শিবসা নদী
ফসিয়ার রহমান, পাইকগাছা (খুলনা)
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৪ ১২:২৭ পিএম
কর্তৃপক্ষের নীরবতায় ভরাট হয়ে যাওয়া শিবসা নদীর বিশাল অংশ দখল করে নিয়েছে ভূমিদস্যুরা
খুলনার পাইকগাছার ভরাট হওয়া শিবসা নদী খননের কাজ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের মধ্যে ১৫-২০ বছর যাবৎ সীমাবদ্ধ রয়েছে। কর্তৃপক্ষের নীরবতার কারণে নদী ভরাটের বিশাল অংশ দখল করে নিয়েছে ভূমিদস্যুরা।
উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একসময়ের খরস্রোতা শিবসা নদী। যার এ কূল থেকে ও কূল দেখা যেত কুয়াশায় মতো। এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়নে যেতে হলে নদী পারাপারের কোনো বিকল্প ছিল না। এজন্য ছিল খেয়াঘাট ও লঞ্চঘাট। ঘাটে থাকত সারি সারি নৌকা। থাকত খেয়ার নৌকা, জলদি নৌকা। প্রচণ্ড ভিড়ে ঠেলাঠেলি করে নৌকায় চড়তে হতো সে সময়। এমনকি পালতোলা নৌকাও চলত এ নদীতে। এ ছাড়া দিনরাত চলত লঞ্চ, স্টিমারসহ বিভিন্ন নৌযান। কয়রা, পাইকগাছা ও বড়দল এলাকার লোকজন এ নদীপথেই খুলনা ও মোংলা বন্দরে যাতায়াত করত। এখন সবকিছু শুধুই স্মৃতি। রূপকথার গল্পের মতো। বর্তমানে মানুষ হেঁটে নদী পার হচ্ছে। বিশাল অংশ চলে গেছে অবৈধ দখলদারদের কবলে। পরিণত হয়েছে গোচারণভূমিতে।
একসময়ের খরস্রোতা শিবসা নদী বর্তমানে মানুষ হেঁটে পার হচ্ছে। বিশাল অংশ চলে গেছে অবৈধ দখলদারদের কবলে। পরিণত হয়েছে গোচারণভূমিতে
এদিকে পৌরসভার শহররক্ষা বাঁধের নামে নদীর মাঝখান দিয়ে রাস্তা তৈরি করে অনেকেই শত শত বিঘা দখল করে নিয়ে চিংড়ি চাষ করছে। তৈরি করেছে বাড়িঘর ও স্থাপনা। শিববাটী ব্রিজ থেকে হাড়িয়া পর্যন্ত শিবসা নদীর ১৫ কিলোমিটারের সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে যাওয়ায় সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে অনেক লেখালেখি, আন্দোলন-সংগ্রামও হয়েছে। বিভিন্ন সময় সংসদ সদস্যরা আশ্বাস দিয়েছেনÑ ‘এইতো টাকা বরাদ্দ হয়েছে, খুব শিগগিরই খনন শুরু হবে।’ এই শুনতে শুনতে ১৫ থেকে ২০ বছর চলে গেছে। সবকিছুই তাদের আশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে গেছে।
নৌকার মাঝি হাজু দাশ বলেন, ‘বাবার হাত ধরে নৌকার মাঝি হয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। মানুষ পার করে সংসার চলত। এখন নদী নেই সে কারণে আমাদের পেশা বদল করতে হয়েছে। রোজগার কমেছে।’
শামসুর মাঝি বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর থেকে খুলনা থেকে পাইকগাছা বাজারের ব্যবসায়ীদের মালামাল আনা-নেওয়া করছি। এখন নদী ভরাট হওয়ার কারণে অন্তত ২০ কিলোমিটার বেশি ঘুরে মালামাল শিববাটী ব্রিজের নিচে নামাতে হয়। ফলে মালামাল পরিবহনে খরচ বাড়ছে। নদী খনন হলে পাইকগাছার ব্যবসাবাণিজ্য বাড়বে।’
পাইকগাছার সিনিয়র সাংবাদিক জি এম মিজানুর রহমান বলেন, ‘শিবসা নদীটি এ অঞ্চলের মানুষের এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভূমিদস্যুরা চর ভরাটী জমি দখল করে নিচ্ছে। অচিরেই নদীটি খনন করা প্রয়োজন।’
পাইকগাছা নাগরিক কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমরা শিবসা নদী খননের জন্য ১৫ বছর ধরে আন্দোলন করছি। বিগত সব সংসদ সদস্য খননের আশ্বাস দিয়ে পাইকগাছাবাসীকে আশাহত করেছেন। অচিরেই খনন করতে না পারলে শিবসা নদী মানচিত্র থেকে মুছে যাবে। পৌরবাসী বন্যায় আক্রান্ত হবে।’
উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী রাজু আহম্মেদ জানান, নদী খনন না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যা সমাধানের কোনো উপায় নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারকে বারবার অবহিত করা হয়েছে।
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন বলেন, ‘আমি নিজেও দেখেছি শিবসা নদী পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। খনন করা জরুরি। শিবসা খননের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’