ইসমাইল মাহমুদ
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ১২:৩৭ পিএম
আবহমান বাংলার শৈশব ও কৈশোরের খেলার অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল গুলতি, লাটিম, ডাংগুলি, মার্বেল, ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য নাটাই ও সুতা মাঞ্জা দেওয়া ইত্যাদি। এর মধ্যে ‘গুলতি’ ছিল প্রায় সবার হাতে হাতে। কয়েক বছর আগেও গ্রামাঞ্চলে গুলতি ছাড়া শিশুদের ভাবাই যেত না। পেয়ারা, বেল, জাম, কাঁঠালসহ নানা জাতের শক্ত গাছের সরু অনেকটা ইংরেজি ‘ওয়াই’ অক্ষরের মতো ডাল কেটে, বাইসাইকেলের টিউব ও এক টুকরো চামড়া দিয়ে তৈরি করা হতো গুলতি। বস্তুটির পুস্তকি নাম গুলতি হলেও দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে এটি গোলাইল, গুলই, বাটুল, ছটকা ইত্যাদি নামে পরিচিত ছিল। গ্রামের শিশু-কিশোররা অনেকটা সহজেই তৈরি করতে পারত গাঁয়ের খেলার অন্যতম পণ্য গুলতি। গুলতি তৈরির পর ছোট পাথর, ইটের টুকরো, মাটির তৈরি ছোট গোলাকার মার্বেল ইত্যাদি দিয়ে গুলতির গুলি ছোড়া হতো। প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের অনেক কালজয়ী গল্প-উপন্যাসেও গুলতির কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু আজ হারিয়ে যেতে বসেছে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী গুলতিটি। বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশই গুলতি দেখেনি বা এর ব্যবহার সম্পর্কে জানে না।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, গুলতির প্রথম আবিষ্কারক গ্রিকরা। প্রাচীনকালে এটি যুদ্ধের ময়দানেও শত্রু ঘায়েল করতে ব্যবহার হতো বলে জানা যায়। যুদ্ধের ময়দানে গুরুত্বপূর্ণ ছিল এ গুলতি। গুলতিতে ব্যবহার হতো পোড়ামাটির গোলাকার মার্বেল। প্রাচীনকালে মাটি কাদা করে মার্বেলের মতো গোলাকার করে রোদে শুকিয়ে বা আগুনে পুড়িয়ে তৈরি করা হতো গুলতির গুলি। পরে ছোট পাথর, মার্বেল, ইটের টুকরো ব্যবহার শুরু হয় গুলতিতে। ধীরে ধীরে যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে এ গুলতি হয়ে ওঠে গ্রামাঞ্চলের শিশু-কিশোরের খেলার অনুষঙ্গ। গ্রামাঞ্চলের শিশু-কিশোররা পাখি শিকার কাজে এবং খেলায় এটি ব্যবহার শুরু করে। বর্তমানে এটি হারিয়ে যেতে বসেছে।
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার বানারাই গ্রামের বয়োবৃদ্ধ আবদুর রহমান (৬৫) বিভিন্ন স্থানে ফুটপাতে বসে গুলতি বিক্রি করেন। তিনি জানান, ‘একসময় আমাদের দেশের গ্রামগঞ্জের শিশু-কিশোরের হাতে হাতে ছিল গুলতি। বিকালবেলা শিশু-কিশোররা গুলতি ও পকেটে মার্বেল জাতীয় বস্তু নিয়ে বেরিয়ে পড়ত গ্রামের মেঠো পথে। সারা বিকাল চলত গুলতি নিয়ে খেলা। এখন আর গুলতি দেখা যায় না। মোবাইল ফোনের যুগে গুলতি হারিয়ে যাচ্ছে। শিশু-কিশোররা এখন মোবাইলে গেম খেলায় ব্যস্ত সময় পার করছে। আমি সে গুলতিকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে এবং বর্তমান প্রজন্মের কাছে এটি পরিচিত করে তুলতে বাড়িতে তৈরি করে ফুটপাতে বসে বিক্রি করি।’