মাসুদ হোসেন
প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:০৭ এএম
তানজিনা আফরোজ তৃষ্ণা
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে জন্ম ও বেড়ে ওঠা তানজিনা আফরোজ তৃষ্ণা তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড়। তাই পরিবারের সবকিছুতেই দায়িত্ব নিতে হয় তাকে। করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে ঘরবন্দির সময়ে বাসায় বসে বেকিং করে নানা রকমের খাবার তৈরি করতেন তৃষ্ণা। পরিবারের লোকজন ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষের আগ্রহ এবং প্রতিনিয়ত নিজের ভালো করার প্রত্যাশায় বেকিং নিয়ে কিছু একটা করতে চেয়েছেন তিনি। ২০২০ সালের এ ঘরবন্দি সময়ে ব্যবসায়ী বাবার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করেন তার শখের ব্যবসা। তিনি মনে করেন নিজের ইচ্ছাশক্তি কাজে লাগিয়ে আজকের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে বহুদূর। তেমনিভাবে একজন শিক্ষার্থীর পরিচয়ের পাশাপাশি একজন সফল উদ্যোক্তার পরিচয় গড়ে তুলেছেন নিজের নামের পাশে তৃষ্ণা। চাঁদপুর সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের এই ছাত্রী পড়াশোনা চালিয়েও হয়ে উঠেছেন একজন সফল উদ্যোক্তা। পাঁচ বছরের উদ্যোক্তা জীবনের এ পথচলায় পরিচিত হয়েছেন একজন পিজ্জা আপু হিসেবে।
খাবারের ওপর আট-দশটি প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন এ নারী উদ্যোক্তা। প্রতি মাসে আয় করছেন ৪০-৪৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২০২৩ সালে হঠাৎ বাবাকে হারিয়ে পড়ে যান চরম দুশ্চিন্তায়। পরে আয়ের একটি অংশ থেকেই নিজের পড়াশোনা, পরিবারের দৈনন্দিন খরচসহ ছোট দুই ভাই-বোনের পড়ালেখার খরচও চালাতে হচ্ছে তাকে। বাকিটা ব্যয় করেন সামাজিক ও মানবিক কাজে। Afroza's kitchen নামে ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া হচ্ছে খাবারের সব আপডেট। বাহারি রকমের সুস্বাদু এসব খাবার চলে যায় হাজীগঞ্জ উপজেলাসহ চাঁদপুরের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে। অর্ডার পাওয়া খাবারগুলো প্রায় রাত জেগে জেগে তৈরি করতে হয় তাকে। খাবার তৈরি ও বিক্রির পাশাপাশি তিনি শুরু করেন অর্গানিক হেয়ার অয়েলের ব্যবসাও। ৫০টির বেশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি করা এ তেলের রয়েছে বিশেষ গুণ।
মায়ের ব্যাপক উৎসাহ আর অনুপ্রেরণায় সফল নারী উদ্যোক্তা তানজিনা আফরোজ তৃষ্ণা বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমি মানুষের কাছে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। তবে শুরুতে অনেকে হাসাহাসি করলেও আজ তারা আমার অবস্থান দেখে নিজেরাই আমার প্রশংসা করছে।
তিনি আরও বলেন, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে আত্মনির্ভরশীল ও প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এ বিজনেসটা শুরু করেছি। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পরে এটা আমার প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়। এ বিজনেসটা দিয়েই আমি আমার পরিবারের পাশে দাঁড়াই।’
তৃষ্ণা বলেন, ‘এ ব্যবসায় তেমন কোনো বড় বাধা পড়েনি, কিন্তু আশপাশের কিছু মানুষ হাসিঠাট্টা করত। তাদের এসব কথা আমলে না নিয়ে আমি আমার বিজনেস নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যেতে চাই। আমি নিজে প্রতিষ্ঠান দেব আর নিজের সেই প্রতিষ্ঠানে আমি কাজ করব।