বসন্ত ও ভালোবাসা

বাঙালির কাছে বসন্ত মানেই উৎসবের রঙিন চিত্র। জীবন রঙিন করতেই যেন ভালোবাসা দিবস  আসে বছর বছর। আর এ দুই উৎসব যখন একই দিনে পালন করা যায় তখন আনন্দ হয়ে ওঠে দ্বিগুণ। বসন্ত ও ভালোবাসার রঙিন মুহূর্ত নিয়েই আজকের আয়োজন

শীত ছাপিয়ে প্রকৃতিতে নানা রঙের ছোঁয়া দিতে দুয়ারে দাঁড়িয়ে বসন্ত। একই দিনে ভালোবাসা দিবস হওয়ায় বসন্ত যেন এ বছর আরও রঙিন। এ দুইয়ের মেলবন্ধন আরও বর্ণিল হয়ে ওঠে বৈচিত্র্যময় পোশাকে। বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে স্বাগত জানাতে তাইতো ফ্যাশন হাউসগুলোয় দেখা যায় বাহারি পোশাক।

আনন্দ বাড়ায় পোশাক

বসন্তে হলুদ রঙের প্রাধান্য বেশি হলেও বর্তমানে কমলা, লাল, সবুজ এমনকি সাদাও সমানভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। তা ছাড়া একই দিনে ভালোবাসা প্রকাশের জন্য লাল রঙের প্রাধান্যও কম নয়। বর্তমানে অবশ্য এ ধারা থেকে অনেকেই বেরিয়ে এসেছেন। এখন এক রঙা লাল বা হলুদ ছাড়াও একই দিনে রঙিন পোশাক পরতেই স্বাচ্ছন্দ্য পাচ্ছেন ফ্যাশনসচেতনরা। শাড়ি, পাঞ্জাবি, কুর্তি, ফতুয়া, টপস, শার্ট, টি-শার্ট, স্কার্ট সবকিছুতেই রঙের ছটা বেশ লক্ষণীয়। তবে ঐতিহ্য যেমন বলে বসন্ত মানেই হলুদ আর ভালোবাসা মানেই লালÑ এ ধারা বজায় রেখেছে ফ্যাশন হাউসগুলোও। দিবস ও আবহাওয়ার ব্যাপার ভাবনায় রেখে পোশাক হতে হয় আরামদায়ক। সুতি শাড়ির আবেদন আগেও যেমন ছিল, এখনও তেমনই আছে। বর্তমানে এক রঙা শাড়িতে নানা নকশার ব্লক প্রিন্ট, ডিজিটাল প্রিন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট বেশ নজর কেড়েছে। সুতির পাশাপাশি সিল্ক, কোটা শাড়িতে নানা নকশার সুতার বুননও বেশ নজরকাড়া।

শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজের কম্বিনেশন বর্তমানে বেশ চোখে পড়ার মতো। কটি, টপস, ক্রপটপ স্টাইলের ব্লাউজগুলো ফ্যাশন ট্রেন্ডে বেশ এগিয়ে। শাড়ির রঙের সঙ্গে মিল না রেখে অন্য রঙের ব্লাউজেই এখন মেয়েরা বেশি স্বচ্ছন্দ। কারণ একটা ব্লাউজ অনেক শাড়ির সঙ্গে পরা যায়। এতে কনট্রাস্টটাও হয়, দেখতেও লাগে বেশ। হাইনেক, অফ দ্য শোল্ডার, সুইটহার্ট নেকলাইন বর্তমানে বেশ ট্রেন্ডি। নকশাভেদে এসব ব্লাউজের ফেব্রিক সুতি, কাতান, শিফন, সিল্ক, জর্জেট যেকোনোটাই হতে পারে।

ছেলেরা এ দিনে পাঞ্জাবি পরতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আর তাই তো বছরের এ সময়ে ফ্যাশন হাউসগুলো এবং অনলাইন ব্যবসায়ীরা পাঞ্জাবি নানা কারুকার্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলেন। ছেলেরা সাধারণত পাঞ্জাবিতে হালকা ঘরানার কাজ পছন্দ করে। পাঞ্জাবির নকশায় তাই হালকা ব্লকের ছাপ অথবা এক পাশে সুতার কাজ তাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। অনলাইন থেকে অনেকেই কাপল ড্রেস বানিয়ে নিচ্ছেন নিজেদের পছন্দের নকশায়। দিনটি বিশেষ করার জন্য অনলাইন মাধ্যম এখন বেশ এগিয়ে আছে গ্রাহকের পছন্দে।

সাজসজ্জায় প্রকৃতির ছোঁয়া

বসন্ত উদ্‌যাপন হবে আর সাজে প্রকৃতির ছোঁয়া থাকবে না তা কি হয়? প্রকৃতিতে ফুল তার রূপ নিয়ে হাজির হয়েছে ইতোমধ্যে। এদিন আপনি সাজতে পারেন হালকা সাজে। চোখে কাজল, ঠোঁটে লিপস্টিক, কপালে টিপ, হাতে চুড়ি আর অবশ্যই খোঁপায় ফুল। এ ফুলেরও আবার রকমফের আছে। আগে মেয়েরা বেলি বা রজনিগন্ধার গাজরা পরতে পছন্দ করত। এখন এ পছন্দের তালিকায় যুক্ত হয়েছে শুধু গোলাপি, সাদা বা লাল গোলাপ। গাঁদা ফুলের আবেশ এখনও আগের মতোই রয়েছে। চন্দ্রমল্লিকা, জারবেরা ফুলের গাজরা দোকানে সেভাবে পাওয়া না গেলেও অনেকে নিজেরাই ক্লিপ বা ব্যান্ডের সাহায্যে সেগুলো বানিয়ে নিচ্ছেন। দোকানের ট্র্যাডিশনাল গাজরার চেয়ে এগুলো বেশ নজরকাড়াও। যদি খোঁপা না করতে চান, তাহলে খোলা চুলেও ক্লিপ দিয়ে এসব গাজরা লাগিয়ে নেওয়া যায়।

ত্বককে দিন প্রশান্তি

বিশেষ দিনে যখন ঘুরতে বের হবেন, তখন মেকআপটাও যেন সুন্দর হয় সেদিকে আমাদের সবারই নজর থাকে। তবে এ সৌন্দর্য ফুটে উঠবে যদি আপনার ত্বক সুন্দর থাকে। আবহাওয়ার পরিবর্তন ত্বকে বেশ প্রভাব ফেলে। তাই ত্বকের যত্নে আগে থেকেই কিছু প্রস্তুতি নিতে হবে।

১. ত্বক কোমল রাখার জন্য এক্সফোলিয়েশন করা জরুরি। এজন্য ২ চা চামচ চালের গুঁড়ার সঙ্গে ১ চা চামচ মধু, ১/২ চা চামচ টক দই মিশিয়ে ভালোভাবে মিক্স করুন। এবার ত্বকে লাগিয়ে অপেক্ষা করুন ১৫ মিনিট। আলতো করে ঘষে মুখ ধুয়ে নিন।

২. অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে সামান্য মধু ও কাঁচা হলুদ মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন। ত্বক নরম ও কোমল রাখতে এ প্যাকটি বেশ কার্যকর।

৩. প্রচুর পানি পান করুন। শরীর পর্যাপ্ত পানি না পেলে শুষ্ক হয়ে ওঠে। আর শুষ্ক হলেই দেখা দেয় লালচে ভাব, উঠতে পারে ব্রণ। আর বিশেষ দিনে এসব সমস্যা হলে কারওই ভালো লাগবে না। তাই সময় থাকতে প্রচুর পানি পান করুন। বাইরে বেরোলেও সঙ্গে পানির বোতল রাখুন।

টিপস 

১. যে পোশাক পরে বাইরে বেরোবেন তার রঙ ওঠে কি না দেখে নিন। পোশাকের যেকোনো পাশের কর্নার থেকে একটু পানিতে ভিজিয়ে দেখুন। যদি না ওঠে ভালো। যদি ওঠে তাহলে অন্য পোশাক বাছাই করুন।

২. অবশ্যই সানস্ক্রিন লাগিয়ে নেবেন। এতে সূর্যরশ্মি থেকে ত্বক সুরক্ষিত থাকবে। যে লিপস্টিক বা লিপ বাম ঠোঁটে লাগিয়েছেন সেটাও সঙ্গে রাখতে পারেন।

৩. ছাতা, পানির বোতল, সানগ্লাস, পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখবেন। 

৪. বাইরে বেরোলে ফাস্টফুড কমবেশি খাওয়া হবেই। তবে অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। কোল্ড ড্রিংকস, চা, কফি যতটা কম পান করা যায় ততই ভালো। নইলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়বে। সঙ্গে বোতল রাখুন যেন বারবার পানি পান করা যায়।

৫. রাস্তার পাশে যেসব শরবত বানানো হয় সেগুলো এড়িয়ে চলুন। এসব শরবতে ধুলোময়লা, জীবাণুর পরিমাণ বেশি থাকে। পান করার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।

৬. টিস্যু, রুমাল সঙ্গে রাখুন। শিশুদের নিয়ে বেরোলে কিছুক্ষণ পরপর পানি দিয়ে মুখ মুছে দিন।

৭. বাইরে বেরোবার সময় আরামদায়ক জুতা পরিধান করুন। এতে সারা দিন হাঁটাহাঁটি করতে সুবিধা হবে।

মডেল - পূর্ণিমা বৃষ্টি, জনি 

ছবি - রঙ বাংলাদেশ