× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মিথের এক নদী : বিষখালী

সাইদুল ইসলাম মন্টু, বেতাগী (বরগুনা)

প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৫৫ পিএম

আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:০১ পিএম

নৌকা দিয়ে বিষখালী পাড়ি দিচ্ছেন  ছবি : লেখক

নৌকা দিয়ে বিষখালী পাড়ি দিচ্ছেন ছবি : লেখক

দেশের দক্ষিণ জনপদের অন্যতম নদী বিষখালী। ঝালকাঠি শহরের কাছে সুগন্ধা নদী থেকে এর উৎপত্তি। উৎপত্তিস্থল থেকে শুরু করে ঝালকাঠি শহরের কাছে নদীটি বাঁক নিয়ে সোজা দক্ষিণে সাগর অভিমুখে বয়ে গেছে। বিষখালী বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ১৩ কিলোমিটার ভাটিতে বলেশ্বর-হরিণঘাটা মোহনায় এসে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। বিষখালীর দুই পারের সবুজ গাছগাছালি আর পাখির ডাক এবং নদীর জলের কলকল ধ্বনি শুনে মন প্রশান্তিতে ভরে যায়। যে কারণে এ নদীতে দেখা মেলে ভ্রমণপিপাসুদের। নদীর বুকে মাঝিরা সুখে-দুঃখে গান গান। এ নদী যোগসূত্র স্থাপন করেছে এক এলাকার সঙ্গে অন্য এলাকার, গ্রামের সঙ্গে নগরের। প্রসার ঘটিয়েছে সভ্যতার, ব্যবসাবাণিজ্যের।

অনিন্দ্যসুন্দর এ নদীটির নামকরণে রয়েছে নানান দুঃখের কাহিনী। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় বিষখালীর উত্তাল ঢেউয়ে কাঁঠালিয়া উপজেলার আমুয়া খালের গোড়ার অংশে তুফানে প্রায়ই নৌকা ডুবত। ফলে এখান থেকে মাঝিরা পারাপারের ক্ষেত্রে অনাগ্রহ দেখাতেন। তার পরও নদী পারাপারে অনেকে মাঝিদের পীড়াপীড়ি করত। তাদের প্রচণ্ড চাপে এক মাঝি নৌকা পাড়ি না দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ নিয়ে এলাকায় প্রবাদ প্রচলিত রয়েছেÑ ‘বিষখাইলি তো পাড়ি দিলি না’। গল্পটা এখানেই শেষ নয়। কাঁঠালিয়া-বামনা উপজেলার মধ্যবর্তী চেচাঙ্গ নামক স্থানে থেকে আরও একটি গল্পের সূত্রপাত ঘটে। এ নামটির পেছনেও ইতিহাস রয়েছে। ১৭৯৯ সালের গোড়ার দিকে বামনায় তালুক ছিল। তাদেরই একজন ১৮০০ সালে বরিশালের দুপাশা গ্রামের মাহমুদ শফি চৌধুরী কিংবা শফিজ উদ্দিন চৌধুরী চায়নিজদের সহায়তায় লবণের ব্যবসা শুরু করেন। তিনি বামনা উপজেলার উত্তর প্রান্তে একটি ছোট লবণ কারখানা স্থাপন করেন। এ চায়নিজদের নামের অনুকরণে নামকরণ হয় চেচাং। বিষ খাওয়া লোকটিকে দেখতে শত শত মানুষ উপস্থিত হয়। সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে এ কাহিনী। সেই থেকেই ‘বিষখাইলি’ থেকে নাম হয় ‘বিষখালী’। তা ছাড়া বিষখালী নদী সুগন্ধারই অংশবিশেষ ছিল বলে এর পানি এত বেশি লবণাক্ত ছিল যে, মানুষ পানি মুখে নিতে পারত না। কথিত আছে, দরবেশ নেয়ামত শাহের বোন চিনিবিবি হঠাৎ একদিন নদীতে নেমে ওই পানি মুখে দিয়ে তিন ঢোক গিলে ফেলেন এবং বলেন, পানির বিষ খাইয়া ফালাইলাম। সেই থেকে নদীর পানি মিষ্টি হয়ে যায়। এবং নদীর নামকরণ হয় বিষখাই থেকে বিষ খালি, অর্থাৎ বিষশূন্য। বিষখালী নামকরণের ক্ষেত্রে মতভেদ রয়েছে। বরগুনার বামনার ভাটিতে বাকদুঘ, আয়লা নদীর মাধ্যমে বুড়ীশ্বর নদীব্যবস্থার সঙ্গে বিষখালীর সংযোগ ঘটেছে। নদীর তীরে উল্লেখযোগ্য জনপদগুলোর মধ্য ঝালকাঠি, বাদুড়তলা, নিয়ামতি, কাঁঠালিয়া, আমুয়া, বামনা, রামনা, ফুলঝুরি, কাকচিড়া, বরগুনা ও পাথরঘাটা। নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। উৎপত্তিস্থল থেকে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত এর গড় বিস্তার ১ কিলোমিটার, পরবর্তী ৬৬ কিমি এ নদীর গড় প্রস্থ প্রায় ২ কিমি। গড় গভীরতা প্রায় ১৬ মিটার। এমনটাই সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়। বিষখালী একটি ছোট্ট নাম, অথচ এর মধ্যে লুকিয়ে আছে কত গভীরতা; যা পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে মানুষের জীবনে। সুখদুখ, হাসিকান্নার এক অমর গাথা বুকে নিয়ে বিষখালীর নিরন্তর ছুটে চলা। বিষখালী সম্পূর্ণ জোয়ারভাটা দ্বারা প্রভাবিত। এর বিভিন্ন স্থানে চর, দ্বীপ। গঠনপ্রক্রিয়াও যথেষ্ট সক্রিয়। বিষখালীর সৌন্দর্যের কথা ব্যক্ত করেছেন অনেক সাহিত্যিকই। দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষখালী নদীর এ পথে একসময় বরগুনা, ঝালকাঠি ও বরিশাল রুটে স্টিমার ও লঞ্চ চলাচল করত। বর্তমানে বরগুনা-ঢাকা রুটে মানুষ আনন্দ ভ্রমণ হিসেবে যাতায়াত করছে। এ নদীর পলিমাটিতে কৃষকের ঘরে ওঠে ধান, জেলেরা ধরেন ইলিশসহ অন্যান্য মাছ। বিষখালীর ইলিশের সুখ্যাতি দেশজোড়া। স্বাদেও অতুলনীয়। বাজারে এ ইলিশের চাহিদা বেশি, দামও অন্য নদী ও সাগরের ইলিশের তুলনায় একটু বেশি।

ভাঙনপ্রবণ এ নদীটি রাগী মেয়ের মতো ফুঁসে ওঠে। বিষখালীর ভাঙনে মাঝে মাঝে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তীরবর্তী জনপদ। এ ছাড়া বিষখালীর বুক চিড়ে অসদুপায়ীরা গড়ে তুলছে রমরমা বালুর ব্যবসা। নানান বর্জ্যে নষ্ট হচ্ছে এর পরিবেশ। বন্যা ও লবণাক্ততা রোধে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৈরি বেড়িবাঁধ কোথাও কোথাও বিলীন হয়ে গেছে। বিষখালী আগের মতো আর প্রবাহিত হয় না। দিনে দিনে প্রবাহের মাত্রা হ্রাস পেয়ে শুষ্ক মৌসুমে আরও প্রকট আকার ধারণ করে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা