প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে
সাইফুল হক মোল্লা দুলু, মধ্যাঞ্চল
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:০৯ পিএম
নিজের ওয়ার্কশপে কাজ করছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী আছমত আলী
অন্যের ওপর বোঝা নয়, নিজ কর্মে আয়-উপার্জন করে বেঁচে থাকতে চান শারীরিক প্রতিবন্ধী আছমত আলী। নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ানোর শক্তি নেই, হাতের ওপর ভর করে চলাফেরা করেন; তবু জীবনযুদ্ধে থেমে নেই তিনি। বেঁচে থাকার তাগিদে সব বাধাবিপত্তি পেছনে ফেলে বেছে নিয়েছেন কর্মজীবন।
নিজ চেষ্টায় তৈরি করেছেন ফুটপাতে ছোট্ট একটি ওয়ার্কশপ। নাম দিয়েছেন ‘প্রতিবন্ধী ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ’। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বাধা হতে পারেনি তার জীবনে। কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব যুগিরকান্দা গ্রামের তাহের আলীর দ্বিতীয় সন্তান আছমত আলী (৩৬)।
মাত্র চার বছর বয়সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হলে দুটি পা অচল হয়ে যায় দরিদ্র পরিবারের সন্তান আছমত আলীর। বন্ধ হয়ে যায় স্বভাবিক চলাফেরা। জীবনের প্রতিটি ধাপে সংগ্রাম করে সময় পার করলেও কারও কাছে হাত পাতেননি। প্রতিবন্ধী হয়ে পরিবারের সহায়তায় সাইকেল-মেশিন মেরামত করে পুরোপুরি আত্মনির্ভরশীলভাবে চলছে আছমত আলীর জীবন। ২৩-২৪ বছর ধরে তার উপার্জনেই চলছে পরিবার। আট সদস্যর পরিবারে টানাটানি আছে তার পরও গর্ববোধ করেন, কারও কাছে হাত পাততে হয় না বলে। আছমত আলীর ওয়ার্কশপে দরজা-জানালা, গ্রিল, কেঁচি গেট তৈরি, নৌকা ও বিভিন্ন গাড়ির চাকা মেরামত করা হয়।
স্থানীয় কাশেম মিয়া, সোহেল মিয়া, রমজান আলী বলেন, আছমতের কাছে কাজ করিয়ে সবাই খুশি। কাজের বিনিময়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন না এই মানুষটি। প্রতিবন্ধী ভাতা আর ওয়ার্কশপের আয়ে কষ্টেই চলে তার সংসার। রাস্তার পাশে ফুটপাতে বসে কাজ করেন তিনি। নিজস্ব একটা দোকান থাকবে এমন ইচ্ছা ছিল দীর্ঘদিনের; কিন্তু সাধ থাকলেও সামর্থ্য হয়নি।
শারীরিক প্রতিবন্ধী আছমত আলী বলেন, ‘আমি জন্মের পর থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী, দুটি পা অচল, ছোটবেলা থেকেই কাজের প্রতি মনোযোগী। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে কোথাও কাজের সুযোগ হয়নি আমার, তাই বাধ্য হয়ে ওয়ার্কশপের কাজ বেছে নিই। প্রতিদিন সকালে কাজে আসি, আর বিকালে বাড়ি যাই। প্রতিবন্ধী ভাতা ও কাজের আয়ের টাকায় খুবই কষ্টে চলে আমাদের সংসার। রাস্তার পাশে ফুটপাতে একটু জায়গায় বসে কাজ করি। নিজের একটি দোকান থাকলে কাজের নিরাপত্তা পেতাম।’ কিন্তু সাধ থাকলেও সামর্থ্য নেই বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন পরিশ্রমী আছমত আলী। তিনি আরও বলেন, ‘আমার মতো প্রতিবন্ধীরা সমাজের চোখে অবহেলিত হিসেবে বিবেচিত। আমি সমাজের চোখে বোঝা হয়ে বাঁচতে চাই না, নিজের কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে একজন আত্মনির্ভরশীল মানুষ হিসেবে বাঁচতে চাই এই সোনার বাংলাদেশে।’ তবে বিত্তবান বা সরকারের কোনো সহায়তা পেলে নিজে ব্যবসা করার ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান তিনি।
শারীরিক প্রতিবন্ধী আছমত আলীকে নিয়ে গর্ববোধ করে ইটনা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘প্রতিবন্ধীরা সমাজের চোখে অবহেলিত। আছমত আলী সমাজের চোখে বোঝা হয়ে বাঁচতে চাননি তাই নিজের কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে একজন আত্মনির্ভরশীল মানুষ হয়ে উঠেছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধী আছমত আলীকে প্রতিবন্ধী ভাতার সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবং বরাদ্দ প্রাপ্তির প্রেক্ষিতে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।’