× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

যাদুকাটার বাঁকে

ইমরান উজ-জামান

প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:৫৮ এএম

যাদুকাটার প্রথম দৃষ্টিনন্দন আকর্ষণ হলো নদীর পরিষ্কার জল, নীল আকাশ এবং সবুজ পাহাড়

যাদুকাটার প্রথম দৃষ্টিনন্দন আকর্ষণ হলো নদীর পরিষ্কার জল, নীল আকাশ এবং সবুজ পাহাড়

লাউড়ের গড় রাজ্য পৌরাণিক যুগের কামরূপ রাজ্যের উপরাজধানী হিসেবে খ্যাত শ্রীহট্টের প্রাচীন রাজ্য। প্রাচীন লাউড় রাজ্য ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে কামরূপ থেকে পৃথক হওয়ার পর দশম শতকে লাউড় রাজ্য, জয়ন্তিয়া ও গৌড় রাজ্যে বিভক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে শাসিত হয়েছে। দ্বাদশ শতাব্দীর শেষার্ধে রাজা বিজয় মাণিক্য লাউড় রাজ্যে রাজত্ব করেন। শ্রীহট্টের ইতিহাসে অবশ্য রাজন্যবর্গের চেয়ে পীর-ফকির আর মুনি-ঋষির ইতিহাসে আধিক্য দেখা যায়।

যাদুকাটা

প্রকৃতই রূপসী-সুন্দরী যাদুকাটা। যাদুকাটার প্রথম দৃষ্টিনন্দন আকর্ষণ হলো নদীর পরিষ্কার জল, নীল আকাশ এবং সবুজ পাহাড়। নদীর জল এতটাই পরিষ্কার যে, পানি ভেদ করে নদীর তলদেশের পাথর এবং বালু খালি চোখে দেখা যায়। 

মাথার ওপরে পাহাড়, পাহাড়ের কোল থেকে বের হয়ে আসা যাদুকাটা নদী। পশ্চিমের এপারে বারেকটিলাÑ সবকিছু ছবির মতো লাগে। খেয়া নৌকা, গাছগাছালিতে ভরা টিলার ওপর থেকে নিচে নদী। থাকার জন্য যাদুকাটার তীর সর্বোৎকৃষ্ট। খাসিয়া পাহাড়ের সবুজ আর যাদুকাটার জলের নীল মিলে পবিত্র দ্যুতি টেনে নিয়ে যায় ইতিহাসের পাতায়।

পুণ্যস্নান

চৈত্র মাসে মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে নদী তার পুণ্য স্রোতে প্রমত্ত হয়ে ওঠে। তিথিতে বিশ্বাসÑ গঙ্গা, যমুনা, গদাবরী, সরস্বতী, নর্মদা, সিন্ধু ও কাবেরী সপ্ততীর্থের বারি একত্র হওয়ার পর থেকে এর নাম হয় ‘পুণ্যতীর্থ’।

বারুণী মেলা

ঐতিহাসিকভাবেই পুণ্যস্নানের তিথিতে আয়োজিত হয় বারুণীর মেলা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, প্রতি দোল পূর্ণিমার রাতে এখানে সপ্তবারি একত্রিত হয়। তাই প্রতি বছর চৈত্রের অষ্টমী তিথিতে যাদুকাটায় দেশ-বিদেশের পুণ্যার্থীরা এসে জড়ো হন। কাজেই অদ্বৈতের ‘নবগ্রামে’র নদীতীরের ঘাটে ঘাটে পুণ্যার্থীরা ভিড় করেন। যাদুকাটার জলে ডুব দিয়ে ইহজাগতিক কালিমা থেকে পূত-পবিত্র হয়ে পুণ্যার্থীরা বাড়ি ফিরে।

লাউড়ের গড়

যাদুকাটা পাড়ি দিলেই লাউড়ের গড়। নদীতীরেই ছিল প্রাচীন লাউড় রাজ্যের রাজধানী। রাজ্য, রাজধানী কিছুই নেই; তবে কালের সাক্ষী হয়ে আছে অনিন্দ্যসুন্দর যাদুকাটা নদী। প্রাচীনকালে লাউড় নামে একটি আলাদা রাজ্যপাট ছিল। লাউড়ের ইতিহাস অতিপ্রাচীন। অসংখ্য কিংবদন্তি এবং ঘটনাবলি ও তথ্যাবলিতে তৎকালীন লাউড় রাজ্য সমৃদ্ধ। লাউড় রাজ্যের রাজ্যপাল ছিলেন কেশব মিশ্র। লাউড়ের রাজারা ছিলেন কাত্যান গোত্রীয় মিশ্র। তাদের উপাধি ছিল সিংহ। লাউড় রাজধানী লাউড় ছাড়া অন্য অংশ ছিল জগন্নাথপুর ও বানিয়াচংয়ে। বর্তমানের সুনামগঞ্জ জেলা, ময়মনসিংহ জেলা, হবিগঞ্জের কিয়দংশ নিয়ে গঠিত ছিল তৎকালীন লাউড় রাজ্য। তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের হলহলিয়া গ্রামে তৎকালীন লাউড়ের রাজা বিজয় সিংহের বাসস্থানের ধ্বংসাবশেষ এখনও বিদ্যমান রয়েছে, যা বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক তত্ত্বাবধানে রয়েছে। লাউড়ে পঞ্চদশ শতাব্দীতে দিব্য সিংহ নামে জনৈক রাজা রাজত্ব করতেন! 

শাহ আরেফিনের মেলা

হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম সফরসঙ্গী শাহ আরেফিনের আস্তানা। শাহ আরেফিনকে স্থানীয়রা বলেন শারপিন। প্রতি বছর চৈত্রে ওরস অনুষ্ঠিত হয়। দুই উৎসব ঘিরে নদীতীরে হিন্দু-মুসলমানের মিলনমেলা বসে। মেলার একপাশে পসরাসামগ্রীর বিকিকিনি, অন্যপাশে পীর-ফকিরের গানের আসর। দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভক্তরা আলাদা আলাদা তাঁবু ফেলে মজমা বসান। 

গরু, খাসি, মুরগি জবাই; রান্নাবান্না, খাওয়া-দাওয়া সবই হয় চলে মেলায়। বাংলাদেশ তো বটেই, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আসেন পুণ্যার্থীরা শাহ আরেফিনের ওরসে। এপার-ওপার দুপাশেই শাহ্ আরেফিন (রহ.)-এর আস্তানা। ওপারে আছে শাহ আরেফিনের ব্যবহৃত কুয়া, সুড়ঙ্গপথ, পাথরের ওপর নামাজ পড়ার পদচিহ্ন‎। তাহিরপুরের সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড়ে তার কবর আর এই পাড়ে এসে তিনি যেখানে বসেছিলেন, নামাজ পড়েছিলেনÑ সেই স্থানেও মাজার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ওরস একই দিন দুই জায়গায়ই হয়।

এই মেলার বয়স শত বছরেরও বেশি। আগে এই মেলার দিনে বিডিআর-বিএসএফের সমঝোতায় ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেওয়া হতো। দুই দেশের লোক জমায়েত হতো তখন এই মেলায়। বাংলাদেশ অংশের মাজারটি বিশাল ও মোটামুটি সুনসান একটি জায়গায়। মাজারটি পড়েছে নো ম্যানস ল্যান্ডের কিনারায়। ১২০৩ নম্বর সীমান্ত পিলারটি তার সাক্ষী। 

যেভাবে যাবেন

সুনামগঞ্জ ঘুরতে আসা বেশিরভাগ মানুষেরই ঘুরে দেখবার মূল বিষয়বস্তু থাকেÑ 

বারিক্কা টিলা, যাদুকাটা, টাঙ্গুয়ার হাওর, লাউরের গড়, কোয়রি লেক, লাকমাছড়া, শিমুল বাগান ইত্যাদি। এক দিনে আপনি তিনটি স্থান সহজেই ঘুরে নিতে পারেন। বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে সুনামগঞ্জ আসুন। ঢাকা থেকে বিভিন্ন কোম্পানির গাড়ি ছাড়ে। নন এসি ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত। আর এসি ৮৫০ টাকা। যাত্রাস্থল মহাখালী, ফকিরাপুল অথবা সায়েদাবাদ। সুনামগঞ্জ পৌঁছে সেখান থেকে সুরমা ব্রিজে যাবেন। সেখানে লোকাল পরিবহন পাবেন। এ ছাড়া সারা দিনের জন্য বাইক ভাড়া নিতে পারেন। 

থাকার ব্যবস্থা

যাদুকাটা নদী দেখতে আসা পর্যটকরা সাধারণত এখানে অবস্থান করেন না, তাই এখানে আবাসন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। তবুও প্রয়োজনে থাকতে হলে যাদুকাটা নদীর কাছে বড়ছড়া বাজার গিয়ে থাকতে পারবেন। বড়ছড়া বাজারে থাকার জন্য কয়েকটি মোটামুটি মানের আবাসিক হোটেল আছে। এ ছাড়া সুনামগঞ্জে ফিরে এসে থাকার হোটেল পাবেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা