সারমিন ইসলাম রত্না
প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০৩ পিএম
আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:১০ পিএম
অলংকরণ : জয়ন্ত সরকার
টিফিনের সময় সবাই হইচই করে ক্যান্টিনে এলো। নিশি বার্গার আর চিপস কিনল। নিশির সহপাঠীরাও বার্গার, চিপস কিনল। সবাই মজা করে খাচ্ছিল। নিশি বার্গার মুখে দিতেই বলল, ছি! একটুও মজা না। সহপাঠীরা বার্গার খেতে খেতে বলল, আমাদের কাছে তো খুব মজা লাগছে। নিশি বলল, মনে হচ্ছে নষ্ট বার্গার। রেখে দে। পেট খারাপ করবে। সহপাঠীরা খেতেই থাকল। নিশি বার্গার হাতে নিয়ে বসে রইল। টিফিন টাইম প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। সহপাঠীরা বলল, তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। যেতে হবে।
হঠাৎ নিশি দেখল, ওর হাতে রাখা বার্গার হয়ে গেছে একটি সুন্দর পেয়ালা। পেয়ালায় রঙবেরঙের আঙুর রয়েছে। লাল আঙুর, সবুজ আঙুর, কালো আঙুর। নিশি সবার দিকে তাকাল। কারও হাতে আঙুরের পেয়ালা দেখতে পেল না। নিশি ভয়ে ভয়ে বলল, তোরা কি আমার হাতে কিছু দেখতে পাচ্ছিস? সহপাঠীরা হাসতে হাসতে বলল, বার্গারই তো দেখতে পাচ্ছি। কেন, তুই কি জাদু করেছিস? নিশি কিছু বলল না। চুপ করে রইল।
টিফিনের আর পাঁচ মিনিট আছে। নিশির ভয় লাগছে। আবার খিদেও পেয়েছে। নিশি আঙুর খেতে শুরু করল। বেশ মিষ্টি আঙুর। নিশি আঙুর খেতে খেতে দেখল, সহপাঠীদের হাতেও আঙুরের পেয়ালা। ওরা ভয় পাওয়া গলায় বলল, বার্গার আঙুর হলো কী করে? তুই জি জাদু করে বার্গারকে আঙুর বানিয়ে দিয়েছিস? নিশি চমকে উঠে বলল, আমি কী করে বার্গারকে আঙুর বানাব? সহপাঠীরা বলল, কিছুক্ষণ আগে আমাদের প্রশ্ন করেছিলি তোর হাতে কিছু দেখতে পাচ্ছি কি না। সেজন্যই জানতে চাইলাম। নিশি বলল, আমার হাতে রাখা বার্গার হঠাৎ আঙুর হয়ে গেল। তাই প্রশ্ন করেছি। সে যা-ই হোক, আঙুরগুলো খুব মজা। সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ কর। সবাই মজা করে আঙুর খেলো। খাওয়া শেষ হওয়া মাত্রই ওরা দেখল, সবার পেয়ালায় একটি করে আঙুর রয়ে গেছে। আঙুরগুলো নড়াচড়া করছে।
হঠাৎ আঙুরগুলো বড় হয়ে গেল। আঙুরগুলোর আবার হাতও আছে। লম্বা লম্বা নখ আছে। আঙুরের চোখগুলো টকটকে লাল। চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। ওরা ভয়ে ছুটে পালাতে চাইল। কিন্তু পালানোর শক্তি যেন হারিয়ে গেছে। আঙুরগুলো নাঁকি নাঁকি স্বরে বলল, আমরা ফল গাছের ভূত। আমরা প্রতিদিনই দেখতে পাই, তোমরা টিফিন টাইমে বার্গার, চিপস, চকলেট, আইসক্রিম খাও। এক দিনও স্বাস্থ্যকর খাবার খাও না। তাই ভাবলাম আজ তোমাদের ফল খাওয়াই। আমাদের ভয় পেয়ো না। আমরা উপকার করতে এসেছি। ভয় দেখাতে নয়। আঙুররূপী ভূতগুলো হাসতে লাগল। ওরা চোখ বন্ধ করে বলল, ওভাবে হেসো না। ভয় লাগছে। নিশি ঢোক গিলল। তারপর বলল, আমরা এখন থেকে স্বাস্থ্যকর খাবার খাব। তোমাদের দেওয়া আঙুরগুলো বেশ মজা ছিল। তাই আজ থেকে তোমাদের নাম দিলাম, ‘টিফিন ভূত’। আঙুরগুলো নাচতে নাচতে অদৃশ্য হয়ে গেল।