সৈয়দা ফারিভা আখতার
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:০৮ এএম
রাজশাহীর মুক্তমঞ্চে বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করেন মাস্টার্স শিক্ষার্থী ঐশী
উদ্যোক্তা মানে শুধু ব্যবসা নয়, এটি এক দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে নতুন কিছু গড়ে তোলার স্বপ্ন থাকে। রাজশাহী কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ঐশী সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। রাজশাহীর মুক্তমঞ্চে ‘কবির’স মোমো’ নামে একটি ফুড স্টল চালু করে তিনি নিজের ক্যারিয়ারের নতুন দিগন্ত খুলেছেন।
ঐশীর জন্ম ও বেড়ে ওঠা নওগাঁয়। বর্তমানে রাজশাহীর একটি মেসে থাকেন। কীভাবে ব্যবসায়িক জীবনে পা দিলেনÑ জানতে চাইলে ঐশী বলেন, ‘আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পরিকল্পনা হঠাৎই মাথায় এলো যে অনার্স কমপ্লিট করেছি এখন বাসা থেকে টাকা নেওয়াটা আমার কাছে খারাপ লাগছিল। আর সব থেকে বড় কথা আমার বাবা ২০২১ সালে মারা যাওয়ার পর আমাদের পরিবারের সম্পূর্ণ খরচটাই আমার মা বহন করেন। আমি চিন্তা করছিলাম আমি যদি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি এ ক্ষেত্রে হয়তো বা মায়ের কষ্টটা একটু কম হবে। আমার মা প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। আমার একটা ছোট ভাই আছে। সবকিছু মিলে নিজের পায়ে দাঁড়ানো এবং নিজের খরচটা নিজে চালানোর উৎসাহ থেকেই আমার আসলে এখানে বসা আর এ ব্যবসাটা শুরু করা।’
এ ব্যবসার অনুভূতি কেমনÑ জানতে চাইলে ঐশী বলেন, ‘এ ব্যবসা আমার কাছে ভালোই লাগছে। নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে। নতুন নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চার করতে পারছি। সব থেকে বড় কথা এখনও দুই মাস হয়নি এর মধ্যে আমি অনেক মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। আমি যদি কখনও কোনো কারণে দোকানটা খুলতে না পারি তাহলে অনেক মানুষ আমাকে নক দিয়ে জিজ্ঞাসা করে আমি দোকানটা খুলছি না কেন? এটা আমার খুব ভালো লাগে যে মানুষ আমাকে খুঁজছে, আমার খাবারটা পছন্দ করছে। আমার খাবারটার জন্য তারা আগ্রহ প্রকাশ করছে। এটা আমার কাছে খুব ভালো লাগছে।’
এ স্টলে কী কী পাওয়া যায়, বেচাকেনা কেমন হয়Ñ এ বিষয়ে ঐশী বলেন, ‘আমি বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এ স্টলে বসি। এর মধ্যেই যা সেল করা হয় তা আলহামদুলিল্লাহ। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ পিস মোমো সেল হয়। আর এখন আমি নতুন নতুন আইটেম বাড়াচ্ছি কারণ সামনে গরমকাল চলে আসছে। হয়তো মোমোর সেলটা কিছুটা কমে যাবে। আমরা স্টুডেন্ট সেহেতু বড় বড় রেস্টুরেন্টে অনেক হাই-প্রাইজে সবাইকে খেতে হয়। তাই আমি চাই এখানে বসে রিজনেবল প্রাইজে পকেট ফ্রেন্ডলি বাজেটে আমি যেন সবাইকে খাওয়াতে পারি। এজন্য আমাদের মোমো ৬ পিস ৫০ টাকা, চিকেন চাওমিন ৩০ টাকা প্লেট, এ ছাড়া কাল শুরু করব ক্রিসপি চিকেন ২০ টাকা পিস এবং তার সঙ্গে আমাদের কফি আইটেমটাও থাকছে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে আরও বাড়াবও আইটেম।’
এ ব্যবসায় আসার পর কোনো প্রকার বাধা পেয়েছেন কি? ঐশী বলেন, ‘আমি বাধা পেয়েছি প্রথম প্রথম। আগে এ জায়গায় ব্যবসা করতে গেলে আমাদের চাঁদা দিতে হতো। কিন্তু বর্তমানে ৫ আগস্টের পর থেকে সেটা আর দিতে হয় না। স্টুডেন্টদের জায়গা থেকে আমি সব দিক থেকে অনেক ছাড় পাই।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঐশী বলেন, ‘স্বপ্ন দেখি একজন আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবো। তারপর আমি আমার এ দোকানটা অনেক বড় করতে চাই যেন আমার কাস্টমারকে আমি খুব স্বচ্ছন্দে খাওয়াতে পারি এবং আমি যেন দোকানটাকে একটা বড় রেস্টুরেন্টে পরিণত করতে পারি।’