সমুদ্রতলের রহস্য উন্মোচনে আইইউবির ‘বঙ্গমেরিন’ প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে
৫০টি দেশের দলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে চলেছে দুটি স্বপ্নবাজ দল, যারা নিজেদের তৈরি অত্যাধুনিক ডুবোযান নিয়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে চায়। স্বপ্নবাজ দল দুটি নিয়ে থাকছে আজকের আয়োজন
অটোমেটেড আন্ডারওয়াটার ভেহিকেল (AUV) প্রযুক্তি নিয়ে বিশ্বব্যাপী আগ্রহ বাড়ছে, আর সে আগ্রহের ঢেউ লেগেছে বাংলাদেশের তরুণ উদ্ভাবকদের মাঝেও। এ বছর ‘সিঙ্গাপুর অটোমেটেড আন্ডারওয়াটার ভেহিকেল চ্যালেঞ্জ (SAUVC) ২০২৫’-এ জায়গা করে নিয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) এবং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (আইইউবি)-এর দুটি উদ্যমী দল ‘সাস্ট অনুসন্ধান’ ও ‘আইইউবি বঙ্গমেরিন’। ৫০টি দেশের দলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে চলেছে এ দুটি স্বপ্নবাজ দল, যারা নিজেদের তৈরি অত্যাধুনিক ডুবোযান নিয়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে চায়।
‘অর্কা’ নামে স্বয়ংক্রিয় ডুবোযান
সাস্ট অনুসন্ধান : ‘অর্কা’ নিয়ে অভিযান
শাবিপ্রবির ১০ সদস্যের দল ‘সাস্ট অনুসন্ধান’ প্রায় দুই বছর ধরে গবেষণা করে তৈরি করেছে ‘অর্কা’ নামে স্বয়ংক্রিয় ডুবোযানটি। এটি উদ্ধার অভিযান, পরিবেশ পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার তথ্য সংগ্রহে দক্ষ। দলটির সদস্যরা হলেন আদ দ্বীন মাহবুব, নাইনাইউ রাখাইন, নিহাল বেগ, ফারহানুল ইসলাম, আলি তারিক, ইমতিয়াজ আহমেদ, মেহেদী হাসান, ফয়সাল জামান, সাফউয়াত আদিবা ও নুসরাত জাহান। তত্ত্বাবধানে আছেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ শহিদুর রহমান।
অর্কা ডিজাইনে রয়েছে উন্নত থ্রাস্টার মোটর, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) টুলস, রোবোটিক আর্ম, উন্নত ক্যামেরা ও আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা, যা পানির নিচে দক্ষভাবে কাজ করতে পারে। তবে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এখনও অর্থসংস্থানের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দলটি। সময়স্বল্পতায় ফান্ডিং নিশ্চিত না হলে এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে, যা ভবিষ্যতে শাবিপ্রবির জন্য এমন মঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ কমিয়ে দিতে পারে।
আইইউবির ‘বঙ্গমেরিন’
আইইউবি বঙ্গমেরিন : গভীর সমুদ্রের অনুসন্ধানী নাবিক
সমুদ্রতলের রহস্য উন্মোচনে আইইউবির ‘বঙ্গমেরিন’ প্রকল্প কাজ করছে। দলটির তত্ত্বাবধানে আছেন শিক্ষকমণ্ডলী সাদিয়া বিনতে আলম, মেহেদী হাসান ও ফয়সাল এম উদ্দিন। পরিচালকের দায়িত্বে আছেন অতিথি শিক্ষক নূর-ই সাদমান। শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন তাহফিজুল হাসান, রাহাত হাসান, মো. হানা সুলতান চৌধুরী, মুকুট প্রতিম, মো. আবদুন ফাত্তাহ লাম, হাসিন মাহির, ফয়সল দুর্লভ, উম্মে আইমান, মেহেনাজ আলমগীর, তানফিয়া খান ও মায়মুনা রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাব ল্যাবে তৈরি হওয়া বঙ্গমেরিনের নকশা ও প্রোটোটাইপে রয়েছে উন্নত প্রযুক্তি, যা মাছের সংখ্যা পর্যবেক্ষণ, সামুদ্রিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, উদ্ধারকার্যক্রম ও নৌনিরাপত্তায় ব্যবহার করা যাবে। ২০২৩ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি এখন সফটওয়্যার উন্নয়ন, নতুন সেন্সর সংযোজন এবং পানির গভীরে স্থিতিশীলভাবে কাজ করার সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। বঙ্গমেরিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য আলট্রাসনিক সোনার প্রযুক্তি, যান্ত্রিক হাত, উন্নত ক্যামেরা ও ৩০০ মিটার গভীরে কাজ করার পরিকল্পনা। ভবিষ্যতে বাণিজ্যিকভাবে সামুদ্রিক অনুসন্ধানে এটি ব্যবহারের স্বপ্ন দেখছেন শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশ থেকে বিশ্বমঞ্চে যাত্রা
দুটি দলই বাংলাদেশের প্রযুক্তি উন্নয়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে তাদের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ অর্থসংস্থান। যদি তারা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে, তবে এটি দেশের প্রযুক্তিগত ও গবেষণাধারার জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। এ ধরনের উদ্যোগ আরও উৎসাহিত হলে বাংলাদেশও একদিন সামুদ্রিক গবেষণা ও স্বয়ংক্রিয় ডুবোযানের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বড় নাম হয়ে উঠতে পারে।