মো. নূর-ই-আলম চঞ্চল
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ১২:৩৩ পিএম
ইন্টারনেট ও ফেসবুকের যুগে যখন দেশের তরুণসমাজ বুঁদ হয়ে থাকে নেতিবাচক নেশায়, ঠিক তখনই শেরপুরে একদল তরুণ লেখক জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন ‘সাইলেন্ট বুক রিডিং’য়ের কাগজের বই পড়ার মাধ্যমে। ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ নিয়েছে শেরপুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ নামে একটি সংগঠন।
প্রায় এক মাস আগে গঠিত এ সংগঠনের সভাপতি রাহাতুল ইসলাম জানান, আমাদের লক্ষ্য সাহিত্য ছড়িয়ে দেওয়া এবং শহরের বিভিন্ন পার্কে অযাচিত আড্ডা ও অসামাজিক কাজ বন্ধ করা; যারা শহরের বিভিন্ন পার্ক ও বেড়ানোর স্থানে ইন্টারনেট ও অ্যানড্রয়েড মোবাইলের মাধ্যমে নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত তাদের ফিরিয়ে আনা এবং জ্ঞানচর্চার পথে ধাবিত করতে কাগজের বই তাদের হাতে তুলে দিয়ে সমাজ দূষণমুক্ত করা। সেই চিন্তা থেকেই গত বছর ২৭ ডিসেম্বর প্রাথমিকভাবে শেরপুর শহরের ডিসি উদ্যানে মুক্ত স্থানে ৪ শতাধিক বই নিয়ে শুরু করা হয়েছে সাইলেন্ট বুক রিডিংয়ের কার্যক্রম। বইগুলো বস্তা ভরে এনে উদ্যানের একটি বেঞ্চের ওপর সাজিয়ে রেখে দেওয়া হয় এবং সন্ধ্যার মধ্যে বইগুলো আবার উঠিয়ে নেওয়া হয়। সপ্তাহের প্রতি শুক্র ও শনিবার বিকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এ সাইলেন্ট বুক রিডিংয়ের কার্যক্রম চালানো হয়। এ সময় ডিসি উদ্যানে আগত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী বিশেষ করে তরুণসমাজ এ সাইলেন্ট বুক রিডিংয়ের উদ্যোগ স্বাগত জানিয়েছেন।
শুরু হওয়ার পর থেকে বেশ কয়েকজন পাঠক বই নিয়ে আশপাশের বিভিন্ন বসার স্থানে বসে বইগুলো পড়ে আবার ফেরত দিয়েছেন। গত এক মাসে ২ শতাধিক পাঠক এ উদ্যানে এসে বই পড়েছেন। আবার আমাদের সংগঠনের সদস্য এবং সদস্য ছাড়া প্রায় ৬০ জন পাঠক বাড়িতে পড়ার জন্য বই নিয়ে গেছেন। এসব বই বাড়িতে পড়ে কেউ কেউ ফেরত দিয়ে গেছেন। আগামীতে তারা শহরের অন্যান্য পার্ক এবং বেড়ানোর স্পটে এ সাইলেন্ট বুক রিডিং কার্যক্রম চালু করার চিন্তাভাবনা করছেন।
ডিসি উদ্যানে বেড়াতে আসা শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাইমা জাহান ছোঁয়া জানায়, বই পড়তে আমার খুব ভালো লাগে। বাসায় পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি প্রচুর বই পড়ি। আমি ইতোমধ্যে এখান থেকে বেশ কিছু বই বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পড়ে আবার ফেরত দিয়েছি। আজও একটি বই নিলাম। এর আগে যেসব বই নিয়ে পড়েছি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মায়া মৃগ, কোথাও কেউ নেই এবং কৃষ্ণপক্ষ।
শেরপুর সরকারি কলেজের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী রোহান জানান, উদ্যোগটি চমৎকার। আমি লাইব্রেরি থেকে এবং কলেজের লাইব্রেরি থেকেও বই সংগ্রহ করে বাসায় নিয়ে পড়ে থাকি। এখানে মাঝে মাঝে বেড়াতে আসি এবং বেড়াতে এসে দেখলাম এখানে বাড়িতে নিয়ে বই পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে তাই আমি আজ দুটি বই নিলাম। ইসলামী জ্ঞানভিত্তিক বই দুটি হলো ‘যে আফসোস রয়েই যাবে’ ও ‘গল্পে আঁকা মহীয়সী খাদিজা’।
এ সাইলেন্ট বুক রিডিংয়ের সভাপতি রাহাতুল ইসলাম এবং সহসভাপতি সাদেকা তাবাসসুম নিয়মিতভাবে এ বুক রিডিংয়ের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে সংগঠনের অন্য সদস্যাও এ কাজ করে যাবেন বলে সংগঠনসূত্রে জানা গেছে।
শেরপুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদের সভাপতি রাহাতুল ইসলাম জানান, প্রতি সপ্তাহে দুবার বইগুলো আনা-নেওয়া একটু সমস্যা বিধায় আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে এ উদ্যানে একটি স্থায়ী বুক কর্নার বা বুক শেলফ চেয়েছি। এ শেলফ হলে বইগুলো টানাহেঁচড়া করার ঝামেলা থাকবে না।