× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রম্য গল্প

চোট দেব না বলে...

শফিক হাসান

প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১২:৫২ পিএম

চোট দেব না বলে...

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন মানেই যেন ‘ওড়াউড়ি মৌসুম’। বাতাসে প্রতিশ্রুতির বন্যা ভাসে, কচকচে নোট আসে, গরম চা আর সিগারেটের ধোঁয়া হাসতেই থাকে। রুহিতনপুরে নির্বাচনী আমেজে মাইক বাজে, ধুলা ওড়ে বাজারে, ফসলি জমিতে আর ওড়ে টাকা। এত্তগুলো টাকা কোত্থেকে জড়ো হয়, কীভাবেই বা আসে অজপাড়াগাঁয়ে; বুঝতে পারেন না ময়মুরুব্বিরাও। ঈদানন্দ নিয়ে আসে ভোট-আয়োজন। চলন্ত রিকশা-ভ্যানে মাইকে বাজতে থাকে জয়ধ্বনি। ভোটের গল্পে নতুন ব্যঞ্জনা যুক্ত করে কাবিল হোসেন। যে-ই ভোট চাইতে আসুক, আপ্যায়ন করাবেই। এতে প্রচারকারীদের পাশাপাশি গ্রামবাসীও হকচকিয়ে যায়। অল্প সময়েই আশপাশের চৌদ্দগ্রামে ছড়িয়ে পড়ে কাবিলের বোকামির সংবাদ। কাবিলের বউ জরিনা আরেক কাঠি সরেস, বাড়তি রান্নাবাড়ায়ও আপত্তি নেই। এ দম্পতির অভিন্ন ভাষ্য- মেহমান হচ্ছে লক্ষ্মী। লক্ষ্মী বারো মাস কারও বাড়িতে আসে না। শুধু ভোটপ্রার্থী কেন, ভিনগাঁয়ের কাউকে আশপাশে দেখলেও ডান হাতের কাজটা সারিয়ে দেয় কাবিল।

অনেকের মনেই চিন্তাটা গোত্তা খায়- কাবিল এত টাকা পেল কোথায়? সেও কি আগামীতে ভোটে দাঁড়াবে! প্রাথমিকভাবে ‘জনসেবা’র নমুনা দেখাচ্ছে। গুঞ্জনের পথ ধরেই কাবিলের খরচাপাতির ভালো বন্দোবস্ত হয়ে যায়। সুনাম ছড়াতে থাকলে তার ‘জরিনা লেডিস অ্যান্ড জেন্টস টেইলার্স’-এ খদ্দের ভিড় বাড়ায়। এমনকি যার পর্যাপ্ত পরিধেয় আছে সেও বাড়তি একটা পোশাক বানিয়ে নেয় কাবিলের কাছ থেকে। ব্যবসা বাড়তে থাকলে অতিথি আপ্যায়নে আরও ‘আগ্রাসি’ হয় কাবিল দম্পতি। ভোট নিয়ে যতই উচ্ছ্বসিত ভাব দেখাক, গোপন একটা দুঃখ বহু বছর মনে খচখচ করে। বৃষ্টিবাদলার দিনে দোকানে আসতে হয় কাদাপানি মাড়িয়ে। বাদল চেয়ারম্যান এলাকায় প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ করলেও বঞ্চিত হয়েছে রুহিতনপুর। এখানকার বাসিন্দারা নাকি তাকে ভোট দেয়নি! সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছেন, এমন সন্দেহ থেকেই এলাকাটাকে রেখেছেন উন্নয়নবঞ্চিত। সব গ্রামের রাস্তা পাকা হলেও এখানে কোনো পাকা রাস্তা নেই। চেয়ারম্যানের ষড়যন্ত্রÑ শত্রু এলাকার লোকজনকে আরামে হাঁটতে দেবেন না। উন্নয়ন না করলে কেমন লাগে বুঝুক। যেমনটা বুঝেছিলেন চেয়ারম্যান নিজে, নিরঙ্কুশ ভোট না পেয়ে!

বর্ষাকাল শুধু নয়, রোদকালেও তেমন একটা স্বস্তি পায় না কাবিল। কাঁচা রাস্তা থেকে ধুলো ওড়ে। নাকে-মুখে যাওয়ার পাশাপাশি ধুলাবালি নতুন পোশাক-আশাকগুলোর রঙচঙা অবয়ব ফ্যাকাশে বানিয়ে দেয়। মনের দুঃখটা পুষে রাখে কাবিল। এ গ্রাম থেকে কেউ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে তিনি নিশ্চয়ই রাস্তা সংস্কার করবেন। সব টাকা ঢাকায় বা আমেরিকায় নিয়ে জমাবেন না। এমন আশায় বুক বাঁধে রুহিতনপুরবাসী। এর মধ্যেই আবার এলো ভোট। ভোট এলেই গ্রামবাসী জাগে নতুন আনন্দে। কাবিলও জেগে উঠল বিলে নতুন পানি পাওয়া মাছের মতো!

নির্ধারিত দিনেই ভোট সম্পন্ন হয়। একটি মাত্র ভোটে হেরে গেছেন রুহিতনপুরের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আজমল। আঁতিপাঁতি করে অনুসন্ধানে নেমেছেন তিনি, কোন বেইমান ভোট দেয়নি তাকে! কেন সর্বনাশটা করল! রাখঢাক না করে এক পর্যায়ে সরল স্বীকারোক্তিটা দেয় কাবিলÑ সবাইকে ভোট দিয়েছে সে। ব্যালট পেপারের কোনো মার্কাই বাকি রাখেনি। যেহেতু সবাইকে কথা দিয়েছিল, চোট দেবে না, ভোট দেবে!

কিন্তু সত্যভাষণ শুনে হারু চেয়ারম্যান যে কাবিলের ঠোঁট ফাটিয়ে ফেলবেন, রুহিতনপুর-বাসীর কল্পনারও অতীত ছিল।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা