স্বাদু সংবাদ
হাসনাত মোবারক
প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:৩৩ পিএম
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:৩৩ পিএম
বই ধার করার পর ফেরত না দেওয়ার অভ্যাস প্রায় মানুষের মধ্যেই আছে। বই ফেরত না দেওয়া নিয়ে অনেকের স্মৃতি রয়েছে। তবে ফেরত না দেওয়াদের এ তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন কিংবদন্তি হয়ে আছেন। কেননা এ রাষ্ট্রনায়কের ধার করা বই ফেরত দেওয়া হয়েছে ২২১ বছর পর। ১৭৮৯ সালের অক্টোবর। ওয়াশিংটন তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি নিউইয়র্ক সোসাইটি লাইব্রেরি থেকে এমার ডি ভেত্তেলের লেখা দ্য ল অব ন্যাশনস বইটি ধার নেন।
এরপর পেরিয়ে গেছে দুই শতক। দীর্ঘ সময় পর সেই লাইব্রেরির কর্তারা আবিষ্কার করেন, বইটি আর ফেরত দেননি প্রেসিডেন্ট। সময়মতো বই ফেরত না দিলে জরিমানার ব্যবস্থা সব লাইব্রেরিরই থাকে। জরিমানা হয়েছিল ওয়াশিংটনেরও। যে অঙ্কটা ছিল ৩ লাখ ডলারের সমান! এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে বইটি ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নেয় ভার্জিনিয়ার মাউন্ট ভেরনে সাবেক এই রাষ্ট্রপতির স্মৃতিরক্ষা কেন্দ্র। সে বইটিই অবশ্য ফেরত দিতে পারেননি তারা। তবে একই বইয়ের একই সংস্করণের অন্য একটি কপি ২০১০ সালের মে মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত দেওয়া হয় লাইব্রেরিকে।
উদ্বাস্তু শ্রমিকদের লাইব্রেরি
ইসরায়েলের তেল আবিব কেন্দ্রীয় বাস স্টেশনের পাশে অবস্থিত লেভিনস্কি পার্ক। এখানে অভিবাসী শ্রমিকরা সপ্তাহ শেষে জড়ো হয়। সেখানে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় একটি লাইব্রেরি; যা ‘লেভিনস্কি উদ্যান লাইব্রেরি’ নামে পরিচিত। এখানে শরণার্থী এবং অভিবাসী শ্রমিকদের জ্ঞান বিতরণের জন্য এটি গড়ে তোলা হয়েছে। এ পার্কে অনেক ভাষাভাষী মানুষ আসে। তাই তাদের সেবা প্রদানের জন্য এখানে ১৫টি ভাষার বই রয়েছে। ম্যান্ডারিন চায়নিজ, আমহারিক, থাই, তাগালগ, আরবি, ফরাসি, স্প্যানিশ, নেপালি, বাংলা, হিন্দি, তুর্কি, রোমানিয়ান এবং ইংরেজিতে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ বই রয়েছে। শিশুদের জন্য হিব্রু ভাষায় বইও রয়েছে। মজার ব্যাপার, এ লাইব্রেরিতে কোনো দেয়াল, দরজা বা পাহারাদার নেই। এটিতে রয়েছে দুটি তাক– একটি প্রাপ্তবয়স্কদের, আরেকটি শিশু-কিশোরদের জন্য। বেস্টসেলার, গ্রাফিক উপন্যাস থেকে শুরু করে ক্লাসিক সাহিত্য, বইগুলো এখানে লেখক বা ডিউই ডেসিমেল পদ্ধতিতে সাজানো হয় না, বরং তারা যে আবেগ প্রকাশ করে তা দিয়ে সাজানো হয়। বইগুলো রীতি বা লেখকের নাম অনুসারে ক্যাটালগ করা হয় না। বইয়ের স্থান নির্ধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নয়, বরং শেষ পাঠকের মতামতের ওপর। এমনকি যদি ১০ জন পাঠক একটি বইকে মজার বলে মনে করে এবং একাদশ মনে করে যে এটি নিস্তেজ। তখন সেই বইটি বিরক্তিকর শেলফে চলে যাবে; অন্তত পরবর্তী পাঠক নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত।
গাধা পাঠাগারের গল্প
মানুষের দুয়ারে বই পৌঁছে দিয়ে আসা পলান সরকার সম্পর্কে আমরা জানি। কিন্তু লাতিন আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ার লুইস সোরিয়ানোর গল্প অনেকেরই অজানা। তিনি পেশায় স্প্যানিশ শিক্ষক। এ মানুষটি প্রায় তিরিশ বছর ধরে গাধার পিঠে করে কলম্বিয়ার অজপাড়াগাঁয়ের কোমলমতি শিশু-কিশোরদের বই পড়ার আনন্দ বিলিয়ে দিচ্ছেন। তার সম্প্রদায়ের মাঝে শুধু তারই সংগ্রহে বই ছিল। নানা বয়সির জন্য নানা স্বাদের ৭০টি বই ছিল তার কাছে। লুইসের ছাত্ররা বাড়িতে পড়াশোনা করত না। তাদের বাড়িতে কোনো বই-ই ছিল না। এক শুক্রবার বিকালে লুইস ঠিক করেন এভাবে গাধার পিঠে করে তাদের কাছে বই পৌঁছে দেবেন। স্ত্রী গাধাটার নাম তিনি দিলেন ‘আলফা’। আর পুরুষ গাধাটার নাম দিলেন ‘বেতো’। আগে এ আলফা আর বেতোর কাজ ছিল পানি আনা-নেওয়া করা। এখন তাদের কাজ হলো বই বহন করা। এভাবেই তৈরি হলো তার লাইব্রেরি : ‘বিব্লিওবুররো’। যার বাংলা অর্থ : ‘গাধা পাঠাগার’। লুইস সোরিয়ানোর এ কার্যক্রম গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর সর্বসাধারণ জানতে পারে। এখন একটি রুমে লুইসের সংগ্রহে আছে ৩ হাজার বই। এর বাইরেও আছে শিশুদের পড়ার উপযোগী প্রায় ২ হাজার বই। গাধার পিঠে করে লুইস স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান। পাঁচ বছর আগে একটি দুর্ঘটনায় লুইস তার একটি পা হারান। এখন তিনি কৃত্রিম পা ব্যবহার করেন। লুইস বলেন, ‘ছোটরা জ্ঞান অর্জন করতে পারে, যখন তারা একটি বই তুলে নেয়। তাদের বিস্ময় এবং কল্পনা পরস্পরের সঙ্গে মিলে যায়। তুমি দেখতে পাও, তারা একা একাই হাসতে শুরু করেছে শুধু একটি বইয়ের দিকে তাকিয়ে।’