আজিজুল হক
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৫৫ এএম
গৃহিণী থেকে সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন লাকী ইসলাম। প্রবা কোলাজ
প্রথমে প্রেম, পরে পারিবারিকভাবে ১৯৯৪ সালে এসএসসি পরীক্ষার ১০ দিন আগে লাকী ইসলামের বিয়ে হয় রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার সাইপ্রাসপ্রবাসী রাকিবুল ইসলামের সঙ্গে। বিয়ের তিন বছর পর স্বামীর সঙ্গে সাইপ্রাস পাড়ি জমান। সেখানে আড়াই বছর থাকার পর তারা দেশে ফিরে আসেন। এরই মধ্যে তাদের এক কন্যাসন্তানের জন্ম হয়।
লাকী ইসলাম একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করার সব কৃতিত্ব দিতে চান তার শ্বশুরবাড়ির সবাইকে। কেননা, জেলাজুড়ে আজকের লাকী ইসলাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন শুধু শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদের অনুপ্রেরণা এবং স্বামীর সহযোগিতায়।
বিয়ের আগে লাকী ইসলাম কোনো ধরনের খাবার তৈরি করতে না জানলেও বিয়ের পর শাশুড়ির কাছ থেকে সব রান্না শেখেন। এ সময় শ্বশুর-শাশুড়ি, ননদ আর মেয়েকে পড়াতে আসা গৃহশিক্ষকদের নতুন নতুন খাবার খাইয়ে প্রতিনিয়ত প্রশংসা কুড়াতে থাকেন লাকী ইসলাম। মেয়ে স্কুলে পড়াশোনা করার সময় তিনি অনেকটা একা হয়ে পড়েন। সেই একাকিত্ব ঘোচানোর জন্য কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় লাকী ইসলাম হাতে তৈরি রান্না করা খাবার বিক্রির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
শ্বশুরের পরামর্শমতে ২০১৪ সালে ‘মাদার টাচ হোম ডেলিভারি’ নাম দিয়ে কিছু পোস্টার ছাপিয়ে শহরের অফিস-আদালত ও মহল্লার দেয়ালে টানিয়ে দেন। আর সেই পোস্টার টানানোর পাঁচ দিনের মাথায় লাকী ইসলাম বড় একটা খবারের অর্ডার পান। সেখানে ১১৭ জনের জন্য ১১৭ প্যাকেট ফ্রাইড রাইস সাপ্লাই দেন। আর সেখান থেকে ২৪ হাজার টাকা আয় করেন।
পরে লাকী ‘মায়ের ছোঁয়া রান্নাঘর’ নামে পেজ খুলে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নানা ধরনের আনকমন খাবার তৈরি করে সে ছবি আপলোড করেন। এ ছাড়া পিঠাসহ অর্ধশতাধিক রকমের পিঠা ও শতাধিক রকমের খাবার তৈরি করে অনলাইনে ডেলিভারি দিয়ে পরিচিতি লাভ করেন লাকী। এরপর আর লাকীর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রতিদিনই বাড়তে থাকে খাবারের অর্ডার। তবে করোনার প্রথম দিকে লাকীর ব্যবসা কিছুটা স্থবির হয়ে পড়ে। মানুষ যখন করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঘরবন্দি, তখন লাকীর অর্ডরের পরিমাণ বাড়তে থাকে। তবে স্যুপসহ নানা ধরনের খাবারের অর্ডার পেতে থাকেন। সে সময়ও প্রতি মাসে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। এভাবে ব্যবসার পরিধি বাড়তে থাকে লাকীর। তার রান্নার কাজে সহযোগিতার জন্য তিনজন লোক নিয়োগ করা আছে। বর্তমানে লাকী বিভিন্ন বিয়ের অনুষ্ঠানে বরের সামনে দেওয়া খাবারের ডালা সাজানোর অর্ডার বেশি পাচ্ছেন। এ ডালা ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন।
অনলাইন প্ল্যাটফর্মে রান্না করা খাবার বিক্রির আয় থেকে প্রতি মাসে কিছু অংশ দিয়ে তিনি বিভিন্ন এতিমখানায় বিনামূল্যে খাবার বিতরণ করেন। লাকীর ইচ্ছা সমাজের অসহায় মহিলাদের বিনামূল্যে খাবার তৈরি প্রশিক্ষণ দেওয়ার। যার মাধ্যমে অসহায় মানুষ নিজের পায়ে দাঁড়াবে।