× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

এআই হ্যাকাথন

চ্যাম্পিয়ন টিম পরিধি

এস এম ইমদাদুল হক

প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:২৮ এএম

চার তরুনের চ্যাম্পিয়ন টিম পরিধি

চার তরুনের চ্যাম্পিয়ন টিম পরিধি

বদলে যাচ্ছে পৃথিবী। নিউরালিংক পড়ছে মানুষের মন। মস্তিষ্কের নিউরনব্যবস্থার অনুকরণে স্নায়ুকোষের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মানবদেহে সংযুক্ত হচ্ছে যন্ত্র। নানা কাজে সহচর হয়ে যন্ত্র ঘোচাচ্ছে যন্ত্রণা। আর যন্ত্রকে আস্থাভাজন দাসে পরিণত করতে জন্ম দিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার। চ্যাটজিপিটি থেকে ডিপসিকÑ এ নিয়ে যখন তাবৎ দুনিয়ায় শোরগোল; তখন রাজধানীর বনানীতে অনুষ্ঠিত হলো এআই হ্যাকাথন। ছোট পরিসরে বপিত হলো বড় ভবিষ্যতের বীজ। এজন্য উর্বর ভূমি প্রস্তুত করে ভিভাসফট এআই হ্যাকাথন ২০২৫। হ্যাকাথনের ধারণা বাস্তবে রূপ দিতে কেউ কাজ করেছেন জেনারেটিভ এআই দিয়ে এসআইইএম নিরাপত্তা বুদ্ধিমত্তা নিয়ে, আবার কেউ বা রিমোট জবের জন্য ভার্চুয়াল ওয়ার্কস্পেস তৈরি করেছেন। এ ছাড়া এআই পাওয়ারড সিকিউরিটি মনিটরিং টুল তৈরি করেও দেখিয়েছেন কেউ।

শুরুটা যেভাবে

দেশে এআই এবং গতানুগতিক ধারার পেশাদার ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে এআই হ্যাকাথনের ধারণা আসে গত বছরের নভেম্বরে। পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে অনুষ্ঠিত বিশ্বের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের অন্যতম বড় সম্মেলন ওয়েব সামিটে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুধুই মানুষের কল্যাণে কীভাবে ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে মেলার প্রতিটি প্যাভিলিয়ন ছিল সরব। সেখান থেকেই দেশে ফিরে এআইকে তরুণদের কাছে জনপ্রিয় করার জন্য কিছু একটা করার কথা ভাবেন আয়োজক প্রতিষ্ঠান ভিভাসফট লিমিটেডের সহপ্রতিষ্ঠাতা শাফকাত আসিফ। আয়োজন নিয়ে তিনি বললেন, ওয়েব সামিট অসাধারণ একটি ইভেন্ট। আইটি খাতের সঙ্গে যুক্ত অনেক মানুষ আসেন এখানে। ইভেন্টে ব্রাজিল ও জার্মানির প্যাভিলিয়নের সবাই ছিল এআই নিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশের কোনো প্রেজেন্স ছিল না। তখনই আমার সহপ্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে আলাপ করে দেশে এআই হ্যাকাথন করার পরিকল্পনা। নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন চলে এআই হ্যাকাথনের। নিবন্ধন শুরুর প্রথম কদিনে তেমন কোনো সাড়া মেলেনি। তবে শেষ দিন একসঙ্গে জমা পড়ে ২০০ আবেদন। সব মিলে আবেদনের সংখ্যা পৌঁছে যায় ৩৭৮টিতে। এমনটাই জানান হ্যাকাথনের সমন্বয়ক হোসাইন আল মুহী। বললেন, প্রাথমিকভাবে ৩৫টি টিম দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য বাছাই করি। এ কাজে আমার সঙ্গে ছিলেন হ্যাকাথনের জাজ প্যানেল। সহযোগিতা করেন কৃপা হোসাইন, মনিরুল ইসলাম রাসেল ও আহসানুল হক তালহা। ফাইনালে ওঠে ৩২ জনের ১০টি টিম। সেখানে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন হগার্থ ওয়ার্ল্ডওয়াইডের (বাংলাদেশ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমতিয়াজ ইলাহি, বিকাশ লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট (সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট) নাবিল আহমেদ লিপন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট (রিসার্চ অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং) শুভ্র সরকার এবং ভিভাসফট লিমিটেডের মেশিন লার্নিং কনসালট্যান্ট আমিনুল ইসলাম।

১০ টাইগার এআই

মহাকর্ষের সমীকরণ সমাধান নিয়ে ২০১৪ সালে তৈরি হয় ইন্টারস্টেলার। যেখানে কুপার এবং তার দল মানবতার জন্য পদার্থবিজ্ঞানের জটিল সমস্যার সমাধানে চেষ্টা করেন। তেমনি নিত্য সমস্যার সমাধানে এআই সল্যুশন তৈরিতে ৩৬ ঘণ্টার চ্যালেঞ্জ নেয় একদল তরুণ। ২৫ জানুয়ারি সকাল ১০টায় শুরু হয়ে চলে ২৬ জানুয়ারি রাত ১০টা পর্যন্ত। এ সময়ে অঙ্কুরিত হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ১০ টাইগার এআই ‘ভার্চুয়াল ইন্টেলিজেন্ট ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট ভিভা, বার্তা এআই, মেটা হাইভ, কোড মেন্টর, মার্কেট ফ্লিক এআই, ফ্রেমওয়াইজ, সাইবার গার্ড জিপিটি, ইবিপিএফ এআই এজেন্ট, এআই স্পিকিং ইভ্যালুয়েটর ও এআই অ্যাসিস্ট প্রো। এর মধ্যে eBPF এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এজেন্টিক সিস্টেম সবাইকে ছাড়িয়ে যায় টিম ‘পরিধি’। চ্যাম্পিয়ন হয়ে জিতে নেয় ২ লাখ টাকা। ১ লাখ টাকা পায় রানার্সআপ টিম ‘ডিফাইন কোডারস’। দ্রুততম সময়ে নির্ভুলভাবে বাজার বিশ্লেষণ করে সমস্যা সমাধানের জন্য ‘মার্কেট ফ্লিক এআই’ বানিয়েছে দলটি। এ ছাড়া এডটেক সল্যুশন ‘পারসোনালাইজ্‌ড টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট ফর কোডিং’ দিয়ে ‘অনারেবল মেনশন’ স্বীকৃতি পায় টিম ‘কোডমেন্টর’।

চ্যাম্পিয়ন পরিধি

ওয়েবসাইট ও অ্যাপ্লিকেশন হোস্টিংয়ের সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিবাগিং করতে সক্ষম অনন্য eBPF এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এজেন্টিক সিস্টেম তৈরি করে হ্যাকাথনে চ্যাম্পিয়ন দল পরিধিতে আছেন তিনজন পেশাদার ইঞ্জিনিয়ার এবং একজন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে কেউই কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের ছাত্র নন। এদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমআইএস থেকে স্নাতকোত্তর করে একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি করেন দলনেতা তাহনিক আহমেদ রাইয়্যান। তিনিই মূলত এআই সিস্টেমটি ডিজাইন করেন এবং ইবিপিএফ টেলেমেট্রি পাইপলাইন ইন্টিগ্রেশন করেন। তারই সহকর্মী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছেলে রায়হান ইসলাম চুয়েট ম্যাকাট্রনিকস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে স্নাতক শেষ করেছেন। হ্যাকাথনে তিনি ব্যাকএন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডেভপসের কাজ করেছেন। আর রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিপল ই স্নাতক আবদুল্লাহ আল আসিফ এআই সিস্টেমের রিজনিং ইঞ্জিন নিয়ে কাজ করেছেন। এ ছাড়া চুয়েট তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুর রহমান ফ্রন্টএন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পুরো কাজটির বাহ্যিক রূপ দেন।

এ চার তরুণ মিলেই এমন একটি এআই সল্যুশন উদ্ভাবন করেন, যেটি দ্রুত সিস্টেমের ত্রুটি শনাক্ত এবং সংশোধনের তাৎক্ষণিক সুপারিশ করে। এজেন্টটি eBPF (Extended Berkeley Packet Filter) প্রযুক্তি ব্যবহার করে নেটওয়ার্কের নিরাপত্তাঝুঁকির পূর্বাভাস দিতে পারে। ডেভেলপারদের সময় বাঁচিয়ে সফটওয়্যার উন্নয়নের পুরো প্রক্রিয়া আরও দক্ষ ও নির্ভুল করে তোলে। এটি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও সাইবার নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ আরও সহজ, দ্রুত এবং সুরক্ষিত করে তুলবে বলে মনে করেন দলনেতা তাহনিক আহমেদ রাইয়্যান। দলের অন্য সদস্য রায়হান বললেন, রান্নার সময় যেমন লবণ-ঝাল টেস্ট করতে হয়; তেমন ক্লাউডে যেকোনো অ্যাপ্লিকেশন আপলোড করার সময় ডিবাগিং করতে হয়। আমাদের সল্যুশনটি ইবিপিএফ প্রযুক্তির মাধ্যমে নেটওয়ার্কিং স্টাফগুলোর ডাটা লগ করে কোনো ম্যালিশিয়াস আছে কি না তা বুঝতে পারে। প্যাকেটের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আগাম পদক্ষেপ গ্রহণে সাহায্য করে। সল্যুশনটি ৪ ঘণ্টার কাজ ১ ঘণ্টায় নামিয়ে আনে।

দেশের তরুণ এআই সল্যুশন উদ্ভাবকদের পিরিধির মতো এমন এলএলএম বা জিপিটি সল্যুশন অচিরেই সীমনা ছাড়িয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের নিজস্ব একটি অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আয়োজকরা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা