রওনক জাহান পুষ্প
প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:৩১ পিএম
ঈদ, পহেলা বৈশাখ বা অন্য যেকোনো উপলক্ষেই বাঙালি নারীর মন আটকায় গিয়ে শখের শাড়িতে। পছন্দমতো একটি সুন্দর শাড়ি মেঘ জমে ওঠা মুখেও হাসি এনে দেয়। কিন্তু কেনা পর্যন্তই শেষ নয়, পছন্দের শাড়িটি যত্ন করে না রাখলে নষ্ট হয়ে যাওয়া খুব স্বাভাবিক। তাই আজকের আয়োজনে থাকছে কীভাবে শখের শাড়িটি যত্ন করে রাখতে হবে তা নিয়ে।
জামদানি
ঢাকার বিখ্যাত জামদানি অনেক নারীরই প্রিয়। বেশিরভাগ সময়ই শুধু বিশেষ উপলক্ষে বের করা হয় প্রিয় জামদানি। কিন্তু জামদানি অনেক সেনসেটিভ ধরনের শাড়ি, রাখতেও হয় খুব সাবধানে। শখের জামদানিটা ভালো রাখতে একে ভাঁজ করে না রেখে জামদানি রোলার বা হ্যাঙারে ঝুলিয়ে রাখা ভালো। জামদানিতে দাগ লাগলে নিজে নিজে ধোয়ার চেষ্টা না করে লন্ড্রিতে ড্রাইওয়াশ করিয়ে নিতে হবে। জামদানির কোথাও ফেঁসে গেলে বা সুতা সরে গেলে দক্ষ তাঁতির কাছে কাটাওয়াশ করিয়ে নিলে শাড়ি একদম নতুনের মতো হয়ে যাবে।
মসলিন
বাংলার নাম দূরদূরান্তে ছড়িয়েছে যে কাপড়, তার নাম মসলিন। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আমাদের শত শত বছরের ঐতিহ্য। সে মানের মসলিন এখন পাওয়া না গেলেও মসলিনের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট বিভিন্ন দামের মধ্যে এখন পাওয়া যায়, সেমি মসলিনও রয়েছে হাতের নাগালে। মসলিন খুব সূক্ষ্ম সুতায় বোনা, তাই এ শাড়ির চাই আলাদা যত্ন। মসলিন সুতা সেদ্ধ করা হয় না বলে রঙ পাকা হয় না, তাই ভারী ওয়াশে রঙ হারিয়ে যেতে পারে। ড্রাইওয়াশ মসলিন শাড়ির জন্য সবচেয়ে ভালো। ওপরে ভারী কাপড় দিয়ে খুব হালকাভাবে মসলিন ইস্তিরি করতে হয়, জামদানির মতো রোলারে পেঁচিয়ে রাখা মসলিনের জন্য সবচেয়ে ভালো।
বেনারসি
সেই আদিকাল থেকেই বাঙালি বিয়ের অপরিহার্য অঙ্গ ছিল বেনারসি। টুকটুকে লাল বেনারসি ছাড়া নতুন বউয়ের সাজই যেন জমত না! কালের পরিক্রমায় শুধু বিয়ে ছাড়াও ঈদ, পূজা বা বিশেষ উপলক্ষে রঙবেরঙের বেনারসির চল এখনও আছে। বেনারসি শাড়ির সৌন্দর্য অটুট রাখতে এর সঙ্গে অন্য শাড়ি না রাখাই ভালো। বেনারসির সুতা অন্য কাপড়ে ঘষা লাগলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ঘষা লাগা এড়াতে বেনারসিতে হালকা কাপড়ের ফলস লাগিয়ে নিতে পারেন। এ শাড়িও লন্ড্রিতে ড্রাই ক্লিন করতে হবে। সুতার উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে গেলে লন্ড্রিতে পলিশ করিয়ে নিলে আবার আগের মতো হয়ে যাবে।
সিল্ক
আভিজাত্যের আরেক নাম চিকন রেশমি সুতার তৈরি সিল্ক শাড়ি। বিশেষ অনুষ্ঠানে জমকালো সাজে সিল্কই থাকে সবার প্রথম পছন্দ। তবে সিল্কের শাড়ি ভালো রাখতে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতেই হবে। সিল্কের শাড়ি স্যাঁতসেঁতে বা অন্ধকার কোনায় রাখা যাবে না, এ শাড়ি খুব দ্রুত পোকা ধরে ফেলে। ন্যাপথলিনের বদলে দারুচিনি, লবঙ্গ, শুকনো নিমপাতা পোকা তাড়ানোর এসব ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করলে ভালো। ঘরে না ধোয়ার চেষ্টা করাই ভালো, যদি ধুতেই হয় তাহলে হালকা শ্যাম্পু মেশানো পানিতে আলতো করে ধুয়ে ছায়ায় রেখে শুকাতে হবে। হালকা ভেজা থাকতেই উল্টো দিকে কাপড় বিছিয়ে ইস্তিরি করতে হবে একদম কম তাপে।
সুতি ও হাফসিল্ক
সুতি ও হাফসিল্ক শাড়ি বর্তমানে জনপ্রিয়তায় বেশ এগিয়ে রয়েছে। পরা সহজ, কোনো উপলক্ষ ছাড়াও পরা যায়, দাম মোটামুটি সবার সামর্থ্যের মধ্যেই। সুতি ও হাফসিল্ক শাড়ির যত্ন নেওয়া তুলনামূলক সহজ। বাসায় হালকা শ্যাম্পু ওয়াশ করে বাতাসে মেলে শাড়ি শুকিয়ে রাখা যায়। শুকানোর পর হালকাভাবে ইস্তিরি করে আলমারিতে রেখে দেওয়া ভালো। হালকা মাড় বা অ্যারারুট দিলে সুতি শাড়ি অনেক দিন নতুনের মতো থাকে।
কিছু সাধারণ টিপস
১. সব ধরনের শাড়িই ব্যবহারের আগে পাড়ে ফলস লাগিয়ে নেওয়া ভালো। শাড়ির পাড় খুব সেনসেটিভ, জুতা লাগলে সহজেই ছিঁড়ে যায়। ফলস লাগানো থাকলে এটা এড়ানো যাবে।
২. সরাসরি রোদে কোনো শাড়িই শুকাতে দেওয়া যাবে না, এতে শাড়ির রঙ জ্বলে যায়। সূর্যের আলো আসে কিন্তু কড়া রোদ নেই, হালকা বাতাস আছে এমন জায়গায় শাড়ি শুকাতে হবে।
৩. শাড়ি প্রতি তিন থেকে ছয় মাস পরপর নামিয়ে হালকা রোদে দিয়ে ভাঁজ উল্টেপাল্টে রাখতে হবে, না হলে আর্দ্রতা জমে ছত্রাক পড়ে যাওয়া ও ভাঁজে ভাঁজে ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৪. শাড়িতে সরাসরি পারফিউম ব্যবহার করা উচিত নয়, এতে শাড়িতে দাগ পড়ে ও সুতার ক্ষতি হয়।
৫. পলিথিন বা প্লাস্টিকের ব্যাগে শাড়ি রাখলে আর্দ্রতা জমে যেতে পারে। এজন্য কটন কাপড় অথবা পাটের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার করা ভালো।
মডেল : মম রহমান