প্রচ্ছদ
রোবেদা রায়ান হক
প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:৩২ পিএম
কমলা রঙের বিকাল মানেই হেমন্ত এসে গেছে। সন্ধ্যার পর বয়ে চলে হালকা হিমেল হাওয়া। শার্টের গুটিয়ে রাখা স্লিভগুলো আপনাআপনি কবজি অবধি নেমে আসে। রাতে বাইরে যেতে মেয়েরা ভুল করেন না জড়িয়ে নিতে পাতলা শাল বা জ্যাকেট…
ঋতুচক্রে হেমন্ত এক অনন্য মৌসুম। গরমের শেষ প্রহর আর শীতের আগমনী ছোঁয়ায় ভরা এই সময় প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের জীবনেও আসে পরিবর্তনের ছোঁয়া। আবহাওয়ার এ পরিবর্তনে ফ্যাশন ও আরামের সমন্বয়ই হয়ে ওঠে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কীভাবে হেমন্তের নরম শীতে ফ্যাশন আর আরামের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা যায়? চলুন খুঁজে দেখা যাক।
আরাম ও ফ্যাশনের সংমিশ্রণ
হেমন্তে গরম আর শীতের মাঝামাঝি আবহাওয়ায় হালকা ও আরামদায়ক
কাপড়ের প্রয়োজন। এ সময় কটন,
লিনেন বা সুতির পোশাক সবচেয়ে বেশি উপযোগী। যারা একটু উষ্ণতা
চান, তারা পাতলা উলের পোশাক বেছে নিতে পারেন। এতে উষ্ণতার পাশাপাশি ফ্যাশনের ছোঁয়াও
থাকে।
নারীদের ক্ষেত্রে পাতলা শাল বা স্কার্ফ হালকা শীতের জন্য
আদর্শ। এগুলো কেবল শরীরকে আরাম দেয় না, বরং সাজে নিয়ে আসে আকর্ষণীয়
বৈচিত্র্য। পুরুষের জন্য পাতলা জ্যাকেট বা ফুল স্লিভ শার্ট হতে পারে উপযুক্ত। চিনো
প্যান্টের সঙ্গে একটি হালকা সোয়েটার বা ব্লেজারও মানিয়ে যাবে দারুণ।
ফ্যাশন হাউস কে ক্র্যাফটের উদ্যোক্তা খালিদ মাহমুদ খান বলেন, ‘যেহেতু হালকা শীতল বাতাস
আর হালকা উষ্ণ অনুভূতি দিয়ে এখন চলছে হেমন্ত ঋতু। আবহাওয়ার এ
তারতম্যের কারণে হেমন্তের পোশাক ও সাজসজ্জায় আসে পরিবর্তন।
তাই গরম-ঠান্ডার এ সখ্য ও অনুভূতির কথা মাথায় রেখে কে ক্র্যাফট করেছে হেমন্ত আয়োজন।
ভিন্নধর্মী চমৎকার সব স্টাইলিশ ও স্বস্তিদায়ক পোশাকই হতে পারে আপনার এ সময়ের
সঙ্গী। মেয়েদের জন্য সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি, কুর্তি, টিউনিক, কাফতান আর ছেলেদের জন্য
পাঞ্জাবি, ক্যাজুয়াল শার্ট, ফুল স্লিভের শার্ট থাকছে। এ ছাড়া ছেলে এবং মেয়ে শিশুদের জন্যও থাকবে নানা আয়োজনের পোশাক। নানা রঙের প্রিন্ট ও উইভিং ডিজাইনে
তৈরি করা হয়েছে হালকা শাল, যা এ সময়ের জন্য বেশ উপযোগী। আর পোশাকগুলো কে ক্র্যাফটের সব শোরুমেই
পাওয়া যাচ্ছে।
শুধু কে ক্র্যাফটিই নয়, দেশের সব ফ্যাশন হাউসই বর্তমান সময় এবং ট্রেন্ড মাথায় রেখে ডিজাইন করেছে তাদের হালকা শীতের পোশাকগুলো।
আরাম ও আভিজাত্যের মেলবন্ধন
দিনের বেলা রোদ মিষ্টি উষ্ণ আর সন্ধ্যার পর হালকা শীতের আমেজ। এ সময় মেয়েদের পোশাকেও প্রয়োজন হয় সামান্য পরিবর্তনের। হালকা শীতের আরামদায়ক পোশাক যেন একই সঙ্গে স্টাইলিশ ও সাশ্রয়ী হয়, সেটাই প্রধান লক্ষ্য।
সূচিকর্মের কুর্তি : ঐতিহ্যের ছোঁয়া
হেমন্তের শীতে হালকা কিন্তু সুরক্ষিত পোশাকের জন্য সুতির বা মসলিনের ওপর সূচিকর্ম করা কুর্তি হতে পারে আদর্শ। এর সঙ্গে পরা যায় সুতির লেগিংস বা পালাজো। দিনের বেলা বাইরে গেলে একটি হালকা ওড়না বা শালের ব্যবহার শুধু আরামের জন্যই নয়, বরং ফ্যাশনের একটি বিশেষ উপকরণও হতে পারে।
জ্যাকেট আর শাল : অনন্য কম্বিনেশন
হালকা শীতের জন্য সুতির কিংবা পাতলা উলের জ্যাকেট একেবারে উপযুক্ত। গাঢ় রঙের জ্যাকেটের সঙ্গে ফুল ছাপানো টিউনিক বা কুর্তি একটি দুর্দান্ত লুক তৈরি করে। আবার ঐতিহ্যবাহী উলের বা খাদির শাল হতে পারে মেয়েদের জন্য আরামদায়ক ও অভিজাত পোশাক।
ফিউশন লুক
ফ্যাশনপ্রেমী মেয়েরা চাইলে হেমন্তের শীতে ফিউশন লুক বেছে নিতে পারেন। পাতলা উলের সোয়েটার বা হুডি টপসের সঙ্গে সিল্কের স্কার্ট কিংবা স্লিম ফিট জিন্স পরলে দারুণ মানাবে। আর ঠোঁটে একটু লিপস্টিক যোগ করলে পুরো লুকটাই হবে নজরকাড়া।
হালকা কার্ডিগান : আরাম ও স্টাইল একসঙ্গে
মেয়েদের হালকা কার্ডিগান এ সময়ের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এটি সহজে ক্যারি করা যায় এবং যেকোনো পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায়। ফ্রন্ট ওপেন ডিজাইনের কার্ডিগান থেকে শুরু করে বোতামযুক্ত কার্ডিগানÑ সবই হেমন্তের আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই।
জুতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে
পোশাকের পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো উপযুক্ত জুতা নির্বাচন। হেমন্তে পায়ের জন্য আরামদায়ক ও স্টাইলিশ কিছু বেছে নেওয়া প্রয়োজন। লোফার, স্নিকার্স বা বুট এ সময়ে বেশ মানানসই। পায়ের জুতা শুধু আরাম দেয় না, বরং পুরো লুকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখে।
অনুষঙ্গের গুরুত্ব
হেমন্তে মেয়েদের পোশাক আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে অনুষঙ্গের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। হালকা কাজ করা চুড়ি, ছোট ঝুমকা, দুল কিংবা গলার হালকা লকেট হেমন্তের আভিজাত্য প্রকাশ করে।
সাজে হেমন্তের উষ্ণতা
এ সময় সাজসজ্জায় ভারী মেকআপের বদলে প্রাকৃতিক লুক বজায় রাখাই ভালো। হালকা ফাউন্ডেশন, ঠোঁটে উজ্জ্বল রঙের লিপস্টিক আর চোখে সামান্য কাজল এ ঋতুর জন্য উপযুক্ত। চুলে খোঁপা বা হালকা বেণি করে একটি ফুল যোগ করলে পুরো সাজে আসবে শৈল্পিক ছোঁয়া।
শিশুদের পোশাক : আরামের সঙ্গে উচ্ছ্বাস
শিশুদের ক্ষেত্রে আরাম সবচেয়ে বড় বিবেচ্য। তাদের জন্য হালকা হুডি, সোয়েটশার্ট বা ফুল স্লিভ টি-শার্ট বেশ উপযুক্ত। রঙিন প্রিন্ট এবং মজাদার ডিজাইনের পোশাক তাদের সাজে যোগ করে উচ্ছ্বাস। পায়ের জন্য আরামদায়ক স্নিকার্স বা ক্যানভাস জুতাই যথেষ্ট।
রঙের গল্প : হেমন্তের অনুপ্রেরণা
হেমন্তে প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মৃদু রঙ যেমন ধূসর, বাদামি, প্যাস্টেল, তেমনই উজ্জ্বল রঙের একটি টুকরো আনে এক দারুণ বৈপরীত্য। এ সময় রঙের ক্ষেত্রে একটু সাহসী হওয়া যায়। ধূসর বা সাদা পোশাকের সঙ্গে উজ্জ্বল স্কার্ফ বা বেল্ট পুরো লুক করে তোলে আকর্ষণীয়।
শীতের আমেজ, স্নিগ্ধতার ছোঁয়া
হেমন্তের হালকা শীত মেয়েদের পোশাক আর স্টাইলে যে বৈচিত্র্য
নিয়ে আসে, তা প্রকৃতির স্নিগ্ধতার সঙ্গে মিশে যায়। পোশাকে আরাম, সৌন্দর্য
আর পরিবেশের সঙ্গে মানানসই উপকরণ বেছে নিয়ে এ ঋতুর প্রতিটি দিন আরও রঙিন করে তোলা
সম্ভব। হালকা শীতে ফ্যাশন আরামদায়ক
হওয়া যেমন জরুরি,
তেমন তা হওয়া উচিত ঋতুর সঙ্গে মানানসই। সহজ কিন্তু আকর্ষণীয়
ফ্যাশন বেছে নেওয়ার মাধ্যমে এ ঋতু উপভোগ করা যায় পুরোপুরি। সঠিক পোশাকের সঙ্গে
দিনগুলো হয়ে উঠুক আরও আনন্দময়, আরও রঙিন।