অন্য যুবকরাও ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। সহযোগিতার প্রয়োজন হলে উপজেলা প্রশাসন তাদের পাশে থাকব।’