অন্দরসজ্জা
নুসরাত খন্দকার
প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৫৯ পিএম
আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:১৪ পিএম
ঘরের সাজসজ্জা শুধু আসবাবপত্র কিংবা রঙে সীমাবদ্ধ নয়; একটি ভালো কার্পেট ঘরের সৌন্দর্যকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
ঘরে কার্পেট রাখলে আলাদা লুক তৈরি হয়। কার্পেট ঘরের জন্য একটি ফোকাল পয়েন্ট তৈরি করতে সাহায্য করে। হাঁটা বা বসার জন্য আরামদায়ক একটি স্তর যোগ করে। শীতকালে কার্পেট ঘরে উষ্ণতা ধরে রাখতে সহায়তা করে। এ ছাড়া কার্পেট মেঝেতে শব্দের প্রতিধ্বনি কমায়, যা ঘরকে শান্তিপূর্ণ রাখে। রঙ, ডিজাইন, মোটিফের বুনটে একেকটা কার্পেট একেকরকম গল্প বলে। কোথাও প্রকৃতির ছবি, তো কোনোটাই জিওমেট্রিক প্যাটার্ন, আবার কোনোটায় অ্যাসিমেট্রিক্যাল হিজিবিজি মোটিফ। রঙে, রেখায়, আবেদন কেউ কারও থেকে কম নয়। এ যেন কোনো শিল্পীর ক্যানভাসে আঁকা ছবি, ভালোলাগা ও ভালোবাসার কাহিনী।
কৌলীন্য বিচার করলে পারসি আর কাশ্মিরি কার্পেটের কোনো বিকল্প নেই।
ট্র্যাডিশনাল নকশা, মোটিফের দারুণ ছবি,
সিল্ক বা উলের হাতে বোনা এই কার্পেটের আভিজাত্য একেবারেই আলাদা।
সাবেকি ফুলের নকশা কিংবা চমকপ্রদ ওরিয়েন্টাল ডিজাইনের জন্য ঘরে একটা আলাদা মাত্রা
এনে দেয়। কথায় আছে পারসিদের থাকেই কাশ্মিরিরা কার্পেট বুনতে শেখে। আর তাই দুয়ের
ডিজাইনে কিছুটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রসঙ্গে কাশ্মিরি রাগ-এর কথা না বললেই
নয়। আসলে কার্পেটের তুলনায় রাগ পরিষ্কার করা সহজ। আর তাই দিনে দিনে এদের চাহিদা
ক্রমশ বাড়ছে। বাড়িতে রাগ মানেই জুয়েল টোন রঙ, যেমন
সাফায়ার ব্লু, চুনী, পান্না,
সবুজ, অ্যাকোয়ামেরিন, আয়ভরি, অ্যামেথিস্ট রঙের মায়াজাল।
ট্র্যাডিশনাল ভারী কার্পেটের পাশাপাশি এখন অবশ্য হালকা সিন্থেটিক ও
অন্যান্য ফ্যাব্রিকের কার্পেটেরও কদর রয়েছে। রোজকার ব্যবহারের জন্য একেবারে আদর্শ।
আর দর্শন এবং গুণে এরাও কিন্তু কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। আরও একটা প্লাস পয়েন্টÑ এই
ধরনের কার্পেট ওয়াশেবল ফ্যাব্রিকে তৈরি হয়। ফলে নিয়মিত ব্যবহারের কারণে নোংরা হয়ে
গেলেও চিন্তার কোনও কারণ থাকে না। অনায়াসেই ধুয়ে ফেলা যায়। আর তাই তো সেন্টার টেবিলের
তলায় কিংবা খাটের পাশে সারা বছরই দেখতে পাওয়া যায় শ্যাগি রাগ কিংবা নরম তুলোর কার্পেট।
বাড়িতে কার্পেট থাকলে অন্দরসাজে আলাদা একটা লুক আসে ঠিকই, কিন্তু যেকোনো জায়গায়, যেকোনো রকমের কার্পেট কিন্তু মোটেও ভাল লাগে না। অন্দরসাজের ক্ষেত্রেও
আসলে একটা ধারা আছে। সবটা না মেনে, নিজের পছন্দ ও রুচি
অনুযারী ঘর সাজাতেই পারেন, কিন্তু ছোট পরিসরে নিশ্চয়
বিশাল আয়তনের কার্পেট ভালো লাগবে না।
বসার ঘরে মেঝে জুড়ে যে কাশ্মিরি অথবা পারসি
কার্পেট দেখতে ভালো লাগবে, খাওয়ার
জায়গায় নিশ্চয়ই সেটা ততটা ভালো লাগবে না। সেখানে আবার
প্রয়োজন হবে ছোট, ছিমছাম, ওয়াশেবল
রাগ-এর। বসার
ঘর হলো ঘরের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হওয়া স্থান। এখানে কার্পেট এমন হতে হবে, যা দৃষ্টিনন্দন
এবং টেকসই। মখমলের কার্পেট কিংবা জ্যামিতিক বা বিমূর্ত ডিজাইনের কার্পেট বেছে নিতে
পারেন। যদি ঘরটি বড় হয় তাহলে গাঢ় রঙের কার্পেট রাখতে পারেন।
শোবার ঘরে আরামের পরিবেশ তৈরি করতে নরম ফাইবারের কার্পেট রাখতে পারেন।
চেষ্টা করুন হালকা রঙের কার্পেট রাখতে। যেমন : ক্রিম, প্যাস্টেল বা হালকা ধূসর রঙের
কার্পেট বেছে নিতে পারেন। এ ছাড়া উল বা সিনথেটিক কার্পেটও রাখতে পারেন। বিছানার তিনপাশে
কার্পেট রাখতে পারেন। এতে হাঁটার সময় আরাম অনুভব করা যায়।
ডাইনিং
রুমে কার্পেট নির্বাচনে একটু ভিন্ন কৌশল প্রয়োজন। এটি এমন হতে হবে, যা সহজে পরিষ্কার
করা যায় এবং টেকসই। এজন্য আদর্শ হবে লো-পাইল কার্পেট (কম লোমযুক্ত)। গাঢ় রঙ বা মসৃণ
প্যাটার্নের কার্পেট বেছে নিতে পারেন।
যদিও রান্নাঘরে
কার্পেটের ব্যবহার কম হয়, তবে এটি ব্যবহার করা যায় রান্নার জায়গায় আরাম যোগ করার জন্য।
এক্ষেত্রে ওয়াশেবল কার্পেট বেছে নিন। ছোট আকারের কয়েকটি রানার কার্পেট রাখতে পারেন।
বাচ্চাদের ঘরে মজার, রঙিন এবং আরামদায়ক কার্পেট মানানসই। কার্টুন
বা রঙিন ডিজাইনযুক্ত কার্পেট রাখতে পারেন। সঙ্গে খেয়াল রাখবেন কার্পেটটি যেন অ্যান্টি-স্লিপ
এবং নরম উপাদানের হয়।
আর সঙ্গে অবশ্যই মাথার রাখতে হবে আপনার পুরো বাড়ির ডেকর।
কন্টেম্পোরারি আর আধুনিক অন্দরমহলে একরকম কার্পেট ভালো লাগবে,
আবার এথনিক সাজের সঙ্গে অন্যরকম। আর ঘরের অন্যান্য জিনিসের মতোই
কার্পেটের ক্ষেত্রেও কিন্তু কালার প্যালেটের সামঞ্জস্য বজায় রাখবেন। না হলে খুব
বেমানান লাগবে। আর সেটাই তো অন্দরসাজের মূল মন্ত্র।