ইসমাইল মাহমুদ, মৌলভীবাজার
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:১১ এএম
সমাজের বিত্তবানদের সহায়তা চান হরিবল বোনার্জী
এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও ইউনিয়নের হুগলিছড়া চা বাগানের দরিদ্র শ্রমিক অনিল বোনার্জীর ছেলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হরিবল বোনার্জী। মনে সুপ্ত বাসনা ও স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে চাকরির মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারের হাল ধরবেন। কিন্তু যাতায়াত খরচ, থাকা-খাওয়া ও শ্রুতিলেখকের সম্মানি সংগ্রহ করতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার। দরিদ্র পরিবার ঋণের জন্য এখন ঘুরছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে। এখনও ঋণের ব্যবস্থা হয়নি। ফলে পরিবারটি তাকিয়ে আছে মানুষের সাহায্য-সহযোগিতার দিকে।
হরিবল বোনার্জী বলেন, ‘২০০৮ সালে আমি ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে লেখাপড়া শুরু করি। ব্র্যাকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের যে পদ্ধতি অর্থাৎ ব্রেইল পদ্ধতি ছিল না। সে কারণে ভর্তির পর তিন বছর আমি লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হই। ২০১২ সালে মূলত আমার আনুষ্ঠানিক পড়ালেখায় হাতেখড়ি। মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। পরে মৌলভীবাজার সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষাকার্যক্রমের আওতায় মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করি এবং সেখান থেকে ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। আমি পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে চাই। কিন্তু আমার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ। আমাদের পরিবারে নুন আনতে পান্তা পুরোয় অবস্থা। বিত্তবানরা এগিয়ে এলে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারব।’
বাবা অনিল বোনার্জী বলেন, ‘আমি চা বাগানের একজন দরিদ্র শ্রমিক। আমার ছেলে ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়া চালিয়ে যেতে অনেক চেষ্টা করছে। ছোটবেলা থেকেই মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় আমার ছেলেটা লেখাপড়া শিখেছে। এবার আমার ছেলে উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায়। কিন্তু টাকার কারণে হয়তো সে থমকে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে যাতায়াতসহ অন্যান্য খরচের টাকার জন্য বেশ কয়েকটি সমিতি, এনজিওতে গেছি। এখনও টাকা জোগাড় করতে পারিনি।’
সাতগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেবাশীষ দেব রাখু বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হরিবল বোনার্জী চা বাগানের গণ্ডিতে থেকে লেখাপড়ায় অনেক ভালো করেছে। আগে সে সরকার এবং মানুষের অনেক সহযোগিতা পেয়েছে। একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হিসেবে আাগামীতেও সরকারি সহায়তা যাতে পায় সেজন্য সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। সবার আর্থিক সহায়তায় সে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে, এটাই চাওয়া।