এম. পলাশ শরীফ, মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট)
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১১:৫৪ এএম
বর্তমানে ভিক্ষা করে দিনযাপন করছেন স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া জামিলা খাতুন
‘সুন্দরবনের জঙ্গলে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাত রান্না করে খাওয়াইছি। স্বামী-স্ত্রী দুই জনেই বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম যুদ্ধে যাওয়ার জন্য। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ১০ মাস কাটাইছি। ১৯৭১ সালে ৯ নম্বর সেক্টরের সুন্দরবন সাব-সেক্টরে বীর মুক্তিযোদ্ধা স ম কবির আহম্মেদ মধু, বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমজেদ মল্লিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা পল্টু চেয়ারম্যানÑ তাদের সাথে একত্রে ছিলাম।’
স্বামী মৃত আবদুর রহমান শেখ মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাক সেনা ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে সেদিন যুদ্ধে নেমেছিলেন। তার পরও তিনি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আসতে পারেননি। ‘স্বামী বড় কষ্ট নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে ১০ বছর পূর্বে। আমিও শেষ বয়সে এসে এখনও স্বপ্ন দেখছি মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম থাকার।’ কথাগুলো বলতে গিয়ে কাঁদছিলেন মোরেলগঞ্জের ৮৫ বছরের বৃদ্ধা জামিলা খাতুন।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাদুড়তলা গ্রামের মৃত আবদুর রহমান শেখের স্ত্রী জামিলা খাতুন। প্রান্ত বেলায় এসেও ১০ বছর ধরে যার ভিক্ষা করে দিনযাপন করতে হচ্ছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের নয় মাস সুন্দরবনের জঙ্গলে থেকে বাড়িতে এসে ৩২ বছর হোটেলে হোটেলে খাবার পানি বিক্রি করে সংসার চালাতেন তিনি।
সংসার জীবনে জামিলা খাতুন দুই ছেলের মা। ছোটবেলায় বাবা-মাকে ছেড়ে দুই ছেলেই অভাবের তাড়নায় শহরে চলে যায়। বড় ছেলে আবু বকর সিদ্দিক চট্টগ্রামে দিনমজুরের কাজ করেন। ছোট ছেলে জাকির শেখ ঢাকায় রিকশা চালান। মাকে দুই ছেলে প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা পাঠান।
জামিলা খাতুন সরকারিভাবে সাত-আট বছর ধরে শুধু বয়স্কভাতা সুবিধাভোগীর আওতায় রয়েছেন। মাঠে কোনো জমি নেই। স্বামীর রেখে যাওয়া ৫ কাঠা বসতভিটাটুকু তার সম্বল। বসতঘরটি জরাজীর্ণ, নড়বড়ে।
সম্প্রতি মোরেলগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সাহায্য নিতে এসে জীবনসংগ্রামের অনেক কথাই সংবাদকর্মীদের সামনে প্রকাশ করেন জামিলা খাতুন। তিনি বলেন, ‘দুই ছেলে মাসে ২ হাজার টাকা পাঠায়। বয়স্কভাতার সামান্য কয়টা টাকা পাই। তা-ও আবার ওষুধে চলে যায়। পেট চলে না। এই বয়সে এসে কম কষ্টে কি রাস্তায় নেমেছি মানুষের সামনে হাত পাততে? মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আমার নাম কখনও কি উঠবে? স্বামী যে স্বপ্ন নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিল, আমারও কি সেই মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্ন থেকেই যাবে। একটু পাকা ঘরে যদি বসবাস করে যেতে পারতাম।’ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তার আকুল আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
মোরেলগঞ্জ সমাজসেবা কর্মকর্তা গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘এ উপজেলায় ইতোমধ্যে ২৫৫ জন ভিক্ষুকের তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১৮ জনকে বিকল্প পেশায় ফিরিয়ে নিতে একটি করে ছাগল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের নানামুখী পরিকল্পনা রয়েছে।’