মহাকাশে উদ্ভিদ গবেষণা
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৪ ১১:১৩ এএম
মোহাম্মদ তারিকুজ্জামান
নাসায় সাফল্যের ঝলক দেখিয়েছেন নেত্রকোণার সন্তান, লুইজিয়ানা টেক ইউনিভার্সিটির পিএইচডি শিক্ষার্থী মোহাম্মদ তারিকুজ্জামান। তিনি ‘লা টেক বায়োমাস’ প্রকল্পের চার সদস্যের একজন, যেখানে তারা মহাকাশে গাছের বেড়ে ওঠার উপায় আবিষ্কার করছেন! এ উদ্ভাবনী প্রকল্পে মানববর্জ্য পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে
পানি ও সার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যাতে মাটি ছাড়াই গাছের বৃদ্ধি নিশ্চিত করা যায় চাঁদ ও মহাকাশে টেকসই কৃষির জন্য!
নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার সান্দিকোনা ইউনিয়নের একটি গ্রামে জন্ম নেওয়া মোহাম্মদ তারিকুজ্জামান লুইজিয়ানা টেক ইউনিভার্সিটির কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্সের পিএইচডির ছাত্র। তার বাবা মরহুম মমতাজ উদ্দিন এবং মা মালেকা খাতুন।
তারিকুজ্জামান নাসার গবেষণা দলে তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে বলেন, ‘নাসার লা টেক বায়োমাস দল মহাকাশে গাছপালা বৃদ্ধির অনন্য উপায় নিয়ে গবেষণা করছে। আমরা মাটির পরিবর্তে মানুষের মূত্র ব্যবহার করে মহাকাশে কৃষিকাজ করার সম্ভাবনা অন্বেষণ করছি। আমাদের দল উদ্ভাবনী প্রকল্প নিয়ে আবিষ্কারের
কথাও ভাবছে।’
তারিক ভবিষ্যতের জন্য তার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি এ ধরনের গবেষণা এবং আমার ভবিষ্যৎ প্রচেষ্টার জন্য সবার দোয়া কামনা করছি। এ সম্মান শুধু আমাদের পরিবারের জন্য নয়, দেশের জন্যও। একজন বিজ্ঞানী হিসেবে আমি বাংলাদেশের সুনাম ও সম্মান বৃদ্ধিতে বিশ্বব্যাপী গবেষণায় অবদান রাখার স্বপ্ন দেখি।’
তারিকুজ্জামান সান্দিকোনা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৭ সালে মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন।
তিনি ২০০৯ সালে এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটি কলেজে তার উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন এবং ২০১৪ সালে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করার পর মোহাম্মদ তারিকুজ্জামান ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ঢাকার Energypac-এ সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন। পরে তিনি বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।
ছোটবেলা থেকেই তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রতি তারিকুজ্জামানের প্রবল আগ্রহ ছিল। তিনি বর্তমানে লুইজিয়ানা টেক ইউনিভার্সিটিতে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (২০২১-২০২৩) এবং মাইক্রো ও ন্যানোস্কেল সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (২০২১-২০২৫) পিএইচডি করছেন। গবেষক দল জানায়, তাদের গবেষণায় কৃত্রিম প্রস্রাবে উদ্ভাবিত গাছপালাকে প্রচলিত পুষ্টির সঙ্গে তুলনা করা হয়। তারা সরাসরি ‘ঝিল্লি দ্রবীভূতকরণ’ নামে একটি পদ্ধতি ব্যবহার করছেন, যা প্রস্রাব বাষ্পে রূপান্তরিত ও ঘনীভূত করে, পরে তা সার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ উদ্ভাবনী কৌশলটি মহাকাশ মিশনের সময় মানুষের বেঁচে থাকা এবং স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার জন্য চিন্তা করা হচ্ছে। আগামী ছয় বছরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তারা।
লুইজিয়ানা টেক ইউনিভার্সিটির কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্সের এ বায়োমাস গবেষণা দলে রয়েছেন ড. জোয়ান লিনাম, ড. আমির ইকবাল ও পিএইচডি ছাত্র তারিকুজ্জামান। তারা মূলত মাটি ছাড়া ফসল ফলানোর জন্য নতুন পদ্ধতি অন্বেষণ করছেন।
এ পদ্ধতিটি মহাকাশ গবেষণা এবং পৃথিবীর বাইরে আবাস স্থাপনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ পরীক্ষার দীর্ঘমেয়াদি উদ্দেশ্য হলো নভোচারীদের চাঁদের পরিবেশে বেঁচে থাকতে সাহায্য করা উল্লেখ করে জোয়ান লিনাম বলেন, ‘সব ঠিকঠাক থাকলে এ কৌশলগুলো ছয় বছরের মধ্যে মহাকাশে স্থাপন করা যেতে পারে।’ তারিকুজ্জামান বলেন, ‘এটি সফল হলে বর্জ্য ব্যবহারযোগ্য এবং টেকসই পণ্যে পরিণত করা বিশ্বকে আরও সবুজ ও পরিচ্ছন্ন করে তুলবে।’ এটি অবিশ্বাস্যভাবে সুদূরপ্রসারী প্রভাবসহ একটি ফলপ্রসূ প্রকল্প হিসেবেও মনে করেন তিনি।