নাহিদুল ইসলাম গাজী
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ১২:৫৮ পিএম
যার হাত ধরে একটি ক্যাম্পাসের ছাত্র ও শিক্ষকের সঙ্গে একটি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের অফলাইন ও অনলাইন যোগাযোগ তৈরি হয় তিনিই ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসাডর। বাংলাদেশে ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসাডরের উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র হচ্ছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো।
ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসাডরের ইতিহাস বেশ পুরোনো। ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসাডররা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব এবং সম্ভাব্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ স্থাপন করেন। একজন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, পাশাপাশি তিনি একজন ক্যাম্পাস প্রতিনিধি। একাডেমিক ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন ভাইভা, প্রাকটিক্যাল সবকিছুই ক্যাম্পাসের অন্য সব শিক্ষার্থীর মতোই ঠিক রাখছেন। আবার পূর্ণভাবে পেশাদারিও বজায় রেখে চলছে তার সংগঠনের ক্যাম্পাস প্রতিনিধিত্ব। এটা ততটা সহজ ব্যাপার নয়।
ক্যাম্পাস প্রতিনিধিত্ব করা এমন একটি পেশা যেখানে অ্যাম্বাসাডর সংগঠনের একজন প্রবর্তক হিসেবে প্রচার, ইভেন্ট, সংগঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, কমিউনিটি বিল্ডআপ, ব্র্যান্ডিংসহ সব এক হাতেই সামলাতে হয়। সেখানে ভুল হওয়ার সুযোগ খুবই সীমিত। বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একজন ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসাডরের ভূমিকা একটি সংগঠনের পূর্ণ সাংগঠনিক সম্পাদকের চেয়ে কোনো অংশে কম হয় না। এজন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসাডর হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করেন তারা অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকবেন এটাই স্বাভাবিক।
এক্সট্রা কারিকুলাম
একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর নিজেকে গড়ে তোলার জন্য তার সামনে থাকে অবারিত সুযোগ। জেগে ওঠে সুপ্ত প্রেরণা। স্কুল-কলেজের সীমাবদ্ধ গণ্ডি ভেঙে আসে মুক্তচিন্তায় নিজেকে বিকশিত করার অফুরন্ত সুযোগ। সৃজনশীলতা ও দূরদর্শিতা শিক্ষার্থীকে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি ক্যাম্পাসে নিজেদের এক্সট্রা কারিকুলাম তৈরি করে দেয়; যা শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবনে বেশ সহায়ক ভূমিকা রাখে। ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসাডর একজন শিক্ষার্থীর জন্য একটি চমৎকার এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটি। তাই ক্যাম্পাসে অন্যান্য সৃজনশীলতা ও দূরদর্শিতায় অংশ নেওয়ার মতো শিক্ষার্থীদের উচিত ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসাডর হিসেবে যুক্ত হওয়া।
কথা বলার দক্ষতা ও নেতৃত্ব
আমরা সবাই পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে অনেক কথা বলে থাকি। কিন্তু বেশি মানুষ বা কোনো একটি সেমিনারে কথা বলা বা নিজেকে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে বেশ দ্বিধায় পড়ে যাই। মুখে জড়তা কাজ করে। একজন ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসাডরকে নিয়মিতই তার ক্যাম্পাসে ইভেন্ট, ওয়ার্কশপ, কমিউনিটি বিল্ডআপ ও ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য মিশতে হয় সকল পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে। এ সময় তাদের কথা শোনা ও বোঝানোর দায়িত্ব থাকে অ্যাম্বাসাডরের। এভাবেই একজন ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসাডরের তৈরি হয় কথা বলার দক্ষতা। একজন ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসাডর সব সময় বিভিন্ন ক্লাব, অর্গানাইজেশনের সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে নেতৃত্ব সম্পর্কীয় গুণাবলি চর্চার সুযোগ পেয়ে যান খুব অনায়াসেই। বিভিন্ন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসাডররা নিজেদের মধ্যে লিডারশিপ দক্ষতা ফুটিয়ে তুলতে পারেন। এর মধ্য দিয়েই একজন ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসাডর হয়ে ওঠেন সুশৃঙ্খল বাকপটু।
মানিয়ে চলার গুণাবলি
ক্যাম্পাস প্রতিনিধিত্ব এমন একটা কাজ, যেখানে নিজেকে গুটিয়ে রাখার সুযোগ নেই। একজন ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসাডরকে নানা চিন্তা-চেতনার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশতে হয়। কথা বলতে হয়। সর্বোপরি ক্যাম্পাসের সব শিক্ষার্থীকে অনেক কাছ থেকে জানতে হয়। ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসাডর হিসেবে এর বাইরে চলার কোনো সুযোগ নেই। কোনো কোনো সময় নিজের চিন্তার বিপরীত মানুষের সঙ্গেও মানিয়ে চলতে হয়। ক্যাম্পাসে কাজ করার সুবাদে একজন অ্যাম্বাসাডরের মধ্যে এ মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়।