× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পাকশী ‘রয়েল স্টেট’ ছিল যার নাম

এস এ এইচ ওয়ালিউল্লাহ

প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:০৪ পিএম

আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:২০ পিএম

পদ্মার বুকে দাঁড়িয়ে ঐতিহ্যের প্রতীক হার্ডিঞ্জ রেল সেতু

পদ্মার বুকে দাঁড়িয়ে ঐতিহ্যের প্রতীক হার্ডিঞ্জ রেল সেতু

পদ্মার পুবপারে শত বছরের কড়ই, মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া আর বট গাছের ছায়াঘেরা ‘পাকশী’ পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক শহর; যা বাংলাদেশ রেলওয়ের ইতিহাসে শত বছরের বেশি সময় ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠা এ শহরটি কেবল রেল যোগাযোগের জন্য নয়, বরং ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং আধুনিক উন্নয়নের জন্যও বিখ্যাত। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের মতো স্থাপত্য থেকে শুরু করে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো আধুনিক স্থাপনাগুলো পাকশীর এক অনন্য পরিচয় বহন করে চলেছে। একটু একটু করে সাজানো অপরূপ পাকশীকে ‘রয়েল স্টেট’ উপাধিতে ভূষিত করেছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার।

হার্ডিঞ্জ ব্রিজ তৈরি শুরু হলে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পাকশীতে নির্মিত প্রথম অফিস ভবন। এই ভবনেই বসতেন তৎকালীন পৃথিবীর প্রকৌশল জগতের দুই দিকপাল প্রকৌশলী স্যার  রবার্ট উইলিয়াম গেইলস এবং স্যার ফ্রান্সিস

রেলের শহর পাকশী

তৎকালীন সাঁড়াঘাট তথা পাকশীর গোড়াপত্তন ঘটে মূলত ব্রিটিশদের হাতে। কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি (বাংলাদেশের কুষ্টিয়া ও উত্তরবঙ্গ হয়ে) পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণই এ অঞ্চলকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।

১৮৭৪ সালে নর্দান বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ে কোম্পানি ঈশ্বরদীর সাঁড়াঘাট (আজকের পাকশী) থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু করে। পদ্মার উত্তরপারে নির্মিত হয় সাঁড়াঘাট রেলওয়ে স্টেশন। সাঁড়াঘাট থেকে আবদুলপুর, সুলতানপুর (সান্তাহার), পার্বতীপুর, সৈয়দপুর, নীলফামারী হয়ে চিলাহাটি দিয়ে শিলিগুড়ি পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ শেষ হয় ১৮৭৮ সালে। পদ্মার অন্য পারে কলকাতা থেকে কুষ্টিয়ার দামুকদিয়া পর্যন্তও রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ হয়। কিন্তু মাঝখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রমত্তা পদ্মা। সে সময় দামুকদিয়া থেকে সাঁড়াঘাট (পাকশী) পর্যন্ত নদী পারাপারের জন্য রেলওয়ে পরিচালিত স্টিমারের ব্যবস্থা ছিল, যেগুলোতে মানুষ পার হতো। ছিল রেল ফেরিও। ফেরি পারাপারের দুর্ভোগ ঘোচাতে খরস্রোতা পদ্মার ওপর ১৯১৫ সালে নির্মিত হয় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণে প্রয়োজনীয়তা হারায় সাঁড়াঘাট স্টেশন।

এ সময়েই পাকশীকে গড়ে তোলা হয় রেলওয়ে সদর দপ্তর হিসেবে এবং বিখ্যাত সাঁড়াঘাট পরিবর্তিত হয়ে রূপ নেয় পাকশী রেলনগরীতে।

নির্মাণ করা হয় মনোরম পাকশী স্টেশন। ব্রিজ নির্মাণের সময় ঠিকাদার কোম্পানি ‘ব্রেইথ ওয়াইট অ্যান্ড কার্ক’ ব্যবহৃত অবকাঠামোগুলো সংস্কার করে তৈরি করা হয় রেলওয়ে অফিস। প্রকৌশলী রবার্ট গেইলসের বাংলোর পাশেই তৈরি হয় রেলওয়ে অফিসারদের জন্য অফিসার্স কোয়ার্টার বা সাহেবপাড়া। এরপর অন্য কর্মচারীদের জন্য ব্রিটিশ স্থাপত্য ও নগর পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিকল্পিতভাবে একে একে গড়ে তোলা হয় সাহেবপাড়া, মেরিনপাড়া, গ্রেইনশপ কলোনি, বাবুপাড়া ইত্যাদি কলোনি। অসংখ্য রেইনট্রি লাগিয়ে সবুজে ঢেকে দেওয়া হয় পুরো পাকশী। শিক্ষার জন্য গড়ে ওঠে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শরীরচর্চা ও মানসিক বিকাশের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয় খেলার মাঠ (ইনস্টিটিউটের মাঠ), ক্লাব ও শিশু পার্ক (গার্লস স্কুলের পেছনে ছিল)। স্থাপন করা হয় হাসপাতাল। সর্বোপরি ব্রিটিশ পরিকল্পনায় পাকশীকে তৈরি করা হয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নাগরিক সুবিধাসংবলিত এক অভিজাত রেলনগরী হিসেবে। এ পাকশীই ছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের সদর দপ্তর। পরে তা রাজশাহীতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে পাকশী বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী বিভাগের বিভাগীয় শহর এবং সদর দপ্তর।

শতবর্ষী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ : ঐতিহ্যের প্রতীক

পাকশীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হলো হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। ১৯১৫ সালে প্রমত্তা পদ্মার ওপর নির্মিত এ ব্রিজটি ব্রিটিশ শাসনামলের একটি প্রকৌশলগত বিস্ময়। এমনকি সে সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকৌশল প্রকল্পগুলোরও একটি। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ বাংলাদেশের ইতিহাস ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার এক অনন্য নিদর্শন। পাবনার পাকশী এবং কুষ্টিয়ার ভেড়ামারাকে সংযোগকারী ১.৮ কিমি দীর্ঘ সেতুটির নকশা করেছিলেন বিখ্যাত ব্রিটিশ প্রকৌশলী রবার্ট গেইলস। ব্রিজটির নামকরণ হয় তৎকালীন ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের নামে। ব্রিজটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছিল উন্নতমানের স্টিল এবং কংক্রিট, যা তৎকালীন প্রযুক্তির উচ্চমানকে উপস্থাপন করে।

ব্রিটিশ স্থাপত্যের নিদর্শন ‘ গেলে কুঠি’

পাকশীতে অবস্থিত রেলওয়ে সদর দপ্তরের অফিসার্স কোয়াটার এলাকায় স্থাপিত রবার্ট গেইলসের বাংলো ব্রিটিশ শাসনামলের একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। ব্রিটিশ প্রকৌশলী রবার্ট গেইলস হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণের সময় এ বাংলোয় অবস্থান করতেন। এ বাংলোয় বসেই তিনি হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নকশা, জরিপ এবং নির্মাণ কৌশল উদ্ভাবন করেন। আজও এ বাংলোটি পাকশীর ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক হয়ে রয়েছে।

এটি নির্মাণ করা হয়েছিল স্থানীয় পরিবেশ এবং আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই করে। বাংলোটির চারপাশের ছায়াঢাকা গাঢ় সবুজ স্নিগ্ধ পরিবেশ দর্শনার্থীদের কাছে একে আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘গেলে কুঠি’ নামে পরিচিত।


ঐতিহ্যের ধারক পাকশী রেলওয়ে স্টেশন

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত পাকশী রেলওয়ে স্টেশন বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহাসিক স্টেশন। এটি দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে রেল যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। স্টেশনটি শুধু যাত্রাবিরতির স্থান নয়; ঐতিহ্যের প্রতীকও বটে।

স্টেশন ভবনের ছাদ, প্রশস্ত প্ল্যাটফর্ম এবং অপেক্ষার জায়গাগুলোয় ইউরোপীয় স্থাপত্যের ছোঁয়া স্পষ্ট। রেললাইনসংলগ্ন সবুজ পরিবেশে ঘেরা প্ল্যাটফর্ম এবং হার্ডিঞ্জ ব্রিজের দৃশ্যপট স্টেশনটি আরও মনোরম করে তুলেছে।

রূপসা-বাগেরহাট সেকশনে চলাচলকারী প্রথম ন্যারোগেজ ট্রেনের ইঞ্জিন ও বগি এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় হার্ডিঞ্জ ব্রিজে নিক্ষিপ্ত গোলার অংশবিশেষ

হার্ডিঞ্জ ব্রিজে নিক্ষিপ্ত বোমার অংশ মুক্তিযুদ্ধের এক নীরব সাক্ষী

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এ ব্রিজটি মুক্তিযুদ্ধের সময় উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের মধ্যে যোগাযোগের মূল কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। এ কারণেই ব্রিজটি মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জন্যও ছিল কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযোদ্ধারা ব্রিজটি ধ্বংসের মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনাদের রসদ ও সরঞ্জাম পরিবহন ব্যাহত করার পরিকল্পনা করেছিলেন।

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শক্তিশালী বোমা নিক্ষেপ করে ভেঙে দেওয়া হয় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। ওই দিন বেলা ১১টায় পাকিস্তানি সেনাদের অবাধ চলাচলে বাধা সৃষ্টি ও চলমান যুদ্ধকৌশলের অংশ হিসেবে ভারতীয় যুদ্ধবিমান থেকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ওপর দিয়ে পলায়নপর পাকিস্তানি সেনাদের লক্ষ করে বোমা নিক্ষেপ করা হলে সেতুটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেতুর প্রায় ৪০ ফুট অংশ দ্বিখণ্ডিত হয়ে নদীতে পড়ে যায়। এ ছাড়া ১৫ নম্বর স্প্যানের একটি ক্রসগার্ডার ও দুটি স্ট্রিঞ্জার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৯ নম্বর স্প্যানটির নিচের অংশ মারাত্মকভাবে দুমড়ে যায় এবং ২ নম্বর সেতু স্তম্ভের ওপরের ইস্পাতের ট্রাসেলটিও বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

’৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর হার্ডিঞ্জ ব্রিজে নিক্ষিপ্ত বোমার খোলসটি এখনও পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে অফিসের সামনে সযত্নে প্রদর্শিত হচ্ছে।

রূপসা-বাগেরহাট সেকশনের প্রথম ন্যারোগেজ ট্রেন

বাংলাদেশের অন্যতম সচল ন্যারোগেজ রেলপথ ছিল রূপসা-বাগেরহাট সেকশনে। এ ছাড়া এটি ছিল দেশের একমাত্র বিচ্ছিন্ন রেলপথ। অর্থাৎ দেশের মূল রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে এর কোনো সংযোগ ছিল না। ১৯১৬ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। একটি ব্রাঞ্চ লাইন কোম্পানি রেলপথটি নির্মাণ করে। নির্মাণ শেষ হয় ১৯১৮ সালে এবং সে বছরই ১০ জুন ট্রেন চলতে শুরু করে। খুলনা শহরের ওপারে পূর্ব রূপসা ঘাট থেকে বাগেরহাট পর্যন্ত এ রেলপথের দূরত্ব ছিল ৩২ কিলোমিটার। ১৯৬৯ সালে এ লাইনকে ব্রডগেজে রূপান্তর করা হয়। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সরকার লোকসানের কারণ দেখিয়ে রেলপথটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকার পর ২০১২ সালে সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করে এ সেকশনকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে এ রেলপথের চিহ্ন খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। তবে এ সেকশনে চলাচলকারী প্রথম ট্রেনটির ইঞ্জিন ও একটি বগি এখনও পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ের সামনে সংরক্ষিত রয়েছে।

রেলওয়ে কলোনি

মূলত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণের আগে এবং রেলওয়ে সদর দপ্তর স্থাপনের পরে পাকশীতে ইংরেজ সাহেবরা নিজেদের এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসবাসের জন্য একাধিক কলোনি নির্মাণ করেন।

সাহেবপাড়া : শত বছরের ঐতিহ্যবাহী সাজানো নগরী পাকশীর সবচাইতে অভিজাত পাড়াটির নাম ছিল সাহেবপাড়া। তৎকালীন ইংরেজ সাহেবরা পাড়াটিতে বসবাস করতেন বলে পাড়াটির এ নামকরণ। এ পাড়ার প্রতিটি বাড়ি গড়ে উঠেছিল লন্ডনের অভিজাত খামারবাড়ির আদলে। বিশাল এক একটা বাংলোবাড়িতে তৎকালীন অত্যাধুনিক সুযোগসুবিধার সব ব্যবস্থাই ছিল। এমনকি বিনোদনের জন্য এ পাড়ায় ছিল একটি অভিজাত ক্লাব। ক্লাবটিতে সে সময় থেকে লন টেনিস, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন, বিলিয়ার্ড খেলার ব্যবস্থাসহ বল ড্যান্সের ফ্লোর পর্যন্ত ছিল।

সিনিয়র সাব-অর্ডিনেট/ গ্রেইনশপ কলোনি : এটি ছিল রেলওয়ে অধস্তন ইংরেজ কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত কলোনি। এ কলোনিটির নামকরণের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে রেলওয়ে কর্মচারীদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু ছিল। পাকশীর রেলশ্রমিকদের রেশনিং ব্যবস্থা পরিচালনা করা হতো সিনিয়র সাব-অর্ডিনেট কলোনির বড় আকারের একটি বাংলো থেকে। বাংলোটি থেকে ফুড গ্রেইন সরবরাহ করা হতো বলে এর নাম ছিল গ্রেইন শপ। সময়ের পরিক্রমায় এ গ্রেইন শপ বাংলোর নামেই ‘সিনিয়র সাব-অর্ডিনেট’ কলোনির নাম হয়ে যায় গ্রেইনশপ কলোনি। ঈশ্বরদী ইপিজেড তৈরির সময় কলোনিটি ভেঙে ফেলা হয়েছে।

মেরিনপাড়া : পাকশী স্টেশন থেকে কলোনির দিকে এগোলে প্রথম যে কলোনিটি পড়ে মূলত সেটিই হচ্ছে মেরিনপাড়া। নামটি শুনে মনে হতে পারে জাহাজ বা বন্দরসংক্রান্ত কিছু একটা ছিল এ পাড়ায়। ধারণাটি আংশিক সত্য। পাকশীতে স্থায়ী কোনো বন্দর ছিল না। তবে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ তৈরির সময় ব্রিজ তৈরির সরঞ্জাম নিয়ে আসা হতো জাহাজে করে নদীপথে। আর সে সময় এ জাহাজের শ্রমিকদের বসবাসের জন্য তাঁবু ফেলা হয়েছিল পাকশীর এ স্থানটিতে। যেহেতু মেরিন শ্রমিকরা এ কলোনিটিতে বসবাস করত তাই ধীরে ধীরে লোকমুখে এর নাম হয়ে যায় মেরিনপাড়া।

বাবুপাড়া : পাকশী রেলওয়ের কেরানি পদের কর্মচারীদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল এ পাড়াটি। কেরানিপাড়ার নাম বাবুপাড়া কেন হলো- এমন প্রশ্নের আশ্চর্যজনক এক উত্তর জনশ্রুতি থেকে পাওয়া যায়। ব্রিটিশ আমলে বেশিরভাগ কেরানি ছিল জাতিতে হিন্দু। তারা যে ধুতি পরত তার কাছাটি বানরের লেজের মতো মনে হতো। আর বানরেরই আরেকটি প্রজাতির নাম হলো বেবুন। মূলত এ বেবুন শব্দ থেকেই বাবু শব্দের উৎপত্তি। যেহেতু কেরানিরা অর্থাৎ বাবুরা এ কলোনিতে বাস করত তাই এ কলোনির নামকরণ হয়েছিল বাবুপাড়া। ব্রিটিশদের প্রথা অনুযায়ী আজও রেলওয়ের কেরানিদের বাবু বলেই সম্বোধন করা হয়।


রেলওয়ে সদর দপ্তর পাকশী

পাকশী ছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের সদর দপ্তর। আশির দশকে দপ্তরটিকে রাজশাহীতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে পাকশী বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘পাকশী বিভাগ’-এর বিভাগীয় শহর এবং সদর দপ্তর।

গ্রাম আর শহরের মিশেল ঢঙে সাজানো-গোছানো এ দপ্তর থেকেই দেশের রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের (পাকশী বিভাগ) যোগাযোগব্যাবস্থার নিয়ন্ত্রণ এবং দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করা হয়। গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি এবং ঈশ্বরদী হয়ে রাজশাহী ও খুলনা পর্যন্ত বিস্তৃত পাকশী বিভাগ। রেলওয়ে পাকশী বিভাগের ২১ জেলায় ১১৩টি বি ক্লাস ও ৩৮টি ডি ক্লাস স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৪৩টি স্টেশন।

পাকশী দরবার শরিফ 

পাকশীতে অবস্থিত ফুরফুরা দরবার শরিফ মুসলিম ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। আধ্যাত্মিকতার প্রভাব ও ইসলামি শিক্ষার প্রচার-প্রসারে এ দরবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রায় ২২ একর জমির ওপর ১৯৩২ সালে ফুরফুরা দরবারের ‘কায়েম মোকাম পাকশী’র গোড়াপত্তন হয় এবং ১৯৫৮ সাল থেকে প্রতি বছর এখানে ওয়াজ ও ইসালে সওয়াব মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর মাহফিল উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানের আগমন ঘটে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র 

পাকশী থেকে সামান্য দূরে অবস্থিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক প্রকল্প। এটি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দেশের সক্ষমতা প্রদর্শন করছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের রাশিয়ান কর্মকর্তাদের আবাসনের লক্ষ্যে গড়ে উঠেছে রূপপুর গ্রিন সিটি, যা পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের প্রতীক।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা