প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪১ পিএম
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:১৪ পিএম
সন্তানের সাথে সম্পর্ক
পৃথিবীতে অনেক কঠিন দায়িত্বের মধ্যে প্যারেন্টিং অন্যতম। সন্তানের সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করতে গিয়ে অনেক সময় অভিভাবকরা ভাবেন, তারা যদি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন, তবে সেটাই সবচেয়ে ভালো অভিভাবকত্ব। তবে প্যারেন্টিংয়ে 'সেরা' বলে কিছু নেই। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া যেখানে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে। তবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ টিপস অনুসরণ করলে বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন সাতটি কার্যকর টিপস-
১) সন্তানের আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলুন
সন্তানের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে তাকে ইতিবাচক পরিবেশ দেয়া জরুরি। শিশুরা ছোট থেকেই অভিভাবকের মুখের অভিব্যক্তি, কণ্ঠস্বর এবং আচরণ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে। তাই তাদের সামনে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ। সন্তান যদি আত্মবিশ্বাসী হয়ে বড় হয়, তবে জীবনের যেকোনো প্রতিকূলতা সহজেই মোকাবিলা করতে পারবে। তার ছোট ছোট সাফল্যগুলো উদযাপন করুন এবং তাকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে দিন। ভুল করলে শাস্তি না দিয়ে শেখানোর মনোভাব রাখুন, যাতে সে বুঝতে পারে ভুল করা মানেই খারাপ কিছু নয়।
২) ঘরের নিয়ম শিখিয়ে দিন
প্রতিটি পরিবারে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম থাকা জরুরি। যেমন-হোমওয়ার্ক শেষ না করা পর্যন্ত টিভি না দেখা, পরিবারে কাউকে কটূক্তি না করা, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম এড়িয়ে চলা ইত্যাদি। প্রথমবার ভুল করলে সতর্ক করে দেয়া যেতে পারে, তবে নিয়ম ভাঙার ফল কী হতে পারে তা তাকে বোঝাতে হবে। এতে শিশু নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে এবং দায়িত্ববোধ বাড়বে।
৩) সন্তানের জন্য মানসম্মত সময় দিন
ব্যস্ততার মাঝেও সন্তানের জন্য সময় বের করা অপরিহার্য। প্রতিদিনের ব্যস্ত শিডিউলের মধ্যেও চেষ্টা করুন পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে খেতে বসার। সকালে ঘুম থেকে উঠে শিশুর সঙ্গে সময় কাটানো, স্কুলে পৌঁছে দেয়া কিংবা একসঙ্গে হাঁটা সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে পারে। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একটি দিন পরিবারের জন্য বরাদ্দ করুন, যেখানে সবাই একসঙ্গে আড্ডা দেবেন, মুভি দেখবেন বা পছন্দের কোনো খাবার খাবেন।
৪) খোলামেলা যোগাযোগ রাখুন
সন্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে তাকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। সবকিছুতে না বলা বা কঠোর শাসনের চেয়ে, যুক্তি দিয়ে তাকে বোঝানো বেশি কার্যকর। সন্তান কেন কিছু করতে চায় বা তার অনুভূতি কী, সেটি মনোযোগ দিয়ে শুনুন। এতে সে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে এবং যে কোনো বিষয়ে আপনার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে পারবে।
৫) ভালোবাসা প্রকাশ করুন
শুধু ভালোবাসলেই হবে না, বরং তা প্রকাশ করাটাও জরুরি। শিশুর প্রশংসা করুন, তাকে উৎসাহ দিন এবং নতুন কিছু শেখার আগ্রহ তৈরি করুন। তাদের প্রতি কঠোর সমালোচনার বদলে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখুন। এতে সন্তান বুঝবে যে, সে যে কোনো সমস্যায় আপনাকে পাশে পাবে।
৬) সব সমস্যার সমাধান নিজে করবেন না
সন্তানের সমস্যার সমাধান সবসময় নিজে করে দেয়ার বদলে তাকে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা শেখান। এতে সে ভবিষ্যতে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে এবং যেকোনো পরিস্থিতি নিজে সামলাতে পারবে।
৭) সন্তানের আচরণে মনোযোগ দিন
বয়স অনুযায়ী শিশুর আচরণ পরিবর্তিত হয়। তাই তার প্রতি বিশেষ নজর রাখা জরুরি। বিশেষ করে, সে কি অন্যদের প্রতি দুর্ব্যবহার করছে, মিথ্যা বলছে বা অযথা রাগ করছে কিনা, সেদিকে খেয়াল রাখুন। যদি এমন কিছু লক্ষ্য করেন, তাহলে রেগে না গিয়ে তার সঙ্গে খোলামেলা কথা বলুন এবং বোঝানোর চেষ্টা করুন।
সঠিক অভিভাবকত্ব মানেই সন্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। তাই কঠোর শাসনের পরিবর্তে ভালোবাসা, বোঝাপড়া এবং সময় দেয়ার মাধ্যমে সন্তানের সঠিক মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করুন।
ছবি - ইমেজবাজার