বাংলাদেশ থেকে অ্যান্টার্কটিকার পথে : ৬
মহসিনুল হক
প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:৩০ পিএম
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৬ পিএম
স্যালিসবারি প্লেইন বিশ্বের সবচেয়ে বড় কিং পেঙ্গুইন কলোনিগুলির একটি
পৃথিবীর দক্ষিণতম প্রান্তের মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা। বিশাল এ নির্জনতম মহাদেশ ভ্রমণে রয়েছেন ২৭ বাংলাদেশি। সফরে থাকা মহসিনুল হক অ্যান্টার্কটিকা ভ্রমণ অভিজ্ঞতা প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর পাঠকের জন্য নিয়মিত তুলে ধরবেন। আজ থাকছে ষষ্ঠ পর্ব।
সাউথ জর্জিয়ার রাইট হোয়েল বে আটলান্টিক মহাসাগরের একটি দ্বীপপুঞ্জ। এই বেটি বিখ্যাত হয়েছে বিশাল হাম্পব্যাক তিমিদের জন্য। হাম্পব্যাক তিমিগুলি প্রায়ই এই বেতে খাবার খাওয়া, খেলাধুলা এবং প্রজনন করতে আসে। তাদের বিশাল আকার বিশ্বের তিমি পর্যবেক্ষকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
রাইট হোয়েল বেতে শুধুমাত্র তিমিই নয় বিভিন্ন ধরনের পেঙ্গুইন, সিল এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীও দেখা যায়।
এই বিচিত্র জীববৈচিত্র্য এই বেটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক গবেষণার কেন্দ্র করে তুলেছে। রাইট হোয়েল বেতে তিমি দেখার জন্য প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক আসেন। এই পর্যটকরা স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখেন। তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে এই এলাকায় তিমি এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীদের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। আমরা সেখানে সফরের সপ্তম দিন প্রবেশ করি।
ঘোরাঘুরি করে বিকেলে আমরা স্যালিসবারি প্লেইন এলাকায় প্রবেশ করি। সাউথ জর্জিয়ার স্যালিসবারি প্লেইন দ্বীপটি বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী, বিশেষ করে পেঙ্গুইনের একটি সংরক্ষিত আশ্রয়স্থল।
কেননা স্যালিসবারি প্লেইন বিশ্বের সবচেয়ে বড় কিং পেঙ্গুইন কলোনিগুলির একটি। হাজার হাজার কিং পেঙ্গুইন এই দ্বীপের সমতলে বাস করে এবং প্রজনন করে। তাদের বিশাল সংখ্যা এবং সাদা-কালো রঙের আকর্ষণীয় চেহারা এই স্থানটিকে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
জাহাজ বসে প্রতিদিন কথা হয় বিভিন্ন দেশের ব্যক্তি, জাহাজের কর্মী এবং বাংলা ভাষাভাষী ৩০ জন অভিযাত্রীর কারো না কারো সাথে। প্ল্যানসিয়াস জাহাজের ক্যাপ্টেন এ্যাডাম বার্ক অষ্ট্রেলিয়ান নাগরিক। তার সঙ্গে কথা বলে দেখেছি তিনি অত্যন্ত সাহসী একজন মানুষ। এ্যাডাম আমাদের জানান- তার ছোট বেলা হতেই বাইরের জগতের প্রতি এবং এডভেঞ্চার বিষয়ে ভালবাসা ছিল। তিনি স্বপ্ন দেখতেন বিশ্বের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখার এবং বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে মিশতে। তিনি ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
তিনি অস্ট্রেলিয়ায় জাহাজ চালানো, ইউরোপের নদীতে প্যাডেল স্পোর্টস এবং আফ্রিকায় জাহাজে অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি আরো জানান- ফায়ার ব্রিগেডকে হোয়াইট ওয়াটার সেফটি এবং রেস্কিউ এবং বোট হ্যান্ডেলিং কৌশল শেখানোর পাঁচ বছর অতিবাহিত করার পর তিনি আন্টার্টিকায় সামুদ্রিক বিজ্ঞান সহায়তা প্রদানের জন্য এগিয়ে যান। তিনি অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ এবং দক্ষিণ জর্জিয়া দ্বীপের মধ্যে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন যার মধ্যে দুবার শীতকাল পড়েছে। জাহাজের ক্যাপ্টেন এ্যাডাম বার্ককে সত্যিকার অর্থে একজন নেতা বলে মনে হয়েছে।
জাহাজে অবস্থান কালে কথা হয় কানাডা প্রবাসী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আব্দুল জলিলের সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে বিমান বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন এবং উইং কমান্ডার হিসেবে চাকরি হতে অবসর নেবার পর কানাডায় বাস করছেন। তিনি এই সফরে এসে জানান- বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে ব্যাপক কাজ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে নদী দূষণ থেকে শুরু করে সব ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে আমাদের আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে। এই সফরের মধ্যে দিয়ে তিনি আগামী প্রজন্মের কাছে যে বার্তাটি দিতে চান তাহলো- প্রকৃত অর্থেই জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং তাহলেই মানুষের জন্ম সার্থক হবে।
জাহাজে অবস্থানরত ওমান প্রবাসী ডাক্তার অপুর সঙ্গে প্রতিনিয়ত কথা হয়। ডাক্তার অপুর শখ সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়ানো। আন্টার্টিকার পথে ভ্রমনে এসে ডাক্তার অপু জানান - নিজের দেশকে ভালো না বাসলে কোনো ভাবেই ভালো মানুষ হওয়া যাবে না। সেই কারণে তিনি দেশপ্রেমের উপর জোর দিয়েছেন।
জাহাজে আরও কথা হয় অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বসবাসরত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক হাই স্কুল শিক্ষক জন ম্যাকিন্স এর সঙ্গে। তিনি মূলত ইতিহাস পড়ান। তিনিও জানান- যারা বয়সে তরুণ তারা বই পড়ার পরিবর্তে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে। এই সমস্যা শুধু একটি দেশের নয়। সারা বিশ্বেই এই সমস্যা রয়েছে। তিনি আগামী প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলেছেন- জ্ঞান অর্জনের কোন বিকল্প নেই। হাতে কলমে শিক্ষা এবং জ্ঞান অর্জনের উপর তিনি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।
এভাবেই কেটে গেছে আমাদের এক সপ্তাহর বেশি সময়। ধীরে ধীরে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি আন্টার্টিকা মহাদেশের দিকে।
আগামী পর্বে থাকছে
সাউথ জর্জিয়ার গডথুল এলাকায় ঘোরাঘুরি এবং প্ল্যানসিয়াস জাহাজের অন্যান্য স্টাফ, অবস্থানকালে খাওয়া দাওয়া এবং কিভাবে সময় কাটাতে হয় সে বিষয়ে তথ্য
লেখক : জেলা ও দায়রা জজ, চাঁদপুর