হোমিও চিকিৎসক মজনু শেখ
আজিজুল হক
প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:৩৫ এএম
রোগী দেখছেন হোমিও চিকিৎসক মজনু শেখ। প্রবা ফটো
কোনো বাধাই যেন দমিয়ে রাখতে পারেনি প্রতিবন্ধী মজনু শেখকে। ছোটবেলায় শারীরিক গঠন নিয়ে অনেকেই তাকে অবহেলা করলেও এখন সেই মজনুই সবার ভালোবাসার মানুষ হয়ে উঠেছেন। হোমিও চিকিৎসক হিসেবে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে মজনু শেখ গরিবের ডাক্তার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। সকাল থেকে রাত অবধি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন গ্রামের মানুষকে। তার এ কর্মকাণ্ড এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের মোকসেদ আলী শেখের ছেলে মজনু শেখ। জন্মের পর অন্যদের মতো বেড়ে ওঠেননি। এ নিয়ে তাকে শুনতে হয়েছে নানা কটুকথা। হয়েছেন অবহেলার শিকার। কিন্তু সমাজের সেই অবহেলা-অপমান পেছনে ফেলে শপথ নেন কিছু একটা করে সমাজকে দেখিয়ে দেওয়ার। সেই অদম্য ইচ্ছে আর সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যান সামনে। এইচএসসি পাস করার পর ভর্তি হন হোমিওপ্যাথি কলেজে। সেখান থেকে পাস করে ২০০৬ সালে নিজের অজপাড়া গাঁয়ের আরিফ বাজারে কর্মজীবন শুরু করেন। শুরু থেকেই গরিব মানুষের ফ্রি চিকিৎসাসেবা করে যাচ্ছেন। ওষুধও ফ্রি দিচ্ছেন। এখন তিনি আর একটি চেম্বার খুলেছেন পিঠাকুমড়া বাজারে। প্রতিদিন তার কাছ থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা নিচ্ছেন অসহায় দরিদ্র রোগীরা। মজনু শেখের মানবিক কর্মকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে।
স্থানীয়রা জানান, শারীরিকভাবে বেটে হলেও মনের দিক দিয়ে বিশাল হৃদয়ের মানুষ। মানুষের অসুস্থতার খবর তার কানে গেলেই ছুটে যান রোগীর বাড়ি। রাত নেই, দিন নেই সব সময়ই এলাকার মানুষ তাকে কাছে পেয়ে থাকে। শুধু নিজ এলাকাই নয়, পাশের রাজবাড়ী জেলা থেকেও লোকজন তার কাছে আসে চিকিৎসাসেবা নিতে।
মজনু শেখের বাড়ি থেকে তার চেম্বারের দূরত্ব ৫ কিলোমিটার। প্রতিদিন সকাল ৯টায় চিকিৎসাসামগ্রীর ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে ছোট একটি সাইকেল চালিয়ে চেম্বারে আসেন। সেখানে বেলা ১টা পর্যন্ত রোগী দেখেন। দুপুরের খাবার খেতে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি যান। খাবার শেষে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে আবার চেম্বারে আসেন। এভাবে প্রতিদিন মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
মজনু শেখ বলেন, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধিতা নিয়ে অনেক অপমান সইতে হয়েছে। কিন্তু আমি দমে যাইনি। গ্রামের যারা একদিন আমাকে অবহেলা করত সেই তারাই এখন আমাকে নিয়ে গর্ব করে। প্রতিদিন রোগী দেখে যা পাই তা দিয়ে কোনোরকমে স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে চলে যায়। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে অনেক সময় কষ্টের মাঝে দিন কাটাতে হয়।’ তিনি জানান, সরকার কিংবা ব্যক্তিগতভাবে কেউ যদি তাকে সহযোগিতা করত তাহলে তিনি দরিদ্র অসহায় মানুষের চিকিৎসাসেবা আরও ব্যাপকভাবে করতে পারতেন।