× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গুন্ডা গাছ

হিমাদ্রি হাবীব

প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ১২:২৩ পিএম

আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ১২:২৯ পিএম

গুন্ডা গাছ

‘তুই তো একটা বিদেশি! পুরোপুরিই অস্ট্রেলিয়ান! চুপ ব্যাটা ইউক্যালিপটাস কোথাকার!’ বটগাছের এমন তেঁতুল মার্কা কথায় খ্যাপল ইউক্যালিপটাস গাছ! আত্মসম্মানে লেগেছে। খুব রাগান্বিত ইউক্যালিপটাস। বনের নামটি যদিও আমার মনে নেই; তবে ঘটনা গুরুতর। তিন দিকে পাহাড়ঘেরা শান্ত পরিবেশ; দেখতে বেশ ভদ্র জঙ্গল! বাকি যে দিকটায় সমুদ্র, ঢেউয়ের চেঁচামেচিতে অস্থিরতা সেখানে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যাই হোক, জঙ্গলটা ভয়ংকর সুন্দর! কিন্তু এ ভদ্র জঙ্গলে গাছেরা শান্তিতে নেই। গাছের গুঁড়িতে স্বস্তি নেই, মনে শান্তি নেই, পাতায় সুখ নেই, শিকড়ে রস নেই! শান্তিরক্ষার জন্য বনের গহিনে বসল গাছের গুপ্ত মিটিং। মিটিং ঠিক বলা যায় না; বড়সড় বিচারসভা! বিটল পোকা এখানকার বিচারক; নিরপেক্ষ শাসকও বটে! ‘কে এই বনে অপরাধী? কোন গাছ অন্য গাছকে শান্তিতে থাকতে দেয় না? ধরে আনো তাকে!’Ñ তার সমস্ত পাতা খেয়ে শেষ করার শপথ নিল বিটল পোকা। থমথমে অবস্থা। গাছের এক পক্ষে উপস্থিত রেইনট্রি শাখা; এরা বিদেশি। ইউক্যালিপটাস এ শাখার প্রধান। অন্য পক্ষে আছে স্থানীয় গাছ; বটগাছই এ পক্ষের হর্তাকর্তা।

বনের গণ্যমান্য গাছ উপস্থিত। রীতিমতো এক বিচারসভা! সুন্দর! জুতসই আবহাওয়া! ইউক্যালিপটাস তার ডালে ঝাঁকুনি দিল, পাতায় সুড়সুড়ি দিল, গলা বাড়িয়ে বলল, ‘মহামান্য বিচারপতি, আমি অভিজাত! বিদেশ থেকে নিয়ে আসা হয়েছে আমাকে! আমার শরীরের তরল পদার্থে আছে অ্যান্টিসেপটিক। পাতার টকসিন থেকে তৈরি হয় মশা ও কীটপতঙ্গ নাশক! তৈরি হয় সর্দিকাশির ওষুধ! আমার ফুলে মধু আছে; অন্তরে কাঠ আছে! বয়স হিসেবে বাড়াবাড়ি দ্রুত। এমন একটি আধুনিক গাছকে ওই বুড়ো বটগাছ কি না অপমান করতে চায়! নির্বংশ করতে চায়! কোন সাহসে? আপনি বিচার করুন। নইলে বটের কপালে ভয়ানক দুঃখ!’ ইউক্যালিপটাস খুব চটেছে বটের বিরুদ্ধে। শুধু মেরে বসেনি এটাই সৌভাগ্য!

নিরপেক্ষ আকাশমণি, বাবলা গাছ সেখানে উপস্থিত। বিবেকের তাড়নায় এরা বাহবা দিয়ে উঠল ইউক্যালিপটাসের কথায়! ধন্য ধন্য রব উঠল। ‘এত গুণী একটা ইউক্যালিপটাসকে নির্বংশ করতে চায় বটগাছ! কত নিষ্ঠুর! তাই তো বলি, বটের গায়ে কেন এত জটা! ভূতপেতনি বটগাছে থাকে আর সাধে!’ কানাঘুষা করতে করতে বিরাট দল জুটে গেল ইউক্যালিপটাসের পক্ষে।

বিচারক বিটল পোকা বুদ্ধিমান। মুচকি হাসল অভিযোগ শুনে। মাথা চুলকাল। পড়াশোনা জানে যেহেতু বিটল পোকা; সে বোঝে ইউক্যালিপটাস নিজেই একটা শয়তান গাছ! সবার সামনে এখন সাধু! মূলত দেখতে গাছ হলেও সব গাছ গাছ নয়! অগাছ! গুন্ডা গাছও রয়েছে! এতসব ভেবেও চুপ থাকতে হলো বিটল পোকাকে। উভয় পক্ষের অভিযোগ শোনার আগে চুপ থাকা বিচারকের কাজ!

অবস্থা ঘোলাটে। নিরপেক্ষ কিছু গাছ জুটেছে বটগাছের পক্ষেও। এদের অনেকেই বিদেশি; কিন্তু চিন্তা-চেতনায় এক, স্বভাবে অভিন্ন। তেঁতুল, নিম, কৃষ্ণচূড়া, কদম! আরও কত! তারা দৃঢ়ভাবে বুড়ো বটের পক্ষে। সাহস বেড়ে গেল বটগাছের। সবার সামনে জটা নাড়িয়ে বট বলল, ‘মহামান্য বিচারক, আমি বটগাছ! বুড়ো হতে পারি; কিন্তু কথা আমার দীর্ঘ! এ বনের অস্তিত্বের শুরু থেকেই এখানে আছি। এখানকার ঐতিহ্য আমি। বনের সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছি বহুকাল। কিন্তু বিদেশি গাছের অতিরিক্ত বাড়াবাড়িতে আজ আমি কোণঠাসা! এর পেছনে বড় কারণের একটি ওই গণশত্রু ইউক্যালিপটাস! নিজের চারপাশে ১০ ফুট দূর পর্যন্ত মাটির রস সে শুষে নেয়! ৫০ ফুট পর্যন্ত জল শোষণ করে মাটির গভীরে! অক্সিজেন ছাড়ার নাম নেই যার; চব্বিশটা ঘণ্টা এ রসকে জলীয় বাষ্প করা তার কাজ! আরও শুনুন মহামান্য, ইউক্যালিপটাস আয়রন ভেঙে জমিকে বানাচ্ছে অনুর্বর! মৌসুমি আবহাওয়া উত্তপ্ত করছে! পাতার বিষাক্ত টকসিন ছড়িয়ে বিনাশ করছে অন্য গাছের জীবন! এটা কি সন্ত্রাসকাণ্ড নয়? দেশি গাছের অস্তিত্ব আজ সংকটে! আমাদের ঐতিহ্য বিলুপ্তির পথে! অস্ট্রেলিয়ার বনে ঘন ঘন আগুন লাগানোর পেছনে সে দায়ী! এখন বিচার করুন আপনি! আমরা বিলুপ্ত হব, নাকি এ গুন্ডা গাছকে বন থেকে বের করা হবে? আপনার সিদ্ধান্ত শিরোধার্য।’

শ্রোতারা চুপচাপ। কেউ হাই তুলছে! কেউ হাঁ করছে! মাথায় হাত কারও! সবুজ এ পরিবেশে হঠাৎ উশখুশ করতে লাগল আকাশমণি! ইউক্যালিপটাসেরও চোখ দুটো লাল! অভিযোগ সত্য।

বিটল পোকা কী রায় দেবে আজ! মাথা চুলকাল তার! ভাবতে লাগল খুব। বাড়ন্ত ইউক্যালিপটাসের বিরুদ্ধে কখনও রায় দেওয়া সম্ভব না! ইউক্যালিপটাস নিজেই একটা কীটনাশক! তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে পটোল তুলতে হবে স্বয়ং বিটল পোকাকে! কিন্তু রায় তো একটা দিতেই হয়। কার বিরুদ্ধে রায় দেওয়া যায়! ভাবতে ভাবতে মাথা চুলকাতে থাকল বিটল পোকা!

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা