নেত্রকোণা
জিয়াউর রহমান, নেত্রকোণা
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:১৭ এএম
দখল ও চর পড়ে অর্ধমৃত সদর উপজেলার বাইরাউড়া এলাকার এক কালের প্রমত্তা পাটেশ্বরী নদী। প্রবা ফটো
নদ-নদী, খাল-বিল ও হাওর অধ্যুষিত নেত্রকোণা জেলা। একসময় নদীপথই ছিল এ জেলার মানুষের যাতায়াত ও ব্যবসাবাণিজ্যের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু কালের আবর্তে নদীপথ বর্তমানে বিলীন বললেই চলে। বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক নদীও। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে নদীনির্ভর কৃষি অর্থনীতিসহ সাধারণ মানুষের জীবনজীবিকায়।
জেলা পনি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জেলায় সাতটি বড় নদ-নদীসহ মোট ১২২টি ছোটবড় নদী ও খাল ছিল। জেলার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া বৃহৎ সাতটি নদীর মোট দৈর্ঘ্য ৩৩৪ কিলোমিটার ও ছোটবড় ১১৫টি নদীর দৈর্ঘ্য ৫১২৫.৬ কিলোমিটার। জেলার ১২২টি নদ-নদীর মধ্যে বড় সাতটি নদ-নদী হলো সোমেশ্বরী, কংস, মগড়, উব্দাখালী, ধনু, ভোগাই ও গুমাই। ছোট ১১৫টি নদী বর্তমানে খালে পরিণত হয়েছে।
এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৮টি খাল রয়েছে। এছাড়াও কলমাকান্দা উপজেলার ১৪টি নদী ও খাল, কেন্দুয়া উপজেলার ১৬টি নদী ও খাল, বারহাট্টা উপজেলায় ২৬টি খাল, পূর্বধলা উপজেলায় ১১টি খাল, খালিয়াজুরী উপজেলায় সাতটি নদী ও খাল, মদন উপজেলায় পাঁচটি খাল এবং আটপাড়া উপজেলার দুটি খাল রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী এসব নদী-খালের বিভিন্ন অংশ যে-যার মতো দখলে নিয়ে পানি শুকিয়ে মাছ ধরে ধান চাষ করছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অদৃশ্য কারণে নীরব।
কংস, মগড়া, সোমেশ্বরী, উব্দাখালী ও ধনু নদের দুই পারের কৃষক জানায়, তারা আগে নদীর পানি দিয়ে সারা বছর ঘরগেরস্থালির কাজ করত। বোরো ফসলের মাঠে সেচ দেওয়ার কোনো চিন্তা করতে হতো না। এখন আর জমিতে সেচ দেওয়ার মতো পানি নেই।
তারা আরও জানায়, এলাকার জেলেরা নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু প্রভাবশালী মহলের দখলে থাকায় বঞ্চিত হয়েছে জেলেসহ সাধারণ মানুষ। তীরে যাদের জমি আছে তারা নদী দখলে নিচ্ছে। যাদের জমি নেই তারাও ধান লাগানোর ছলনায় নদী দখল করছে। কেউ নদী থেকে বালি উত্তোলন আবার অনেক জায়গায় অবৈধভাবে ইটের ভাটা বসিয়ে রমরমা ব্যবসা করা হচ্ছে।
স্থানীয় পরিবেশকর্মী অহিদুর রহমান বলেন, ‘জেলার নদ-নদীগুলো চিহ্নিত করে পুনরুদ্ধার ও গতিশীল করা এখন সময়ের দাবি।’
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান বলেন, ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি নদী ও বেশ কয়েকটি খাল খননের কাজ চলমান রয়েছে। আরও ২৪টি খাল খননের প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, ‘যেসব নদ-নদী ও খাল খননের প্রয়োজন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে তার একটি তালিকা তৈরি করে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। নদীর জায়গা থেকে সব ধরনের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হবে।’