সন্তান
ওয়াসি তানজীম
প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৫৭ পিএম
আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:১৪ পিএম
শিশুর মানসিক ও একাডেমিক বিকাশের জন্য একটি উপযুক্ত পড়ার ঘর প্রয়োজন। ঘরের পরিবেশ যদি আরামদায়ক ও মনোযোগ ধরে রাখার উপযোগী হয়, তাহলে শিশুর পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ও মনোযোগ অনেক বেড়ে যায়।
শিশুদের পড়ার ঘর সাজাতে কিছু নির্দিষ্ট বিষয় মাথায় রাখা উচিত। চলুন জেনে নেওয়া যাক শিশুর পড়ার ঘর কেমন হওয়া উচিত।
পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস
শিশুর পড়ার ঘরে
পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো ও বাতাস থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সূর্যের আলো ঘরকে উজ্জ্বল
করে এবং শিশুর চোখকে সুরক্ষা দেয়। পড়ার জায়গাটি জানালার কাছাকাছি হলে প্রাকৃতিক আলো
কাজে লাগানো সম্ভব। রাতে পড়াশোনার জন্য উজ্জ্বল কিন্তু চোখের আরামদায়ক আলো বেছে নিতে
হবে। টেবিল ল্যাম্প ব্যবহার করলে সেটি এমনভাবে স্থাপন করুন, যাতে আলো সরাসরি চোখে না
পড়ে।
শান্ত ও নিরিবিলি
পরিবেশ
পড়ার ঘর অবশ্যই শান্তিপূর্ণ ও নিরিবিলি হওয়া উচিত। ঘরের স্থান নির্বাচন করার সময় এমন জায়গা বেছে নিন, যেখানে টিভি, রান্নাঘর বা অন্যান্য জায়গা থেকে আসা শব্দ কম হবে। একটি নিরিবিলি পরিবেশ শিশুকে মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং বিরক্তি কমায়।
আরামদায়ক আসবাবপত্র
শিশুর পড়ার জন্য একটি সঠিক উচ্চতার টেবিল ও চেয়ার নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরি। চেয়ারটি আরামদায়ক হওয়া উচিত, যাতে দীর্ঘ সময় বসে পড়াশোনা করতে পারে। টেবিলের উচ্চতা এমন হওয়া উচিত, যাতে শিশুর পিঠ সোজা থাকে এবং ঘাড়ে চাপ না পড়ে। অতিরিক্ত আরামদায়ক আসবাবপত্র যেমন সোফা বা বিছানা এড়িয়ে চলুন, কারণ সেগুলো শিশুর মনোযোগ নষ্ট করতে পারে।
সৃজনশীলতা
ও রঙের ব্যবহার
পড়ার ঘরের রঙ
শিশুর মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হালকা ও শান্ত রঙ,
যেমন হালকা নীল, সবুজ বা প্যাস্টেল শেড শিশুদের জন্য আদর্শ। এই রঙগুলো মনকে শীতল রাখে
এবং পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়ায়। পাশাপাশি দেয়ালে একটি সৃজনশীল কোণ তৈরি করতে পারেন, যেখানে
থাকবে শিশুর আঁকা ছবি, ম্যাপ অথবা শিক্ষামূলক পোস্টার।
পর্যাপ্ত স্টোরেজ ব্যবস্থা
শিশুর বই, খাতা,
পেনসিল এবং অন্য শিক্ষাসামগ্রী রাখার জন্য পড়ার ঘরে পর্যাপ্ত স্টোরেজ ব্যবস্থা থাকা
উচিত। বুকশেলফ, ড্রয়ার বা ক্যাবিনেট রাখলে ঘরটি গোছানো ও পরিষ্কার থাকবে। শিশুকে তার
নিজস্ব স্টোরেজ ব্যবস্থাপনা শেখান, যাতে সে তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিজে থেকেই সাজিয়ে
রাখতে পারে।
ডিজিটাল ডিভাইসের সীমিত ব্যবহার
শিশুর পড়ার ঘরে
কম্পিউটার বা ট্যাবলেটের মতো ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ
রাখা উচিত। পড়ার সময় অপ্রয়োজনীয় গ্যাজেট যেমন মোবাইল ফোন থেকে দূরে রাখা জরুরি। ডিজিটাল
ডিভাইস রাখার জন্য আলাদা জায়গা নির্ধারণ করলে শিশু পড়ার সময় বেশি মনোযোগী থাকবে।
বই পড়ার জন্য আলাদা জায়গা
শুধু পড়াশোনার
জন্য নয়, বই পড়ার অভ্যাস গড়তে পড়ার ঘরে একটি আলাদা কোণ তৈরি করতে পারেন। একটি আরামদায়ক
চেয়ার, ছোট বুকশেলফ এবং একটি টেবিল নিয়ে তৈরি এই কোণ শিশুর পাঠাভ্যাস বাড়াবে এবং তার
সৃজনশীলতাকে উজ্জীবিত করবে।
গাছ ও প্রকৃতির স্পর্শ
পড়ার ঘরে ছোট
কিছু গাছ রাখা শিশুর মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। ঘরে অ্যালোভেরা, মানিপ্ল্যান্ট
বা স্নেক প্ল্যান্টের মতো ছোট গাছ রাখতে পারেন। এটি শুধু পরিবেশকে সুন্দর করে তোলে
না, বরং ঘরে তাজা বাতাসের প্রবাহও নিশ্চিত করে।
সময়সূচি বোর্ড বা চার্ট
পড়ার ঘরে একটি
ছোট্ট সাদা বোর্ড বা সময়সূচি চার্ট রাখুন, যেখানে শিশু তার দৈনন্দিন কাজগুলো লিখতে
পারে। এটি সময় ব্যবস্থাপনা শেখাবে এবং শিশুকে আরও সংগঠিত হতে সাহায্য করবে।
নিরাপত্তা ও আরাম নিশ্চিত করা
শিশুর পড়ার ঘর
নিরাপদ হওয়া জরুরি। বৈদ্যুতিক সংযোগ, কর্ড বা ধারাল জিনিস থেকে ঘর মুক্ত রাখুন। এ ছাড়া
ঘরটি এমনভাবে সাজান, যাতে শিশু আরামে বসেও কাজ করতে পারে।
শিশুর পড়ার ঘর
একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যা তার মানসিক ও শিক্ষাগত বিকাশে বড় ভূমিকা পালন করে। সঠিক
আলো, আসবাব, রঙ ও সাজসজ্জা নিশ্চিত করে একটি আরামদায়ক ও মনোযোগ ধরে রাখার উপযোগী পরিবেশ
তৈরি করুন। একটি সুন্দর ও সংগঠিত পড়ার ঘর শুধু শিশুর পড়াশোনার অভ্যাসকে উন্নত করবে
না, বরং তার সৃজনশীলতাকে জাগ্রত করতেও সহায়ক হবে।