× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাংলাদেশ থেকে অ্যান্টার্কটিকার পথে : ৪

রাইট হোয়েল বেতে গভীর রাত অবধি চলল বিজয় মাসের গান

মহসিনুল হক

প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮:৪৩ পিএম

রাইট হোয়েল বে এলাকাটি হচ্ছে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের সাউথ জর্জিয়া অংশের এক চমৎকার উপকূল।

রাইট হোয়েল বে এলাকাটি হচ্ছে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের সাউথ জর্জিয়া অংশের এক চমৎকার উপকূল।

পৃথিবীর দক্ষিণতম প্রান্তের মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা। বিশাল এ নির্জনতম মহাদেশ ভ্রমণে রয়েছেন ২৭ বাংলাদেশি। সফরে থাকা মহসিনুল হক অ্যান্টার্কটিকা ভ্রমণ অভিজ্ঞতা প্রতিদিনের বাংলাদেশের পাঠকের জন্য নিয়মিত তুলে ধরবেন। আজ থাকছে চতুর্থ পর্ব।

ফকল্যান্ডের রাজধানী পোর্ট স্ট্যানলি থেকে আমাদের পরবর্তী গন্তব্যে যাত্রা শুরু। প্ল্যানসিয়াস জাহাজে ফিরে দুই দিন (১০ ও ১১ ডিসেম্বর) জাহাজ চলার পর ১২ ডিসেম্বর আমরা অবতরণ করি অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের প্রবেশদ্বার সাউথ জর্জিয়া উপকূলে। এই উপকূলের রাইট হোয়েল বে এলাকাটি হচ্ছে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের সাউথ জর্জিয়া অংশের এক চমৎকার উপকূল। 

অ্যান্টার্কটিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশই হচ্ছে এই রাইট হোয়েল বে। এই বে-টি বিখ্যাত কেন, কী কী আছে এর মধ্যে, আসুন জেনে নিই।

হাম্পব্যাক তিমি : এই বেটি সবচেয়ে বিখ্যাত হয়েছে হাম্পব্যাক তিমিদের জন্য। প্রতিবছর হাজার হাজার হাম্পব্যাক তিমি এই উপসাগরে আসে বাচ্চা প্রসব করতে এবং তাদের পালন করতে। তাদের নাচ-গান, জীবনযাপনÑ সবই এখানে দেখা যায়। এই উপসাগরে তিমির দেখা পাওয়া এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।

অপার সৌন্দর্য : রাইট হোয়েল বে শুধু তিমির জন্যই বিখ্যাত নয়, এর সৌন্দর্যও অতুলনীয়। বরফাচ্ছাদিত পর্বত, নীল সমুদ্র এবং অসংখ্য পেঙ্গুইন- সব মিলে এক অবিশ্বাস্য দৃশ্য তৈরি করে।

বৈজ্ঞানিক গবেষণা : এই উপসাগরটি বিজ্ঞানীদের জন্যও এক আকর্ষণীয় জায়গা। এখানে তিমি, পেঙ্গুইন এবং অন্যান্য প্রাণীর ওপর বিস্তৃত গবেষণা করা হয়।

পেঙ্গুইন কলোনি : রাইট হোয়েল বেতে বিভিন্ন ধরনের পেঙ্গুইন কলোনি আছে। এদের হাঁটাচলা, খুনসুটি, বিশ্রাম ইত্যাদি দেখা এ এক অন্য রকম আনন্দের বিষয়।

আর্জেন্টিনা থেকে উশুইয়া বন্দরে এসে আমরা প্ল্যানসিয়াস জাহাজ কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় ডেল ফারো স্যুইট অ্যান্ড স্পা হোটেলে অবস্থান করি। টুকিটাকি কিছু কেনাকাটার প্রয়োজন হলেই বাইরে যেতে হয়। সবাই স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলে। কীভাবে তারা স্প্যানিশ ভাষাভাষী হলো, সেটা নিয়ে আলাদা একটা পর্ব হতে পারে। তবে আমরা আগেই জেনেছি ফকল্যান্ডকে তারা মালভিনাস বলে। এটা নিয়ে ১৯৮২ সালে আর্জেন্টিনার সাথে যুক্তরাজ্যের যে যুদ্ধ হয়েছিল, সে বিষয়ে বলতে চাই।

ফকল্যান্ড যুদ্ধ : ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ আসলে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত একটি দ্বীপপুঞ্জ। আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাজ্য উভয় দেশই দীর্ঘদিন ধরে ফকল্যান্ডের ওপর সার্বভৌমত্ব দাবি করে আসছে। আর্জেন্টিনা দ্বীপপুঞ্জটিকে নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ বলে দাবি করত। কারণ এটি আর্জেন্টিনার মূল ভূখণ্ড থেকে তুলনামূলকভাবে কাছাকাছি অবস্থিত। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য এই দ্বীপপুঞ্জকে ব্রিটিশ উপনিবেশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে শাসন করে এসেছে। ১৯৮২ সালে আর্জেন্টিনার সামরিক জান্তা দ্বীপপুঞ্জটি দখল করে নেয়। আর্জেন্টিনার দাবি ছিল যেÑ তারা তাদের নিজস্ব ভূখণ্ড ফিরিয়ে নিচ্ছে। তবে যুক্তরাজ্য এই আক্রমণকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে মনে করে এবং দ্বীপপুঞ্জ ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য একটি সামরিক অভিযান শুরু করে।

দুই দেশের মধ্যে এই সংঘর্ষকে ফকল্যান্ড যুদ্ধ বলা হয়। যা ১৯৮২ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত চলে। যুক্তরাজ্যের সামরিক শক্তি আর্জেন্টিনার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল। ফলে যুক্তরাজ্য এই যুদ্ধে জয়লাভ করে এবং দ্বীপপুঞ্জ আবারও ব্রিটিশ শাসনের অধীনে চলে যায়। এই যুদ্ধের ফলে আর্জেন্টিনার সামরিক জান্তার পতন ঘটে এবং দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।

যুদ্ধের প্রভাব : ফকল্যান্ড যুদ্ধের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রয়েছে। আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে সম্পর্ক এখনও তিক্ত। দ্বীপপুঞ্জের সার্বভৌমত্ব নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ এখনও অমীমাংসিত রয়েছে।

ইতিহাসের এসব বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়ত জাহাজে থাকা আমাদের ৩০ জন বাংলা ভাষাভাষীর মধ্যে তুমুল আলোচনা চলে। এ ছাড়া গভীর রাত অবধি বাংলা সংগীতের আসরে চলে বিজয়ের মাসে দেশাত্মবোধক গান। ডা. অপুসহ সোনিয়ার সঙ্গে সবাই আমরা একসাথে কণ্ঠ মিলিয়ে গাই- 

‘ধনধান্য পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা

তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা 

ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ, স্মৃতি দিয়ে ঘেরা

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি

ও সে সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি

সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি।।’

বিদেশে এসেও আমরা ভুলতে পারি না প্রিয় বাংলাদেশকে। রাত গভীর হয়। আমাদের প্ল্যানসিয়াস এগিয়ে যায় সাউথ জর্জিয়া অভিমুখে।

আগামী পর্বে

সাউথ জর্জিয়ার বেশ কিছু এলাকা সম্পর্কে বর্ণনা। 

লেখক : জেলা ও দায়রা জজ, চাঁদপুর


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা