× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্লেটোর দর্শনে সাইবার হ্যাকাথন জয়

এস এম ইমদাদুল হক

প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:২৪ পিএম

চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ফেদারলেস বাইপেডস।

চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ফেদারলেস বাইপেডস।

দেশে প্রথমবারের মতো ‘ডায়নামিক’ প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত হলো ‘সাইবার হ্যাকাথন প্রতিযোগিতা’। সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিক্যাফ) আয়োজনে এ প্রতিযোগিতায় ৯৯ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একটি করে দলে মোট ২৬৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন।

অনলাইন এ হ্যাকাথনে ঢাকার বাইরে থেকে অংশ নিয়েছে ৫৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর ঢাকা থেকে অংশ নিয়েছে ৪১টি। এর মধ্যে ৫১টি বেসরকারি এবং ৪৮টি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া ৮৪ বিশ্ববিদ্যালয়, ৬ কলেজ, ৫ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও ৪টি স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় এ হ্যাকাথনে। মোট প্রতিযোগীর ৩৭ জন ছিলেন নারী। সাইবার সুরক্ষায় নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণে চারটি ধাপে প্রতিযোগীদের সামনে সাতটি টপিকের ওপর ভিত্তি করে ছিল ২৪টি চ্যালেঞ্জ। ধাপগুলোর মধ্যে আয়নাঘর, মিডল অব দ্য ওয়ার্ল্ড, প্যাটার্ন আনলক ও ব্যাংক হাইজ্যাক মিশন।

প্রথম মিশনেই আয়নাঘরে সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক ধাঁধার মুখোমুখি হতে হয়। যেখানে একটি ইমেজের আড়াল থেকে ইমেজের ডেটা বিশ্লেষণ করে খুঁজে বের করতে হয় সাইবার হ্যাকাথনের ফ্ল্যাগ। এরপর পাবলিক ডেটাবেস ব্যবহার করে চ্যালেঞ্জ সমাধান, ডেটা আর্টিফ্যাক্ট বিশ্লেষণ করে লুকানো তথ্য উন্মোচন; বাইনারি বিশ্লেষণ, ডিবাগিং, ডিকম্পাইলিং অ্যাপ্লিকেশন তথা রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং পন এক্সপ্লোরেশনে বাফার ওভারফ্লো; ফরম্যাট স্ট্রিং দুর্বলতা খুঁজে বের করা; এনক্রিপশন, ডিক্রিপশন বা ক্রিপ্টোগ্রাফিক অ্যালগরিদম (যেমন RSA, AES) বের করা এবং একটি ছবি বা ফাইলের মেটাডেটা থেকে লুকানো বার্তা উদ্ধার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় প্রতিযোগীদের। হ্যাকাথনের মোট পয়েন্ট ছিল ৩০০০।

৬ ঘণ্টার মধ্যে এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দল ফেদারলেস বাইপেডস। বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী তাসনিম কবির সাদিকের নেতৃত্বে এ দলের সাইবার যোদ্ধারা হলেন একই শ্রেণির আবরার ফাইয়াজ ও মমিনুল ইসলাম হিমেল। যুদ্ধে সমরজ্ঞানের পাশাপাশি রণকৌশলে নিগূঢ় দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি যে হ্যাক করার ক্ষেত্রে কতটা ‘মারাত্মক’, বিজয় কেতন উড়িয়ে সে বার্তাররই প্রমাণ দিয়েছেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাবিয়ানরা। চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্যদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ও চৌকশ মেধার পরিচয় রয়েছে তাদের ফেদারলেস বাইপেডস তথা গ্রিসের দার্শনিক সম্রাট প্লেটোর ‘মানুষ পালকহীন দ্বিপদ প্রাণী’ দর্শন এবং তার সমালোচক ডায়োজিনিস এবং ‘প্লেটোর মুরগি’ তত্ত্বের মধ্যে। যে তত্ত্ব প্লেটোকে ‘প্রাঙ্ক স্টার’ তকমা দিয়েছিল, সে দর্শনটা প্রতিযোগিতায় কতটা কাজে লেগেছেÑ এ প্রশ্নের জবাবে দলনেতা তাসনিম কবির সাদিক বললেন, ‘আমাদের কাছে প্লেটোর দর্শন সাইবারের প্রচলিত রূপকে ধারণ করে।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ধারণাগুলো পুরোনো হয়ে যাচ্ছে।। আমরা এ পরিবর্তনে সহায়তা করার জন্য আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে চাই। এজন্য আমরা ডায়োজিনিসের আদর্শ উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ডায়োজিনিস যেমন প্লেটোর “মানুষ পালকবিহীন দ্বিপদ” তত্ত্ব চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, তেমন আমরা সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে চাই। সাইবার নিরাপত্তাকে প্রচলিত কোনো সংজ্ঞা দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা যাবে না, এটি পরিবর্তনশীল। তাই আমরা প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে সাধারণ মানুষকে সাইবার নিরাপত্তার ব্যাপারে সচেতন করতে চাই।’

প্রতিযোগিতার চ্যালেঞ্জ বিষয়ে দলনেতা জানালেন, প্রতিযোগিতার সময় তারা কোনো ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হননি। যদিও চ্যালেঞ্জগুলো অভিনব ও সুপরিকল্পিত ছিল, তার পরও পন, রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং, ওয়েব, ফরেনসিক, ক্রিপ্টো, ওসিন্ট এবং বিবিধ চ্যালেঞ্জ বেঁধে দেওয়া সময়ের আগেই জয় করতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ‘শুরুতেই আয়নাঘর চ্যালেঞ্জটা ছিল বেশ রোমাঞ্চকর। যেকোনো সিটিএফ চ্যালেঞ্জ পেলেই আমরা চেষ্টা করি চ্যালেঞ্জটি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে। আয়নাঘরের চ্যালেঞ্জ ডেসক্রিপশন এবং পড়ার পরে আমরা আঁচ করতে পেরেছিলাম যে এটি একটি রেসট্রিকটেড এনভায়রনমেন্ট অথবা স্যান্ডবক্স দেবে, যেটি আমাদের এস্কেপ করতে হবে। চ্যালেঞ্জ কনটেইনারে কানেক্ট করার পর দেখি এটি একটি রেসট্রিকটেড লিনাক্স শেল কিন্তু ইকো কমান্ডটি অ্যালাউড। আমরা জানতাম ইকো দিয়ে কমান্ড এক্সিকিউশন সম্ভব এবং এভাবেই আমরা ফ্ল্যাগটি পেতে সক্ষম হই। প্রথম থেকেই দৃঢ়তার সঙ্গে চ্যালেঞ্জকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে ফ্ল্যাগ হান্ট করে সর্বোচ্চ ১৫৮৩ পয়েন্ট ঝুলিতে পুরেছে ডিইউ ফেদারলেস বাইপডস।’

চ্যাম্পিয়নদের থেকে ১৮০ পয়েন্ট পেছনে থেকে প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার্সআপ হয়েছে সাইবার নাইটস (C7b3r K9!ghts)। এ দলের সদস্যরা হলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ইউসুফ আবদুল্লাহ ফাহিম, ফারহানা মাহবুবা মার্জিয়া ও সুলতানা জ্যোতি। প্রতিযোগিতায় ১১৫৩ পয়েন্ট পেয়ে সেকেন্ড রানার্সআপ হয়েছে ব্লাইন্ড ভাইরাস। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সামিউল কোরেশী সৌরভ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের উসমানুর রহমান বিপ্লব এবং মো. মমরুল হাসানÑ ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ৭৬তম ব্যাচের এ শিক্ষার্থীরা গড়ে তুলেছেন এ দল।

আয়োজন নিয়ে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের স্কিল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ উইংয়ের মোহাম্মদ আবদুল মুনয়েম বললেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত ডায়নামিক প্ল্যাটফর্মভিত্তিক ক্যাপচার দ্য ফ্ল্যাগ (CTF) হ্যাকাথনটি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সাইবার সুরক্ষা ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে দক্ষতার স্বাক্ষর বহন করে। হ্যাকাথনে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন বাস্তবসম্মত সাইবার সিকিউরিটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, যা তাদের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। বাংলাদেশে এ প্রথম ডায়নামিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে এ সিটিএফ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্ল্যাটফর্মটিতে ক্রমাগত পরিবর্তনশীল পরিবেশে সাইবার সিকিউরিটি সমস্যার সমাধান করতে হয়েছে অংশগ্রহণকারীদের। কেননা এ প্ল্যাটফর্মে প্রতিযোগিতা চ্যালেঞ্জগুলো স্থির থাকে না, বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। আমরা প্রত্যাশা করি, এ ধরনের আয়োজন আমাদের জেন-জিদের ইথিক্যাল হ্যাকিংয়ে আরও দক্ষ করে তুলবে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা