রাফিয়া জান্নাত
প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৪৪ এএম
অলংকরণ : তৃদীব সরকার, অষ্টম শ্রেণি, মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা
পহেলা বৈশাখ। চারদিকে উৎসবের আমেজ, পাখির কূজন আর এক ধরনের অদ্ভুত ভালো লাগা নিয়ে শুরু হলো সকাল। শহরের কোলাহল ছেড়ে আমি আর আমার দাদি গেলাম গ্রামের বাড়িতে, যেখানে প্রতি বছর বড় করে বৈশাখী মেলা বসে।
ছোটবেলায় দাদির হাত ধরে যে মেলায় যেতাম, সেসব স্মৃতি এবার ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলাম। সকালে লাল-সাদা জামা আর মাথায় গাজরা বেঁধে মেলার মাঠে গেলাম দাদির সঙ্গে। মেলার মাঠে পা দিতেই প্রথমে চোখে পড়ল আলপনার সারি, হাতে আঁকা নানা ডিজাইনের প্যাঁচানো পথ। পাশে তালপাখা, মাটির ব্যাংক, বেতের হাতপাখা আর কাঠের খেলনার দোকান। মাঠজুড়ে লাল-সাদা কাপড়ে সাজানো দোকান, ঢাকের বাদ্যি, পান্তা-ইলিশের ঘ্রাণ সবকিছু যেন এক রঙিন কাব্য। দাদি একটা কাঠের ঝাঁপিতে বসে থাকা বুড়ো হকারের থেকে কিনে দিলেন আমার ছোটবেলার প্রিয় বাঁশির সেটটা। আমি হেসে বললাম, ‘এ বাঁশির সুরেই না তোমার গল্প শুরু হয়েছিল, দাদি!’
মেলায় দেখলাম বাউলদের গান, লাঠি খেলা, পুতুলনাচ। একপাশে শিশুদের জন্য নাগরদোলা, আরেক পাশে মাটির তৈরি হাঁড়ি, কুলা আর হাতের কাজ করা শাড়ি বিক্রি হচ্ছিল। আমি একটা সাদা-লাল কাঠের চুড়ি কিনে নিলাম দাদির জন্য। তিনি চোখে পানি নিয়ে বললেন, ‘এটাই বৈশাখ, রঙ, মাটি আর মায়ার মেলা।’
আমরা পান্তা ভাত আর ইলিশ খেলাম একটা পাতা দিয়ে সাজানো প্যান্ডেলে বসে। তারপর বাড়ির জন্য আমরা মাটির হাঁড়িতে করে মুড়ি, মুড়কি, বাতাসা, জিলাপি এগুলো নিলাম।
ফেরার পথে মনে হচ্ছিল মনটা রঙিন ঘুড়ির মতো হালকা আনন্দে ভরা আর নতুন বছরের আশায় জ্বলজ্বল করছে। বৈশাখী মেলা শুধু কেনাকাটা আর খাওয়া না, এটা একটা সম্পর্ক, সংস্কৃতি আর শেকড়ের টান। শহরে থেকে যা হারিয়ে যায়, গ্রামে এসে সেটা আবার নতুন করে পাওয়া যায়।
নবম শ্রেণি, সরকারি প্রমথনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী