রোজী আরেফিন
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৫ ১৪:০৮ পিএম
পোশাক যেন ঈদ আনন্দ উদ্যাপনে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় সেজন্য আগে থেকেই কিছু পরিকল্পনা করে রাখা ভালো। ঈদের দিন পরিবারের সবাই কেমন পোশাক পরলে স্বাচ্ছন্দ্য পাবেন তা নিয়ে লিখেছেন রোজী আরেফিন
ঈদ মানেই নতুন পোশাক, সাজগোজ আর আনন্দঘন মুহূর্ত। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা মুসলিম সম্প্রদায়ের দুটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এ উৎসবগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো নতুন পোশাক পরিধান। ঈদের সকালে নামাজ থেকে শুরু করে সারা দিন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ, ছবি তোলা কিংবা রাতের পার্টি সব মিলিয়ে প্রতিটি মুহূর্তে নিজেকে স্টাইলিশভাবে উপস্থাপন করতে সবাই চায়। আর এজন্য পোশাক নির্বাচন হওয়া উচিত এমন, যা একই সঙ্গে ট্রেন্ডি আর আরামদায়ক হয়। ঈদের সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পোশাক নির্বাচনের বিস্তারিত নিয়েই আজকের আলোচনা।
ঈদের সকালে সবার পোশাক
ঈদের সকালের পোশাক নির্বাচনে আরাম ও সৌন্দর্য দুটোরই সমন্বয় থাকা জরুরি। শিশুদের জন্য ছেলেদের হালকা নীল বা সাদা রঙের সুতি পাঞ্জাবির সঙ্গে চুড়িদার প্যান্ট বা পাজামা বেশ মানানসই। কার্টুন প্রিন্ট বা ছোট ফুলের নকশা থাকলে তাদের দেখতে ভালো লাগবে। মেয়েদের প্যাসটেল পিঙ্ক বা ল্যাভেন্ডার সালোয়ার-কামিজ, ফ্রকের নিচে ফ্রিল্ড স্কার্ট ও মাথায় রিবন বাঁধতে পারেন। তরুণরা হালকা ক্রিম বা মিন্ট গ্রিন রঙের স্লিম ফিট পাঞ্জাবি পরতে পারেন, যাতে জ্যামিতিক প্যাটার্ন বা সূক্ষ্ম জরির কাজ থাকবে। তরুণীদের জন্য ফ্লোরাল প্রিন্টেড সালোয়ার-কামিজ বা লং কুর্তি, ফেব্রিক হতে পারে সুতি-সিল্ক ব্লেন্ড। মধ্যবয়সি পুরুষদের জন্য লিনেন পাঞ্জাবি (সাদা/হালকা নীল) ও পাজামা, আর মহিলাদের জন্য জর্জেট শাড়ি বা কটন সালোয়ার-কামিজ, রঙে প্যাসটেল গ্রিন বা সাদা-গোলাপি কম্বিনেশন বেশ মানিয়ে যাবে। বয়স্কদের জন্য সুতি বা খাদির পাঞ্জাবি-পায়জামা (সাদা/হালকা বেগুনি), আর মহিলাদের জন্য ফুলহাতা লং কুর্তা ও পালাজো, রঙে ক্রিম বা মিষ্টি নীল মানানসই। যেহেতু সকালের দিকে ঘরের কাজ থাকে, নামাজে যেতে হয়, শিশুরাও বেশ ছোটাছুটি করে তাই সকালের জন্য হালকা রঙ ও নরম ফেব্রিক বেছে নিন। শিশুদের পোশাক যেন টাইট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
দুপুরের পোশাক
ঈদের দুপুরের পোশাকে কিছুটা বৈচিত্র্য আনতে পারেন। ছেলেশিশুদের জন্য কমলা বা রয়্যাল ব্লু পাঞ্জাবি বেছে নেওয়া যায়, এতে ব্লক বাটিক প্রিন্ট ও সুতি-সিল্ক ফেব্রিক হলে ভালো। মেয়েশিশুদের সালোয়ার-কামিজে মিরর ওয়ার্ক বা হেভি এমব্রয়ডারি থাকলে আকর্ষণীয় দেখাবে, সঙ্গে টমেটো রেড বা এমারেল্ড গ্রিন রঙ হলে দারুণ হবে। তরুণদের জন্য হাফ-সিল্ক পাঞ্জাবি (গাঢ় নীল/মেরুন), ডিজাইনে ধ্রুপদি পিচকারি নকশা, আর তরুণীদের জন্য মসলিন শাড়ি বা অ্যানার্কালি গাউন, রঙে রয়্যাল ব্লু বা গোল্ডেন ইয়েলো ভালো পছন্দ। মধ্যবয়সি পুরুষের জন্য সিল্ক-কটন পাঞ্জাবি (বাদামি/জলপাই) ও ফিটেড পাজামা, আর মহিলাদের জন্য বেনারসি শাড়ি, ব্লাউজে জরি পাড় ও ম্যাচিং চুড়ি বেছে নেওয়া ভালো। বয়স্কদের জন্য পুরুষদের গাঢ় নীল বা অলিভ গ্রিন পাঞ্জাবি (সিল্ক-কটন ব্লেন্ড) আর মহিলাদের জন্য মসলিন শাড়ি, পাড়ে বেনারসি বর্ডার ও মুক্তার হার পরা মানানসই। উজ্জ্বল রঙের সঙ্গে মেটালিক অ্যাকসেসরিজ (চুড়ি, কোলার পিন) ব্যবহার করলে সাজ আরও আকর্ষণীয় হয়।
রাতের পোশাক
রাতের পার্টি বা গেট টুগেদারের পোশাকে যোগ করুন এক্সট্রা গ্ল্যামার। শিশুদের জন্য ছেলেদের নেভি ব্লু শেরওয়ানি, গলায় স্কার্ফ ও জরি স্ট্রাইপ থাকলে বেশ রাজকীয় লুক আসে। মেয়েদের জন্য লেহেঙ্গা (সিল্ক/নেট), যাতে হেভি সুতোর কাজ থাকে, তা হবে দারুণ। তরুণদের জন্য ব্ল্যাক-গোল্ড শেরওয়ানি বা ভেলভেট জ্যাকেটেড পাঞ্জাবি খুব মানানসই, আর তরুণীদের জন্য লেহেঙ্গা বা মিরর ওয়ার্ক শাড়ি, রঙে ডিপ মেরুন/গোল্ড, সঙ্গে গাজরা ও ক্লাচ ব্যাগে সাজ পূর্ণ হয়। মধ্যবয়সি পুরুষের জন্য মেরুন শেরওয়ানি (বেনারসি সিল্ক), নিচে পাজামা ও নাগরা জুতো, আর মহিলাদের জন্য কারুকাজ-জম্পেশ শাড়ি বা লেহেঙ্গা, ব্লাউজে হেভি জরি ওয়ার্ক ভালো মানায়। বয়স্কদের জন্য পুরুষের নেভি ব্লু বা গাঢ় সবুজ শেরওয়ানি (হালকা সিল্ক), আর মহিলাদের জন্য জামদানি শাড়ি, গাঢ় সোনালি রঙ ও টিস্যু শাল পরা মানানসই। গাঢ় রঙের সঙ্গে মেটালিক জুয়েলারি (সিলভার/গোল্ড) মিলিয়ে নিন।
পরিবারের সব সদস্যের জন্য আপনি চাইলে ঈদের প্রতিটি সময়ের জন্য আলাদা রঙের থিম ফিক্স করতে পারেন। যেমন সকালে সাদা-নীল, দুপুরে লাল-সোনালি, রাতে গোল্ড-মেরুন। ফেব্রিকের প্রাধান্য দিন সকালে সুতি/লিনেন, দুপুরে সিল্ক-কটন, রাতে সিল্ক/ভেলভেট। আবার নিউলি ম্যারিড কাপলরা চাইলে ম্যাচিং কালারের ড্রেস, যেমন একই কালার বা প্রিন্টের পাঞ্জাবি, শাড়ি, কুর্তি ফিক্স করতে পারেন। অ্যাকসেসরিজ হিসেবে শিশুদের রঙিন মোজা, তরুণীদের গাজরা, বয়স্কদের প্লেইন শাড়ির সঙ্গে মুক্তার হার ব্যবহার করে সাজে আনুন আলাদা সৌন্দর্য।