× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পোড়ামাটির চাকিতে ভাগ্যের চাকা

মহসিন মোল্যা

প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:৫১ এএম

মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার নোহাটা গ্রামে মাটির চাকি তৈরিতে ব্যস্ত এক পরিবার। প্রবা ফটো

মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার নোহাটা গ্রামে মাটির চাকি তৈরিতে ব্যস্ত এক পরিবার। প্রবা ফটো

মাগুরার শ্রীপুরে পোড়ামাটির চাকিতেই ঘুরছে ২৫টি পরিবারের ভাগ্যের চাকা। এ পরিবারগুলোর একমাত্র আয়ের উৎস এ পোড়ামাটির চাকি। মৃৎশিল্পে উৎপাদিত বিভিন্ন জিনিসের কদর কমে গেলেও পোড়ামাটি চাকির যথেষ্ট কদর রয়েছে। যার ফলে এ পেশায় উপজেলার সব্দালপুর ইউনিয়নের নোহাটা গ্রামের পরিবারগুলো এখনও সক্রিয়। উপজেলার শ্রীপুর, সব্দালপুর ও নোহাটা গ্রামে পাল সম্প্রদায়ের বসবাস থাকলেও নোহাটা গ্রামের ২৫টি পরিবার পোড়ামাটির চাকি তৈরি করে থাকে। তাদের উৎপাদিত চাকি উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে পাশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় গিয়ে থাকে। তবে এ পেশায় জীবনযাপন দুর্বিষহ হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকেছে অন্য পেশায়। অভাব-অনটনের মাঝেও তারা বাপদাদার পেশা আঁকড়ে ধরে আছে। শুরুতে তারা মাটির পণ্যসামগ্রী তৈরি করলেও বর্তমানে শুধু মাটির চাকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে। একসময় এ চাকি দিয়ে পানি সমস্যা নিরসনে কূপ বসানো হতো। সভ্যতার উৎকর্ষতায় তা-ও হারিয়ে গেছে। তবে পরিবারের সংখ্যাবৃদ্ধি, পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা ও পোড়ামাটির চাকি সহজলভ্য হওয়ায় দিনে দিনে এর ব্যবহার বাড়ছে।

অর্থাভাব ও জায়গাসংকটের কারণে দিনে দিনে এ পেশা হারিয়ে যাচ্ছে। এ পেশায় জড়িত পরিবারগুলোর নেই কোনো আধুনিক মেশিন ও সরঞ্জাম। মাটির চাকি তৈরিতে এঁটেল মাটি, জ্বালানি কাঠ প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দূরদূরান্ত থেকে এগুলো সংগ্রহ করতে গুনতে হয় প্রচুর অর্থ। বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা, প্রযুক্তির উন্নয়ন ও নতুন নতুন শিল্পসামগ্রীর প্রসারের ফলে এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও অনুকূল বাজারের অভাবে এ পেশা অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। কোনোমতে বেঁচে থাকার জন্য দিনের ১৮ ঘণ্টা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন তারা। 

মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে নোহাটা গ্রাম। সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের তিনাত পাল, উজ্জল পাল, মণিকুমার পাল, লিটন পাল, সুজিত পাল, মিনু পালসহ অন্তত ২৫টি পরিবার পোড়ামাটির চাকি তৈরিতে ব্যস্ত। প্রায় প্রতিটি বাড়ির উঠানে পরিবারের সবাই মিলে মাটি দিয়ে তৈরি করছে রিং বা চাকি। দুয়েকটি পরিবার মিলে চাকি পোড়ানোর জন্য তৈরি করে রেখেছে চুল্লি বা ভাটা। ভাটায় থরে থরে শুকনো মাটির চাকি সাজিয়ে জ্বালানো হচ্ছে। সাদা মাটির চাকি দুই দিন জ্বালানোর পর পরিণত হচ্ছে লালচে বর্ণে। নারী-পুরুষ সবারই কাদামাটির গন্ধমাখা শরীর।  

পলাশ পাল ও তার স্ত্রী কণিকা পাল বাড়ির উঠানে মাটির চাকি তৈরি ও শুকানোয় ব্যস্ত। পাশে জ্বলছে উত্তপ্ত চুলা। ভাটায় স্তরে স্তরে সাজানো মাটির চাকি। মাটির তৈরি চাকিগুলো পুড়ে লালচে আকার ধারণ করা পর্যন্ত জ্বলবে আগুন। তাদের শরীরের ঘাম টপ টপ করে মাটিতে পড়ছে। এ সংসারে কণিকা পালের কেটেছে দীর্ঘ ১৬ বছর। নববধূ হয়ে আসার পর থেকেই স্বামীর কাজে সহযোগিতা করে আসছেন।

পলাশ পাল জানান, আগে খুব সহজে মাটি পাওয়া যেত, দামও কম ছিল। বর্তমানে মাটি সহজে পাওয়া যায় না, খরচও বেশি। জ্বালানির দামও বেশি পড়ে। কাদা চাকি তৈরির উপযোগী করে তুলতে মেশিনের ব্যবহার করা হয়। কাজ সহজ হলেও এর জন্য আলাদা খরচ পড়ে। মেশিনের সাহায্যে জ্বালের ব্যবস্থা করেছেন। যার ফলে ধোঁয়া কম হচ্ছে। একটি চাকি তৈরিতে যে খরচ হয় তাতে তেমন একটা লাভ থাকে না। স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে কাজ করেন, যা হয় তাতে নিজেদের পারিশ্রমিক থাকে। 

মণিকুমার পাল বলেন, ‘এ পরিবারগুলোর কোনো জমিজমা নেই। প্রতিটি চাকিতে সব খরচ বাদ দিয়ে ২০-২৫ টাকা লাভ থাকে। কোনোমতে আমাদের পেট চলে। আমরা বউ, ছেলেমেয়ে সবাই মিলে কাজ করি তাই টিকে আছি। তবে এ চাকির যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। বছরের আট-নয় মাস কাজ চলে। বৃষ্টি মৌসুমে কাজ চলে না। তাই সে সময় প্রতিমা তৈরির কাজ করি। আমাদের পর হয়তো আমাদের মধ্যে কেউ আর এ পেশায় থাকবে না।’

এ বিষয়ে লিটন পাল জানান, বর্তমানে পোড়ামাটির চাকির যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। যার কারণে ব্যবসা চালিয়ে নিতে তেমন বেগ পেতে হয় না। বছরের আট-নয় মাস চলে এ ব্যবসা। অনেক কুমার বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে মৃৎশিল্পে বিনিয়োগ করেছেন। আনুষঙ্গিক খরচ মিটিয়ে এমন কোনো টাকা থাকে না, যা দিয়ে সমিতির কিস্তি পরিশোধ করবেন। সরকার যদি স্বল্প সুদে কুমারদের ঋণের ব্যবস্থা করত তাহলে সবাই স্বাবলম্বী হতে পারত।

শ্রীপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক জানান, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি চালু করেছে সরকার। যার মধ্যে রয়েছে ভাতা ও ঋণদান। ওই গ্রামের কুমাররা যদি ঋণের জন্য আবেদন করেন তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা