× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নগরে সৃজন ও মননের আঙিনা

সাগর মল্লিক

প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:০০ পিএম

আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:৪৪ পিএম

রাজধানীর শাহবাগের পাঠক সমাবেশকেন্দ্রে গভীর মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছেন পাঠক পাঠিকা। ছবি : আরিফুল আমিন প্লাবন

রাজধানীর শাহবাগের পাঠক সমাবেশকেন্দ্রে গভীর মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছেন পাঠক পাঠিকা। ছবি : আরিফুল আমিন প্লাবন

চারশ বছরের বেশি বয়স নগর ঢাকার। ২ কোটির বেশি মানুষের বসবাস এখানে। ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে এ শহরে প্রথম আলোকিত আঙিনার নাম জানতে চাইলে উঠে আসে রাজা রামমোহন রায় পাঠাগারের কথা। এটি স্থাপিত হয় ১৮৬৯ সালে। এরপর ফরাশগঞ্জের নর্থব্রুক হল লাইব্রেরি। এটি বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগে। এরপর একে একে ঢাকার প্রায় মহল্লাতে গড়ে ওঠে গ্রন্থাগার। সেই পাঠাগার মননশীল মানুষের কাছে পীঠস্থানে পরিণত হয়েছিল। কালের পরিক্রমায় অনেক পাঠাগার বন্ধ হয়ে গেছে। গুটিকতক যা টিকে আছে তা-ও চলছে ধুঁকে ধুঁকে। পুরোনো বইয়ের পাতায় জমেছে ধুলোর আস্তরণ। অন্তর্জালের প্রভাবে আশঙ্কাজনক হারে বইয়ের পাঠক কমে গেছে। সেই সময়ে নগরে একের পর এক চালু হচ্ছে বুকক্যাফে। কিছুটা হলেও পাঠাগারের শূন্যতা পূরণের চেষ্টা করছে। এখানে নিয়মিত লেখক-পাঠকের আড্ডা জমে। সমাজসচেতনতামূলক আলাপ করে। ঢাকা শহরের বইপ্রেমীরা যেখানে ভিড় জমায় সেখানে চা, কফি এবং আড্ডার পাশাপাশি গ্রন্থ কেনারও সুযোগ রয়েছে। এ রকম কয়েকটি স্থান নিয়ে আজকের আয়োজন।

বেঙ্গল বই

নগরের সৃজনশীল মানুষের কাছে পরিচিত নাম বেঙ্গল বই। শিল্পরুচি আর নান্দনিকতার পরশমাখা এ আঙিনা। সারা দিনই পাঠকের মিলনমেলায় মুখরিত থাকে প্রাঙ্গণটি। বিকাল গড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুখরিত হয়ে ওঠে বেঙ্গল বইয়ের বৃক্ষশোভিত উঠান। এ উঠানে চেয়ার-টেবিল সাজানো থাকে। পাঠক চাইলে বই নিয়ে পড়তে পারেন, জমিয়ে আড্ডাও দিতে পারেন। এর অবস্থান ঢাকার ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে। এখানে দেশিবিদেশি অসংখ্য বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে। শিশু-কিশোরদের জন্য রয়েছে আলাদা চত্বর। পাঠকদের বই পড়ার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা। তাই বই কেনাবেচার পাশাপাশি চা-কফি এবং আড্ডার জন্য বেশ জনপ্রিয় বেঙ্গল বই। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা খোলা থাকে। ছুটির দিনে খোলা থাকে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।

পাঠক সমাবেশ কেন্দ্র

দেশিবিদেশি অসংখ্য বইয়ের সমাহার পাঠক সমাবেশ। শাহবাগে অবস্থিত এ আঙিনার প্রাণ পাঠক। শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশের কারণে পাঠকের পছন্দের শীর্ষে সব সময়ই পাঠক সমাবেশ কেন্দ্র। বই দেখতে পারবেন, চাইলে বসে পড়তে পারবেন। চা, বই আর ব্যাকগ্রাউন্ডে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানÑ সুন্দর অনুভূতির জন্য আর কী চাই! কোলাহলের শহরে নিবিড়ভাবে বই পড়ার জন্য পাঠকের অন্যতম পছন্দের জায়গা এটি। এদের রয়েছে তিনটি আউটলেটÑ শাহবাগ, আজিজ সুপার মার্কেট ও কাটাবন। সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পাঠকের জন্য এ কেন্দ্রের দুয়ার খোলা থাকে।

ঢাকা বাতিঘর

লেখক ও পাঠকের কাছে জনপ্রিয় ঢাকার বাতিঘর। নিয়মিত কফি খেতে খেতে আড্ডা দেওয়া, বইপ্রেমীদের সঙ্গে সময় কাটানো, বই উপহার দেওয়া, বই কেনা এসব নিয়ে বাতিঘরের সঙ্গে পাঠকের নিত্য সম্পর্ক। কফির উন্মাদনার সঙ্গে বই নিয়ে তুমুল আড্ডায় জমজমাট আবহাওয়া থাকে সারা দিনই। ঢাকার বাংলামোটর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সাত তলায় এর অবস্থান। লাল ইটের ইমারত ও হলুদ আলোর ছোঁয়ায় আভিজাত্যের ভাব ফুটে উঠেছে এখানে। দেশিবিদেশি সব বই পাওয়া যায়। নানান ধরনের বই ভরা বাতিঘর পরিপূর্ণ। আছে শিশুদের জন্য আলাদা কর্নার। ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে চলে আসতে পারেন বাতিঘরে। সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীতে এদের শাখা আছে।

বাংলামোটর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে অবস্থিত বাতিঘর। ছবি : আরিফুল আমিন প্লাবন

প্রথমা বুক ক্যাফে

ঢাকা ইউনাইটেড সিটির শেফস টেবিল কোর্টসাইডে অবস্থিত বুক প্রথমা ক্যাফে। ২০২১ সালের নভেম্বরে চালু হওয়া এ ক্যাফেটির চা কফি ও অন্যান্যর সুবিধা নেই। এ ক্যাফের দায়িত্বরত কর্মকর্তা গৌরাঙ্গ হালদার জানান, অল্প সময়ের মধ্যে ক্যাফের সব সুবিধা পাওয়া যাবে। বই কেনা, নতুন বই খোঁজা ও বই পড়ার জন্য প্রথমা বুক ক্যাফে একটি অন্যতম স্থান। এখানে দেশিবিদেশি যেকোনো ধরনের মানসম্পন্ন বই এখানে পাওয়া যায়। দুপুর ১২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সপ্তাহের প্রতিদিনই খোলা থাকে।

বুকওয়ার্ম বাংলাদেশ

সবুজ প্রকৃতির মাঝে এক টুকরো স্বর্গ যেন বুকওয়ার্ম। ৩০ বছর ধরে বুক ওয়ার্ম বই পড়ুয়াদের সেবা দিচ্ছে। আগে বুক ওয়ার্মের ঠিকানা ছিল পুরোনো এয়ারপোর্ট রোডে। বর্তমান ঠিকানা গুলশান-২-এ বিচারপতি সাহাবুদ্দীন পার্ক। বিশাল জায়গায় গড়ে ওঠা বুকওয়ার্মের সামনে দেখা মিলবে গোলাকৃতির বাগানের। ভেতরে ঢুকলেই কাচের দেয়ালে ঘেরা বিস্তৃত জায়গায় দেশিবিদেশি বইয়ের সমাহার। পার্কের ভেতর আছে কফিশপ। ছুটির দিনে পরিবার, প্রিয়জন নিয়ে বুকওয়ার্মে সুন্দর সময় কাটাতে পারবেন।

দ্য রিডিং ক্যাফে

রাজধানীজুড়ে দ্য রিডিং ক্যাফের চারটি শাখা। ২০১৪ সালে যাত্রা হওয়া দ্য রিডিং ক্যাফের শাখাগুলো বনানী, ধানমন্ডি ও গুলশান ও সায়েন্সল্যাব। ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, শিল্প-সংস্কৃতি, জীবনী, শিশুতোষসহ দেশিবিদেশি সব ধরনের বইয়ের দেখা মিলবে এখানে। চা-কফি নিয়ে বসে বই পড়ার সুন্দর ব্যবস্থা আছে বুক ক্যাফেটির ভেতরে। এখানেও শিশুদের জন্য আছে আলাদা বই পড়ার ব্যবস্থা। খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।

কবিতা ক্যাফে

সবুজরঙা দেয়াল, লতানো গাছ এবং বাঙালিয়ানার ছোঁয়ায় এক প্রশান্তিদায়ক স্থান কবিতা ক্যাফে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে চালু হওয়া এ বইঘরে রয়েছে মানসম্মত বই। এ ছাড়া রয়েছে নিজস্ব প্রকাশনা সংস্থার তরুণ লেখকদের বই। লেখক ও পাঠকদের এক স্বতঃস্ফূর্ত মিলনমেলা কবিতা ক্যাফে। নানা উপলক্ষ কেন্দ্র করে চলে গান ও আবৃত্তির অনুষ্ঠান। আড্ডাগুলো আরও প্রাণ পায় ক্যাফের সাহিত্যবান্ধব নাশতা, চা, শিঙাড়া, ঝালমুড়ি, ও খিচুড়িতে। ক্যাফেটির ঠিকানা কাটাবনের ২৩৪/সি নিউ এলিফ্যান্ট রোড। পাঠকের জন্য উন্মুক্ত থাকে বেলা ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত।

ভাইভ স্টাডি ক্যাফে

ঢাকার হাতিরঝিলের পাশে মহানগর প্রজেক্টে অবস্থিত ভাইভ স্টাডি ক্যাফে। বেশ নান্দনিক ও গোছাল একটি বুক ক্যাফে। দেয়ালে শোভা পাচ্ছে বইয়ের মলাটের কোলাজ এবং চা-কফির চিত্র; যা পাঠককে বেশ আকৃষ্ট করে। এখানে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিভৃতে বই পড়ার সুযোগ রয়েছে। সঙ্গে চা, কফি মোজিতো কিংবা নাশতার স্বাদও নিতে পারেন। বেশ নিরিবিলি পরিবেশ। সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

ধানমন্ডির বেঙ্গল বই প্রাঙ্গণ

ঋদ্ধি বুক ক্যাফে

ঢাকার পল্লবীতে অবস্থিত ঋদ্ধি বুক ক্যাফে। শাহবাগ থেকে মেট্রাতে চড়ে মিরপুর-১১-এর ডান পাশে নামলে ভবনের প্রথম তলায় ঋদ্ধি বুক ক্যাফে। চা, শিঙাড়া খেতে খেতে আড্ডা দেওয়ার দারুণ পরিবেশ। যাকে বলে বই আর কফি একসঙ্গে। দ্বিতীয় তলা বেশ ছিমছাম, গোছানো ঋদ্ধি লাইব্রেরি। রয়েছে বসে বই পড়ার সুন্দর ব্যবস্থা। এখানে শিশুদের জন্য রয়েছে আলাদা চত্বর। শিশুদের বই ও খেলনা আছে। প্রতি শুক্রবার বিকালে শিশুদের বই পাঠ করে শোনানো হয়। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

নগরের বুক ক্যাফেগুলোয় প্রায়ই পাঠকের সঙ্গে আড্ডা দিতে দেখা যায় লেখক জি এইচ হাবীবকে। তার কাছে বুক ক্যাফে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ক্যাফেগুলোয় যেহেতু পড়ার সুযোগ রয়েছে দীর্ঘ সময় অবস্থান করলে ক্ষুধা লাগে। চা, কফি এবং অন্যান্য খাবার খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করা যায়। এটা ভালো দিক। এর অন্য একটা দিকও আছে। সঙ্গে যেহেতু বন্ধুবান্ধব থাকে। কফির অর্ডার শুধু নিজের জন্য দেওয়া যায় না। তখন দেখা যায় বই কেনার বাজেটে টান পড়ে। তাই চায়ের ব্যবস্থা থাকলে ভালো হয়। আরও একটা দিক সম্পর্কে বলা দরকার। বুক ক্যাফেগুলোয় যেহেতু কফি পাওয়া যায়, কফির টানে অনেক তরুণ-তরুণীকে আসতে দেখা যায়। তারা অবশ্য বই কেনেন না। শুধু বই ধরে ছবি তোলেন অথবা ভিডিও করেন। তার পরও বলব যে কারণেই হোক বইয়ের কাছাকাছি আসছেন। এ দৃশ্যটাও সুন্দর। তা ছাড়া নগরে ক্যাফেগুলো ছাড়া অন্য কোথাও গিয়ে আড্ডা দেওয়ার জায়গা নেই তরুণদের।’

বুক ক্যাফে সংস্কৃতি নতুন নয়। পৃথিবীর অনেক দেশ বহু আগে থেকে বুক ক্যাফে কালচারের সঙ্গে পরিচিত। আমাদের এখানেও তরুণ-তরুণীদের জন্য বই পড়া এবং আড্ডাস্থল হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে। নগরের বুক ক্যাফেগুলোর নিয়মিত পাঠক শেখ ফাতিমা পাপিয়া। তিনি তার অভিজ্ঞতার কথা জানালেনÑ ‘অনেক ক্যাফেতেই খাবারের দাম বেশি রাখা হয়। আবার কিছু কিছু ক্যাফে বসে বই পড়তে দেখলে কফি বা চা পানের জন্য চাপ দেয়। তখন মনে হয় এদের মূল উদ্দেশ্য বুঝি চা, কফি বিক্রি।’ এ পাঠকের মতো অনেকেরই এমন অভিযোগ রয়েছে। শত বাধা পেরিয়ে লেখক, পাঠকের জন্য জনবান্ধব হয়ে উঠুক নগরের বুক ক্যাফে। আরও বেশি সমাবেশ ঘটুক এমন সৃজনশীল আঙিনার।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা