× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পাহাড় চূড়ার আলো

গোলাম কিবরিয়া

প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৪ ১২:৪৬ পিএম

আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:৫৫ পিএম

ঋতুপর্ণা চাকমা

ঋতুপর্ণা চাকমা

নেপালের দশরথ স্টেডিয়ামে ইতিহাস রচনা করে দ্বিতীয়বারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের পর থেকেই রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের দুর্গম মঘাছড়ি গ্রামে বইছে খুশির জোয়ার। কারণটা এখন আর কারও অজানা নেই, মঘাছড়ি গ্রামের মেয়ে ঋতুপর্ণা চাকমার দেওয়া গোলেই যে শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। লিখেছেন গোলাম কিবরিয়া

মেয়েদের বঙ্গমাতা আন্তঃপ্রাথমিক ফুটবল দিয়ে তার খেলার জগতে আসা। ২০১২ সালে টুর্নামেন্টের প্রথম আসরে খেলেন। ২০১৪ সালে সর্বশেষ খেলেছেন প্রাথমিকে। ২০১৬ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়া। একই সঙ্গে বাফুফের ছায়াতলে আসেন সে সময়। আট-নয় বছরের মধ্যেই মেয়েটি দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ফুটবলারে পরিণত হয়েছেন। বলছি ইতিহাস গড়া সাফজয়ী ঋতুপর্ণা চাকমার কথা। মাঠে বেশ ক্ষিপ্র। তার পায়ের কারুকাজে বারবার পরাস্ত হয়েছে নেপাল, ভারত, ভুটান, পাকিস্তানের ডিফেন্ডাররা। এবারের সাফে ঋতুপর্ণার গোল ২টি। কিন্তু গোল দিয়ে তাকে চেনা যাবে না। ঋতুপর্ণাকে চিনতে হলে দেখতে হবে তার গতি আর স্কিলের ঝলক। তবে ঋতুপর্ণা যে মাঠে ঝলক দেখান বাবা-ভাই হারানোর দুঃখ নিয়ে, তা থেকে যায় আড়ালেই।

ঋতুপর্ণার মনটা বিষণ্ন হয়ে ওঠে যখন তার প্রয়াত বাবার প্রসঙ্গ আসে। মেয়ের ফুটবলার হওয়া বা তার সাফল্য বাবা দেখে যেতে পারেননি। ঋতুপর্ণা বলে যান, ‘বাবা থাকলে আমার থেকেও অনেক খুশি হতেন। ছেলেমেয়েদের নিয়ে অন্য বাবারা যেমন গর্বিত হয়, তিনিও হতেন।’ পঞ্চম শ্রেণিতে পিইসি পরীক্ষা দিয়ে ফলাফলের অপেক্ষা করছিলেন। ফল বেরোনোর কয়েক দিন পরই তার বাবা বরজ বাঁশি চাকমা ক্যানসারে মারা যান ২০১৫ সালে। ঋতুপর্ণার বয়স তখন মাত্র ১১ বছর। ঋতুপর্ণা বলেন, ‘আমি দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ফুটবলার হয়েছি। দেশের জন্য সম্মান অর্জন করে এনেছি। আমার বাবা থাকলে প্রাউড ফিল করতেন। সবার ভিড়ে বাবার কথা মনে পড়ে। বাবার মুখটা খুঁজি। উনি ফুটবলপ্রেমী ছিলেন। এটা আমার আফসোস।’

তার একমাত্র ভাই পার্বণ চাকমা ২০২২ সালের জুনে মারা যান বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে। ভাইয়ের কথা এলে ঋতুপর্ণার কণ্ঠটা আরও ধরে আসে। দুঃখ নিয়ে বলেন, ‘ভাই অনেক ভালো ছিলেন। অনেক ভালোবাসতেন আমাকে।’ সাফের আগের টুর্নামেন্টও ভাই দেখে যেতে পারেননি। চার বোনের মধ্যে বড় তিনজনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। ঋতুপর্ণা নিজেই বলেন, ‘আমি আসলে এখন একা।’ গত বছর খেলোয়াড় কোটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনে ভর্তি হয়েছেন। তবে বাবা-ভাই হারানোর শোক বুকে নিয়ে ঋতুপর্ণা ফুটবলকেই সঙ্গী করে নিয়েছেন সার্বক্ষণিক।

মায়ের সঙ্গে ঋতুপর্ণা

রাঙামাটির দুর্গম মঘাছড়ি গ্রামের সবার মুখে এখন ঋতুপর্ণার কথা। চা-দোকানের আড্ডা, জুমক্ষেত, বাড়ির আঙিনাÑ সর্বত্র কান পাতলেই ঋতুপর্ণার নাম শোনা যাচ্ছে। সাফের সেরা খেলোয়াড় হওয়ায় ঋতুপর্ণার মা বসুবতি চাকমাও আনন্দে আত্মহারা। ঋতুপর্ণার বাড়ি যাওয়ার জন্য নেই রাস্তা। ধানক্ষেত দিয়ে ঘণ্টাখানেক হেঁটে যেতে হয় তাদের বাড়ি। নারী ফুটবল সাফজয়ী হওয়ায় ঋতুপর্ণার বাড়িতে বিরাজ করছে আনন্দঘন পরিবেশ। তার মা ভূজিপতি চাকমা বলেন, ‘আমি আমার মেয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই, যাতে সে আরও ভালো খেলতে পারে। দেশে সুনাম, এলাকার সুনাম আনতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গতবার যখন আমার মেয়েরা জিতেছিল তখন নতুন ঘর, রাস্তা করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও কিছুই দেয়নি। আমার ঝড়বৃষ্টি হলে ভয় লাগে, এই যেন ঘরটা বাতাসে উড়ে যায়। এবার যদি অন্তত আমাদের ঘর ও বাড়িতে আসার রাস্তাটি সরকার করে দেয়, তাহলে অনেক উপকার হবে।’

ঋতুপর্ণা বলেন, ‘এর আগেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে আমাদের বাড়ি যাওয়ার রাস্তা ও ঘর করে দেওয়া হবে। তবে এ আশ্বাস শুধু আশ্বাসই রয়ে গেছে!’ ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্রা দেওয়ান। তার সাবেক ও বর্তমান তিন ছাত্রী বাংলাদেশের জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাদের এ অসামান্য অর্জনে যারপরনাই খুশি চন্দ্রা। তিনি বলেন, ‘রূপনা এখনও আমার স্কুলের ছাত্রী, ঋতুপর্ণাও এখানে পড়ত, সে এখন বিকেএসপিতে পড়ছে। আর মনিকা চাকমাও এ স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছে। আমার ছাত্রীদের অর্জনে আমি গর্বিত। একজন মায়ের যেমন তার সন্তানদের অর্জনে আনন্দে বুক ভরে যায়, আমারও একই অনুভূতি হচ্ছে।’

সাফের স্মৃতিচারণা করে ঋতুপর্ণা বলেন, ‘ফাইনালে গোলের পর যেভাবে উদ্‌যাপন করেছিলাম তা আমার পূর্বপরিকল্পিত ছিল। ঠিক করেছিলাম ফাইনালে গোল করতে পারলে এ উদ্‌যাপনটা করব। মাঠে অনেক দর্শক ছিল, সবাই আমাদের বিপক্ষে ছিল। গোটা স্টেডিয়ামকে চুপ করানোর জন্য ওই উদ্‌যাপনটা করেছি।’

ঋতুপর্ণা বলেন, ‘এবারের টুর্নামেন্ট অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল। ভারত-নেপাল অনেক শক্তিশালী দল। ওদের সঙ্গে জেতা সহজ ছিল না। আমরা সত্যিই অনেক কষ্ট করেছি। এ সাফল্য আমাদের সবার কঠোর পরিশ্রমের ফল। আমরা দিনের পর দিন খুব ভোরে অনুশীলন করেছি। তিন মাস কোনো ম্যাচও খেলতে পারিনি, শুধু অনুশীলন করেই চ্যাম্পিয়ন হওয়া তো কম বড় ব্যাপার নয়। দেশবাসীর ভালোবাসা, দোয়া আমাদের সঙ্গে ছিল বলেই পেরেছি আমরা।’

সম্প্রতি নতুন এক খবরে শিরোনাম সাফজয়ী এ খেলোয়াড়। ইউরোপীয় ক্লাব ব্রেরা তিভেরিজার কাছ থেকে ক্লাবে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব পেয়েছেন তিনি। এ ক্লাবটি বর্তমানে উত্তর ম্যাসিডোনিয়ান নারীদের লিগের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। দেশের খেলাধুলায় নারীদের অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। সাফের এ সেরা খেলোয়াড় বলেন, ‘ফেডারেশনের কাছে চাওয়া নারীদের ফুটবল খেলতে কোনো প্রতিবন্ধকতা যেন না থাকে। আমরা চাই আমাদের চাওয়াগুলোয় নজর দেওয়া হোক। আমরা চাই নারী লিগ রেগুলার হোক। আরও ভালোভাবে হোক। পরিচর্যা করতে হবে। আরও বেশি বেশি ম্যাচ খেলতে চাই। বেতনটা নিয়মিত চাই। মোহামেডান-আবাহনী যেন নারী লিগে খেলে। এটা যদি তারা করেন তাহলে নারী ফুটবল আরও এগিয়ে যাবে।’


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা