× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জুতসই জুতো

আরফাতুন নাবিলা

প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১২:৫৮ পিএম

জুতসই জুতো

জুতসই জুতো

জুতা যদি আরামদায়ক না হয়, তাহলে যত মূল্য দিয়েই কেনা হোক না কেন সেটা ঘরেই পড়ে থাকবে। কোন জুতার কেমন আরাম, বর্তমানে কী ট্রেন্ড চলছে, কী ধরনের জুতার চাহিদা বেশি এসব নিয়েই আজকের আয়োজন। লিখেছেন আরফাতুন নাবিলা- 

‘বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য যে জামদানি শাড়িটা পরব বলে ভেবেছি তার সঙ্গে কোন জুতা মানাবে? অফিসে আজ মিটিং আছে, ফরমাল ড্রেসের সঙ্গে কোন জুতা পরব? যাচ্ছি পিকনিকে। হিল পরে কি সারা দিন কাটাতে পারব? আমি তো প্রায়ই ট্যুরে যাই। জুতা কিনব কোত্থেকে সেটাই বুঝতে পারছি না!’ যে কটা ঘটনা বললাম, বিশ্বাস করুন জুতা নিয়ে জটিলতা এর চেয়ে বেশি বই কম নয়! কারণ জুতা যদি জুতসই না হয়, তাহলে জুতার নকশায় আর তাকাতে ইচ্ছা করে না, ভয় হয় এই বুঝি ডাক্তারের কাছে যেতে হলো! পোশাক যেমন ফ্যাশনজগতে বেশ বড় পরিসরে জায়গা নিয়ে রেখেছে, জুতাও কিন্তু তার চেয়ে কম কিছু নয়। বলা যায়, ফ্যাশন যত দ্রুত পরিসরে বিস্তার করছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নতুন নতুন ডিজাইনের জুতার ব্যবহার। 

ছবি - লা মোড 

ট্রেন্ডি জুতা 

যে জুতা পরে আপনি অফিসে যাচ্ছেন সেটা পরে কোনো অনুষ্ঠানে যাবেন না, আবার যেটা অনুষ্ঠানে পরছেন সেটা নিশ্চয়ই কোনো মিটিংয়ে পরবেন না। জায়গাভেদে এভাবেই প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে জুতার। সেই সঙ্গে নকশায় আসছে পরিবর্তন।

বর্তমানে মেয়েদের কাছে মিড হিল স্যান্ডেল বেশ জনপ্রিয়। হিলের উচ্চতা খুব বেশি নয়, আবার সামনের দিকটা অপেক্ষাকৃত নিচুও নয়। পায়ের জন্য আরামদায়কই বলা যায়। সেইসঙ্গে পাম্প সু, ম্যুল স্যান্ডেল, হাই হিল স্যান্ডেল, স্লিপার, নাগরা, ক্যানভাস, লোফার, ওয়েজ হিল, স্পোর্টস সু, ক্রস স্ট্র্যাপ স্যান্ডেল, ব্লক হিল, রানিং সু, প্ল্যাটফর্ম হিলও সমানভাবে জনপ্রিয়।

এসব জুতা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের লেদার। ফক্স লেদার বেশ ভালো সাড়া ফেলেছে। আরামদায়ক বলে এ লেদার দিয়ে তৈরি জুতার চাহিদাও ভালো। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় একটি জুতার ব্র্যান্ড লা মোড। তারা বর্তমানে মহিলাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ট্রেন্ডি ও আরামদায়ক জুতা নিয়ে কাজ করছে। বিশেষভাবে আধুনিক ডিজাইন এবং ক্লাসিক স্টাইলের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে কাজ করছে, যেন প্রতিটি মহিলার ফ্যাশন স্টেটমেন্ট এবং কমফোর্টের চাহিদা পূর্ণ হয়। এর মধ্যে রয়েছে স্লিপ-অন, ফ্ল্যাটস, স্যান্ডেল, হিলস এবং আরও অনেক কিছু। এ রমজানে লা মোড নতুন কিছু ইউনিক ডিজাইন নিয়ে এসেছে, যা মহিলাদের জন্য ফ্যাশনেবল এবং আরামদায়ক। লা মোডের চেয়ারপারসন ফাহমিদা ইসলাম বলেন, ‘গ্রাহকের কাছ থেকে বর্তমানে যে ধরনের জুতার চাহিদা দেখা যাচ্ছে, তা বেশ বৈচিত্র্যময়। আধুনিক ডিজাইন, আরামদায়ক ফিট এবং ট্রেন্ডি লুকের প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি। বিশেষত রমজান ও ঈদে ফ্যাশনেবল ও আরামদায়ক জুতাই গ্রাহকের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। স্লিপ-অন, ফ্ল্যাটস, স্যান্ডেল, স্টাইলিশ হিলস এবং পাম্পের মতো বিভিন্ন ধরনের জুতা এখন খুবই জনপ্রিয়। পাশাপাশি ক্যাজুয়াল ও অফিস-ড্রেস জুতা, যা দিনের বেলা ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত, সেগুলোও বেশ চাহিদায় রয়েছে।’

ছবি - লা মোড 

এবার ঈদ উপলক্ষে লা মোড বিশেষ কিছু নতুন ডিজাইন নিয়ে এসেছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- 

শাইনি স্যান্ডেল ও হিলস : যেকোনো পোশাকের সঙ্গে ম্যাচ করতে পারবে এবং ইফতার পার্টি বা ঈদ সেলিব্রেশনে পরা যাবে।

কমফোর্ট ফ্ল্যাটস : যারা আরামদায়ক এবং স্টাইলিশ দেখতে চান, তাদের জন্য একটি আদর্শ চয়েস হবে।

কাস্টমাইজড স্লিপ-অন : উত্সবের দিনগুলোতে ফ্যাশনেবল এবং আরামদায়ক হতে যারা চান, তাদের জন্য এসব ডিজাইন আনা হচ্ছে।

ক্লাসিক পাম্পস : ঈদের সময় ফরমাল বা সেমিফরমাল আউটফিটের সঙ্গে একদম মানানসই।

এ ছাড়া লা মোড কিছু এক্সক্লুসিভ কালেকশনও নিয়ে এসেছে, যা একদম ঈদের ফ্যাশনের সঙ্গে মানানসই। এর মধ্যে বিভিন্ন রঙ, ম্যাটেরিয়াল এবং স্টাইলের সংমিশ্রণ রয়েছে, যা গ্রাহকের ঈদ আরও স্মরণীয় করে তুলবে।

বর্তমানে ইমপোর্টেড আর্টিফিশিয়াল লেদারের চাহিদাও দিনদিন বাড়ছে। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় আরও একটি জুতার ব্র্যান্ড হারমিজনের স্বত্বাধিকারী রিফাতুল হক বলেন, ‘হারমিজনে আমরা মূলত কাজ করি ইমপোর্টেড আর্টিফিশিয়াল লেদার এবং সম্পূর্ণ হাতে তৈরি ডিজাইন নিয়ে। শুরু থেকেই আমরা প্রচুর সাড়া পেয়েছি আমাদের জুতার জন্য। এর মূলত দুটি কারণ। একটা হচ্ছে হারমিজনের প্রতিটি জুতার নকশা একদম ইউনিক, এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে আরামদায়ক। আমরা প্রচুর রিপিট কাস্টমার পেয়েছি যারা শুধু আরামের জন্যই হারমিজন থেকে আবার জুতা কিনেছেন। এবারের ঈদে আমরা ৫০-এর বেশি কালেকশন নিয়ে এসেছি। এর মধ্যে পার্টিওয়্যার যেমন আছে, তেমন নিয়মিত ব্যবহার করার জুতাও আছে। এত জুতা নিয়ে কাজ করার পরও আরামের ব্যাপারটাকেই আমরা প্রাধান্য দিয়েছি। হারমিজনের গ্রাহকের ভালোবাসা পাওয়ার মূলমন্ত্র কিন্তু এটাই।’

ছবি - হারমিজন 

মুচিবাড়ির স্বত্বাধিকারী নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রাহক খোলামেলা ধাঁচের স্যান্ডেলই বেশি পছন্দ করছেন, বিশেষ করে যাদের পা রেগুলার সাইজ থেকে কিছুটা বড় তারা খোলামেলা ধাঁচের স্যান্ডেলেই কমফোর্টেবল। আমি ফিনিশড্‌ প্লেন লেদার নিয়ে কাজ করছি। এতদিন স্লিপার নিয়েই কাজ করছিলাম। গ্রাহকের প্রচুর সাড়া পেয়েছি। কমফোর্ট, ডিজাইন সব মিলিয়ে মুচিবাড়ির জুতা নিয়ে গ্রাহকের সন্তুষ্টি ৯৮%। অনলাইনে লোফার আর সুর অনেক চাহিদা দেখে এবং বেশ কয়েকজন কাস্টমারের রিকমেন্ডেশনে লোফার সু আনি, সঙ্গে সঙ্গেই রেসপন্স পাই। সবাই কিন্তু আসলে টাকা দিয়ে আরাম ও জুতা বেশি দিন টেকার নিশ্চয়তা দুই-ই চায়। মুচিবাড়ি সে চেষ্টা করে যাচ্ছে। মেয়েদের চলাফেরা আরও আরামদায়ক করে তোলার জন্য সম্প্রতি আমরা স্নিকার্স এনেছি। সাড়াও পাচ্ছি বেশ। আর এসবই সম্ভব হয়েছে গ্রাহকের পূর্ণ আস্থার কারণে।’

ছেলেদের পছন্দের তালিকায় আছে ক্যানভাস, ব্যাক বেল্ট স্যান্ডেল, অ্যাংকেল বুট, ড্রেস সু, স্পোর্টস সু, মোকাসিন, টো রিং স্যান্ডেল, ক্যাজুয়াল সু ইত্যাদি। বার্নিশ লেদার, সিনথেটিক লেদার, মেশ লেদার, রাবার দিয়ে এসব জুতা তৈরি হয়। অনেকের কাছে কমফোর্ট এতটাই জরুরি যে এক জুতা টানা কয়েক বছরও পরতে তাদের সমস্যা নেই। 

জনপ্রিয় কয়েকটি জুতার ব্র্যান্ড

এটা সত্যি যে দেশে ব্র্যান্ড পরিচিত করে তোলা বেশ কঠিন একটা ব্যাপার। গ্রাহকের চাহিদা, আরাম, নকশা, আবহাওয়ার ক্রমাগত পরিবর্তন সবকিছু মিলে জুতার ব্র্যান্ড নিয়ে কাজ করা বেশ চ্যালেঞ্জিংও বটে। এসব চ্যালেঞ্জ পার করে বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড দেশে সুনামের সঙ্গে গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এপেক্স, বাটা, লোটো, লা মোড, জেনিস, ওয়াকার, আড়ং, ফরচুনা, হারমিজন, স্টেপ, বে ইমপোরিয়াম, মুচিবাড়ি। 

ছবি - মুচিবাড়ি 

কী বলছেন ডিজাইনাররা

লা মোডের চেয়ারপারসন হওয়ার পাশাপাশি ব্র্যান্ডের ডিজাইনার ফাহমিদা ইসলাম নিজেই। জুতার ডিজাইন করার সময় কী কী ভাবনা থাকেÑ সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ডিজাইন করার সময় আমার ভাবনায় থাকে গ্রাহকের আরাম, স্টাইল এবং চলমান ফ্যাশন ট্রেন্ডের সমন্বয়। আমি একজন ডিজাইনার হিসেবে সব সময় চেষ্টা করি এমন কিছু তৈরি করতে যা শুধু চোখে ভালো লাগে না, পায়ে আরামদায়কও হয়। বিশেষ করে, ফ্ল্যাট বা স্যান্ডেল ডিজাইন করার সময়, আমি সেগুলো এমনভাবে তৈরি করি যাতে পায়ের স্বাভাবিক গঠন ও মুভমেন্ট বজায় থাকে। ফ্যাশন ট্রেন্ড নিয়ে এমন কিছু তৈরি করতে চেষ্টা করি যা আধুনিক, কিন্তু একই সঙ্গে লং-লাস্টিং ফ্যাশনে থাকে। উপাদান নির্বাচন করার সময় আমি খুব সতর্ক থাকি। সে ক্ষেত্রে প্যাথেন্ট লেদার, সিল্ক, ভেলভেট এবং ন্যাচারাল ফেব্রিকসের মতো উচ্চমানের উপাদান ব্যবহার করি, যা টেকসই এবং একইসঙ্গে স্টাইলিশ দেখায়।

ফাহমিদা আরও জানালেন, ‘ডিজাইন করার সময় আমি বেশ বুঝে রঙ নির্বাচন করি। ঈদের সময় শিমারি গোল্ড, ব্লাশ পিঙ্ক, সিলভার এবং ক্লাসিক ন্যাচারাল টোন ব্যবহার করি, যাতে ডিজাইনটি ঐতিহ্য ও সমকালীনতার মেলবন্ধন হয়। কালার প্যালেটের মধ্যে সুনির্দিষ্ট রঙের ভারসাম্য বজায় রাখি, যাতে সেগুলো সবার পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায়। শুধু ডিজাইন নয়, আমি প্রতিটি জুতার ফাংশনালিটির দিকে মনোযোগ দিই। এমনকি সুন্দর জুতা তৈরি করার সময়, আমি মনে রাখি গ্রাহক যেন সহজে হাঁটতে পারে এবং দীর্ঘ সময় ধরে পরতে পারে।’

হারমিজন ব্র্যান্ডের ডিজাইনার টিম বেশ স্বাচ্ছন্দ্য নিয়েই কাজ করে। কারণ তারা জানে গ্রাহকের চাহিদা কেমন। দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, হ্যান্ডক্রাফটিংয়ের বিষয়গুলো তাদের জুতার নকশায় বরাবরই দেখা যায়। এ নকশাগুলো যেন আরও নজরকাড়া হয় সেদিকে তাদের খেয়াল সব সময়ই থাকে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, আরামের দিকে খেয়াল রাখা। কোন জুতা কীভাবে বানালে গ্রাহক আরাম পাবে, সারা দিন পরে ঘোরাঘুরি করলেও যেন পায়ে ব্যথা না হয় বা পা না ঘামে সেদিকটাও তারা খেয়াল রাখেন।

জেনজিদের পছন্দ

জেনজিদের পছন্দ অবশ্য কিছুটা ভিন্ন ধারার। কমফোর্টের সঙ্গে সঙ্গে ফ্যাশনটাও তাদের চাই। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে জুতা কখনও ফ্ল্যাট, আবার কখনও হিল। এর সঙ্গে আছে বুটস, মেরি জেন সু, স্নিকার্স, নানা ধরনের হিলস (স্টিলেটো, কিটেন, ব্লক, ওয়েজ, ক্লগ, করসেট, কোন, প্ল্যাটফর্ম, পিপ টো, ফ্লেয়ার্ড, অক্সফোর্ড, কর্সেট, লুইস, ফ্যান্টাসি, লেইস আপ)। নির্দিষ্ট কোনো ব্র্যান্ড নয়, বরং পছন্দের জুতা যে ব্র্যান্ডে পাওয়া যায় সেখান থেকেই তাদের কেনার আগ্রহ বেশি থাকে।

ছবি - হারমিজন 

জুতা এমন এক জিনিস যেটি ব্যবহারে আরামের দিকে খেয়াল রাখতে হয় শতভাগ। নইলে পায়ে নানা সমস্যা থেকে শুরু করে শারীরিক জটিলতাও হতে পারে। জুতা পরে যদি পায়ের গোড়ালি ব্যথা হয়, পা বেশি ঘামে, আঙুল ব্যথা করে, জুতার সোল বেশি শক্ত হয় তাহলে জুতা বদলে ফেলাই ভালো। ট্রেক সু, এক্সারসাইজ সু কেনার সময়ও এ বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখবেন, জুতসই জুতায় আপনার সুস্থতা নির্ভর করছে অনেকখানি। জুতার নকশা আকর্ষণীয় হওয়াটা যেমন জরুরি, তেমনই আরামের দিকেও খেয়াল রাখা আবশ্যক।


ছবি : হারমিজন, মুচিবাড়ি ও লা মোড


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা