কালীগঞ্জের বামনের বিল
হাবিব ওসমান, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:১৩ এএম
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:১৭ এএম
বর্ষা শেষে মাছ ধরাই বামনের বিলপাড়ের মানুষের অন্যতম পেশা। প্রবা ফটো
প্রাকৃতিকভাবেই শস্য ও মৎস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়নের নাটোপাড়ার বামনের বিল। বিলের সঙ্গেই সংযুক্ত বেগবতী ও ফটকি নদী। বামনের বিলটি বেগবতী ও ফটকি নদী মোহনাসংলগ্ন হওয়ায় বিলটি পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয়।
কালীগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে জামাল ইউনিয়নের নাটোপাড়া থেকে শুরু বামনের বিল। নাটোপাড়া কালীগঞ্জ উপজেলার পূর্বাঞ্চলের শেষ গ্রাম। এ বিলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে ফটকি ও বেগবতী নদীর মিলন। মৌসুমের সঙ্গে সঙ্গে পেশারও পরিবর্তন করে এ বিলপারের মানুষ। বর্ষা মৌসুমে ঝিনাইদহ, মাগুরা ও যশোরের বিভিন্ন উপজেলা থেকে মানুষ বিল ভ্রমণে আসে সৌন্দর্য উপভোগ করতে। আর এ সময় বিলপারের মানুষ ডিঙি ও ট্রলার চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। বর্ষা মৌসুমে বিলপারের মানুষ নৌকা ভাড়া ও মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত থাকে। আবার শুষ্ক মৌসুমে কৃষির পাশাপাশি অনেকে মাছ ধরেও জীবিকা নির্বাহ করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিলটি শুকিয়ে পানি ফটকি ও বেগবতী নদীতে গিয়ে জমেছে। নদী দুটির পানিও কমে আসছে তাই এখানকার বাসিন্দারা এখন আর নৌকা বা ট্রলারে ভাড়ায় যান না। এখন তারা ডিঙি নিয়ে মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত। নদী এবং সংলগ্ন কয়েকটি খালে তারা ভেসাল, ঝাঁকি ও পাতা জাল এবং বাঁশের তৈরি বিভিন্ন যন্ত্র ও বড়শি দিয়ে দেশি প্রজাতির বিভিন্ন রকমের মাছ শিকার করছে। এতেই জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে। কেউ আবার বিলের জমিতে আগাছা পরিষ্কার করছে, কেউ কেউ ধান ও অন্যান্য শস্য চাষ করার জন্য জমি উপযোগী করার কাজে ব্যস্ত। এভাবে এপারের মানুষ মৌসুমের সঙ্গে সঙ্গে পেশারও পরিবর্তন করে।
কথা হয় নাটোপাড়া গ্রামের পল্লী চিকিৎসক ফরিদ আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বেগবতী, ফটকি নদীর মোহনা এবং সংলগ্ন বামনের বিলটি তিন দিক দিয়ে সমৃদ্ধ কারণ এখানে বর্ষার সময় মাছ ধরা ও পর্যটক নিয়ে বিল ভ্রমণ করে মানুষ আয়-রোজগার করে। আবার শুষ্ক মৌসুমে কৃষিকাজ এবং নদী, খাল ও বিলে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। এবার বৃষ্টি বেশি হওয়ায় মাছের পরিমাণও বেমি। এখন বিলপারের মানুষ মাছ ধরে হাটবাজারে বিক্রি করছে। আর বর্ষার সময় এখানে লোকসমাগম বেশি হয়; কারণ বিভিন্ন এলাকা থেকে সব বয়সি ভ্রমণপিপাসু মানুষ আসে বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। বর্ষার সময় বিলের অপরূপ সৌন্দর্য দেখার জন্য মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। তবে বিকালের দিকে ভিড় বেশি থাকে।’
বর্ষা মৌসুমে বামনের বিলে মাছে ভরে ওঠে। বর্ষার পানিতে প্রচুর দেশি মাছ প্রবেশ করে। বিলের নিচু অংশে প্রায় পুরো বছরই চলে মাছ শিকার। অনেকেই বিলের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট পুকুর খনন করেছে। এসব পুকুরে দেশি মাছের চাষ হচ্ছে। এ থেকে বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে বহু মানুষের। বামনের বিল কেন্দ্র করে ঝিনাইদহ সদর, শালিখা, কালীগঞ্জ এ তিন উপজেলাই অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। কৃষিকাজের পাশাপাশি মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে অনেকে। অনেকে আবার বিলের উন্মুক্ত জলাশয়ে হাঁস পালন করছে। বাঁশ-বেত শিল্প ও জাল বোনার মতো পুরোনো পেশা আঁকড়ে রেখেছে অনেকে।
তিন উপজেলার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বিলের মাটি খুব উর্বর। ফলে বিলের উঁচু জমিতে প্রায় সব ধরনের ফসল উৎপাদিত হয়। শুকনো মৌসুমে কৃষিপ্রধান হয়ে ওঠে বামনের বিল। বিলের টাটকা ঘাস ও ধানের খড়ে খাবারের জোগান হয় গবাদি পশুর। বিলপারের বহু মানুষ গরু-ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছে। বিকল্প পেশা হিসেবে অনেকে হাঁস-মুরগি পালন করছে। বিলের উন্মুক্ত জলাশয়েই মিলছে হাঁসের খাবার। বাড়তি খরচ কম হচ্ছে। অন্যদিকে বর্ষায় বিলে মাছ ধরে বাড়তি আয় করে এখানকার বাসিন্দারা।
কালীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাসান সাজ্জাদ বলেন, ‘এবার বৃষ্টি বেশি হওয়ায় বামনের বিলসহ উপজেলার খাল-বিল, বাঁওড়, পুকুর ও নদীনালায় দেশি প্রজাতির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী মাছের উৎপাদন আরও বৃদ্ধির জন্য মৎস্য বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। অবৈধভাবে মাছ শিকার বন্ধ করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। পরিকল্পিতভাবে বামনের বিল ব্যবহার করা গেলে আরও অনেক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হতো বলে আমি মনে করি।