মাসুম বিল্লাহ
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৫৫ পিএম
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:০৮ পিএম
কদম গাছের মগডালে কাকের বাসা। বাসায় একটা মাত্র কাকের ছানা। ছানাটি এখনও ভালোভাবে উড়তে শেখেনি। বাসার ভেতর বসে বসে ডানা ঝাপটায় আর ইতিউতি করে। ছানাটির কেবল কিচিরমিচির ডাকাডাকি। কাকের বাচ্চাটি দেখে মনে হচ্ছে সে আকাশে ডানা মেলে ওড়ার জন্য খুব ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।
যা ওর মায়ের চোখেও পড়েছে। মা কাক মনে মনে ভয় পাচ্ছে, যদি তার ছানাটি বাসা থেকে মাটিতে পড়ে যায়! তাহলে তো সর্বনাশ! সেদিন রাতে মা কাক কড়া সুরে বাচ্চাকে বলল, ‘শোনো বাবা, এক দিনে কেউ সাঁতার শেখে না; তেমনি তুমিও এক দিনে ওড়া শিখতে পারবে না। এখনই এত অস্থির হইও না বাছা আমার!’
‘কেন? কেন?’ বাচ্চাটা মাকে প্রশ্ন করল।
‘তোমার এখনও পালক বড় হয়নি যে। তা ছাড়া একটু একটু করে ওড়া শিখতে হয়। তবে খবরদার! এখনই ওড়ার চেষ্টা কোরো না। তাহলে কিন্তু সোজা গিয়ে পড়বে মাটিতে। পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধপাস! ধপাস করে পড়া মানে হলো অকালে তোমার প্রাণটা যাবে!’
বাচ্চাটা মাকে আবারও প্রশ্ন করে, ‘ও মা, সাঁতার মানে কী?’
মা কাক এবার বিরক্ত হয়। আসলেই আজকালকার বাচ্চারা বড্ড প্রশ্ন করে। এরা নাকি জন-আলফা। এদের নিয়ে হয়েছে মুশকিল। মাকে চুপ করে থাকতে দেখে অস্থির হয়ে ওঠে বাচ্চাটা। সে আবারও বলে, ‘ও মা, মা, বলো...সাঁতার মানে কী?’
‘সাঁতার হচ্ছে সাঁতার... সাঁতার হচ্ছেÑ এক প্রকার সাঁতার। যেমন হাঁস পানিতে সাঁতার কাটে, মাছ সাঁতার কাটে; মানুষও পানিতে সাঁতার কাটতে পারে... আর এই হচ্ছে সাঁতার!
মায়ের কথার ফাঁকে বাচ্চাটি আবারও বলে ওঠে, ‘তাহলে আমরাও পানিতে সাঁতার কাটতে যাচ্ছি না কেন?’
‘সবার সাঁতার কাটার নিয়ম নেই। যখন বড় হবে তখন তোমাকে পানিতে গোসল করা শিখিয়ে দেব। এবার ঘুমিয়ে পড়ো, অনেক রাত হয়েছে...।’ মা কাক চরম বিরক্ত হয়ে বলল।
মা ও ছেলের কথা শুনতে শুনতে কদম গাছটি ভাবল, মায়ের মনে সন্তানের জন্য কত শত চিন্তা আর কত যে ভয়! মায়েরা এমনই হয়। গভীর এক শ্বাস ছেড়ে বলল কদম গাছ। এসব ভাবতে ভাবতে একসময় কদম গাছটিও গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।
সকালের আলো ফোটার আগেই মা কাক তার একমাত্র ছেলেকে বাসায় রেখে বেরিয়ে পড়ল খাবারের খোঁজে। কাকেরা মোটেও অলস নয়। ভোরবেলা শহরের রাস্তায় কাকের কা-কা ডাক শুনলেই তা বোঝা যায়। সূর্যের আলো কদম পাতার ওপর আছড়ে পড়তেই কদম গাছটি চোখ মেলল। সে দেখল চারদিকে সূর্যের আলো সোনার টুকরোর মতো আছড়ে পড়ছে। সে-ও গা ঝাড়া দিল। কয়েকটা শুকনো মরা পাতা বাতাসে গড়িয়ে গড়িয়ে মাটিতে গিয়ে পড়ল। সূর্যের তেজ বাড়তেই তার চোখের ঘুমঘুম ভাবটা কেটে গেল।
এ সময় কদম গাছের নিচে মানুষের উঁচু গলা শোনা গেল। সেই সঙ্গে হইচই। হট্টগোল। কান খাড়া করে ব্যাপারটা শোনার চেষ্টা করে কদম। প্রথমটায় ঠিকঠাক বুঝতে পারল না। সে আরেকটু মনোযোগ দেয়, এবার সে পরিষ্কার শুনতে পেল, কেউ একজন চড়া গলায় বলছেÑ কদম গাছ কোনো কাজের না। কাইট্টা ফালামু, আর রাখুম না এইডারে...!’
কদম নিচের দিকে তাকাল। কয়েকজন লোক তাকে কেটে ফেলার আয়োজন করছে। লোকগুলো কুড়াল, করাত, কোদাল, লম্বা দড়ি নিয়ে তৈরি হয়ে আছে। কদমের বুক ধক করে উঠল। সে বুঝে গেল এ পৃথিবীতে আজই তার শেষ দিন! এ মুহূর্তে তার কাকের বাসাটির কথা মনে পড়ল। বাসায় কাকের ছোট্ট বাচ্চাটার কথা মনে পড়ল। ভয়ে তার হাত-পা কাপঁছে। এখন নিজের জন্য আর খারাপ লাগছে না। ছোট্ট কাকের ছানাটার জন্যই বেশি মন খারাপ হচ্ছে, ভীষণ কান্না পাচ্ছে...!