গোলাম কিবরিয়া
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:৩১ পিএম
ড. মারুফ সুলতানা
নারীদেরকে ঘরে ও বাইরে প্রতিদিন হাজারটা বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তবুও তারা মাথা উঁচু করে উঠে দাঁড়াতে জানে। সমাজে নিজের অবস্থান তৈরী করে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে পিছপা হয় না একজন সাহসী নারী। প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে সম্প্রতি জেসিআই ঢাকা মেট্রো 'উইমেন ট্রান্সফর্মিং বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫'- এ ভূষিত হয়েছেন ড. মারুফ সুলতানা (বিজ্ঞানী)। ক্যারিয়ার ও ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন গোলাম কিবরিয়া
গবেষণায় যুক্ত হওয়ার ভাবনা ও পরিকল্পনা
গবেষণার প্রতি আগ্রহ আমার শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই ছিল। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জগৎ আমাকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করেছিল। বিশেষ করে কৃষি বিজ্ঞান ও উদ্ভিদ গবেষণার নতুন নতুন দিক আমাকে গবেষণার পথে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছে। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নকালীন গবেষণায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত হই এবং পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার জন্য গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাই।
বাংলাদেশে কৃষি গবেষণার সম্ভাবনা ও বর্তমান গবেষণা ক্ষেত্র
বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ হওয়ায় কৃষি গবেষণার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা ও উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আমি বর্তমানে বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের ফলে গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমন পরিমাপ, সার ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করছি। আমাদের গবেষণার লক্ষ্য হলো টেকসই কৃষি উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
নারীদের গবেষণায় অংশগ্রহণ ও প্রতিবন্ধকতা
নারীরা বিভিন্ন পেশায় এগিয়ে গেলেও গবেষণা ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ এখনও তুলনামূলক কম। পারিবারিক বাধা, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, সুযোগের অভাব ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা অনেক নারীকে গবেষণার পথে নিরুৎসাহিত করে। তবে সময়ের সঙ্গে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
অনুপ্রেরণার উৎস
আমার গবেষণার পথে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন আমার শিক্ষক ও পরিবার। একাডেমিক গুরুদের গবেষণা নিয়ে উৎসাহ, দিকনির্দেশনা এবং তাদের সাফল্যের গল্প আমাকে সবসময় অনুপ্রাণিত করেছে। পাশাপাশি, আমার পরিবার সবসময় পাশে থেকেছে, যা আমাকে নিরবচ্ছিন্নভাবে গবেষণায় মনোনিবেশ করতে সাহায্য করেছে।
জেসিআই ঢাকা মেট্রো থেকে সম্মাননা পাওয়ার অনুভূতি
এই সম্মাননা আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের এবং অনুপ্রেরণার। এটি শুধু আমার নয়, বরং দেশের গবেষণা ক্ষেত্রের উন্নয়নে নিয়োজিত সকল নারীর প্রেরণার উৎস। এই স্বীকৃতি আমাকে আরও দায়িত্বশীল করে তুলেছে এবং ভবিষ্যতে আরও উন্নত গবেষণায় অবদান রাখার প্রেরণা দিয়েছে।
গবেষণায় ক্যারিয়ার গড়তে ইচ্ছুকদের পরামর্শ
গবেষণার প্রতি আগ্রহ থাকা চাই এবং অধ্যবসায় থাকতে হবে। ধৈর্য, জিজ্ঞাসু মনোভাব ও কঠোর পরিশ্রম ছাড়া গবেষণায় সফল হওয়া সম্ভব নয়। নতুন ধারণা নিয়ে চিন্তা করা, প্রশ্ন করা এবং সঠিক তথ্য বিশ্লেষণ করার দক্ষতা অর্জন করা জরুরি। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক গবেষণার সঙ্গে যুক্ত থাকা এবং প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যক্তিগত অর্জন ও স্বীকৃতি
গবেষণা ক্ষেত্রে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছি, যা আমার জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক। গবেষণায় অবদানের জন্য বেশ কিছু প্রকাশনা ও সম্মাননা পেয়েছি, যা আমাকে আরও অনুপ্রাণিত করেছে।
ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ও স্বপ্ন
আমার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য হলো কৃষি গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য কার্যকর সমাধান প্রদান করা। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর উপায় খুঁজে বের করাই আমার গবেষণার মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি, আগামী দিনে আরও বেশি নারী গবেষক তৈরি করতে কাজ করতে চাই, যাতে তারা গবেষণার মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।
ড. মারুফা সুলতানা পড়াশোনা করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ। তিনি ২০২১ সালে বিশ্ব ব্যাংকের স্কলারশিপ নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। ব্যাক্তিগত জীবনে ড. মারুফা সুলতানা এক পুত্র সন্তানের জননী। বর্তমানে তিনি মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। অর্গানিক কৃষি, নিরাপদ খাদ্য, কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার, গ্রীনহাউজ গ্যাস ইমিশন কমানোসহ, টেকসই কৃষি পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি ৬টি আন্তর্জাতিক এবং ১৪টি দেশীয় জার্নালে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। ট্রিটমেন্ট কমিউনিটি ফাউন্ডেশন নামে একটি অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ট্রিটমেন্ট কমিউনিটি অনলাইন পেজের এডমিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। করোনাকালীন সময়ে বিনা মূল্যে অনলাইনে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে এই গ্রুপ থেকে। এই গ্রুপের মাধ্যমে গরীব দূস্থদের মাঝে খাবার, শীতবস্ত্র বিতরণ, চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। এছাড়া তিনি নারী বিজ্ঞানী সমিতির একজন সক্রিয় সদস্য।